শুধু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন। পশ্চিমবঙ্গে ‘জেড প্লাস’ গোত্রের নিরাপত্তা প্রাপকের তালিকায় এ বার ঢুকে পড়লেন তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতা— সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কলকাতার মেয়র তথা দমকল ও আবাসনমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। ওঁরা যথাক্রমে ‘জেড’ ও ‘ওয়াই’ ক্যাটেগরিতে ছিলেন।
দিন তিনেক আগে রাজ্য সরকারের সিকিওরিটি রিভিউ কমিটি এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জেড প্লাসের সুবাদে শোভন ও অভিষেক কোনও অনুষ্ঠানে যাওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা আগে সেখানে অতিরিক্ত সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলা হবে। তাঁদের প্রতিটি যাত্রাপথে পুলিশ মোতায়েন হবে। অনুষ্ঠানস্থলে তৈরি রাখতে হবে বম্ব স্কোয়াড ও দমকলকে।
দুই নেতার সঙ্গে গাড়ি ও রক্ষীর বহর কেমন হবে, তা-ও জানা গিয়েছে। নবান্নের খবর, এ বার শোভন-অভিষেকের সঙ্গে পাইলট-সহ মোট চারটি গাড়ি ও এনএসজি’র তালিমপ্রাপ্ত অন্তত কুড়ি জন কম্যান্ডো থাকবেন। রক্ষীদের হাতে থাকবে অত্যাধুনিক এমপি ফাইভ সাবমেশিন গান, কোমরে গ্লক পিস্তল। দুই নেতা অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হওয়ার আগে সেখানে পুলিশ কুকুর নিয়ে তল্লাশি চালাবে অ্যান্টি সাবোতাজ গ্রুপ। স্থানীয় পুলিশকে যাত্রার রুট আগাম জানানো হবে।
অর্থাৎ, ঠিক যেমনটি মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। হঠাৎ শোভন-অভিষেকের জন্য এই আয়োজন?
নবান্ন সূত্রের ব্যাখ্যা— ক’দিন আগে মাদুরদহে কলকাতা পুরসভার একটা বড় জমি থেকে দখলদার উচ্ছেদ করতে গিয়ে মেয়র বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। পুরসভা জমিটিতে পাঁচিল তুলে দেয়। আর তার পরে মেয়র বেশ ক’টা হুমকি ফোন পান। ‘‘তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা এর নেপথ্যে জমি-মাফিয়াদের হাত দেখেছেন। মন্ত্রী তথা মেয়রের প্রাণহানির সম্ভাবনা মাথায় রেখেই তাঁর নিরাপত্তা জেড প্লাস করা হল।’’— মন্তব্য এক শীর্ষ আমলার।
অভিষেকেরও প্রাণহানির আশঙ্কা আছে বলে দাবি প্রশাসনের। আধিকারিকদের বক্তব্য, গত বিধানসভা ভোটের আগে পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরে এক জনসভায় অভিষেক আক্রান্ত হন। তখনই তাঁর নিরাপত্তা জেড ক্যাটেগরিতে উন্নীত করা হয়। উপরন্তু কয়েক দিন আগে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে অভিষেকের গাড়ি দুর্ঘটনার তদন্তে নেমে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই রিভিউ কমিটি সাংসদ তথা মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেকের সুরক্ষা-বলয় জেড প্লাস স্তরে ওঠাতে চেয়েছে।
যাঁদের সুরক্ষায় প্রশাসনের এই উদ্যোগ, তাঁরা কী বলছেন? শোভনবাবু বলেন, ‘‘মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে জীবনের ঝুঁকি আসবেই। ও সব মাথায় রাখি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জনগণের কাজ করে যেতে চাই।’’ অভিষেক কোনও মন্তব্য করতে চাননি
প্রসঙ্গত, আগে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও জেড প্লাস নিরাপত্তা পেতেন। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। সম্প্রতি জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙেরও ‘জেড প্লাস’ সিকিওরিটি রদ হয়েছে। তার পরে রাজ্যে শুধু মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরেই ‘জেড প্লাস’ সুরক্ষার আয়োজন ছিল। ‘জেড’ বলয়ে আছেন দুই মন্ত্রী— জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও শুভেন্দু অধিকারী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy