বিজেপির দফতরের বাইরে বিক্ষোভ শিখ সম্প্রদায়ের। (দু’পাশে) আপ নেতা তথা পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। — নিজস্ব চিত্র।
খলিস্তানি-মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক ক্রমেই বেড়ে চলেছে। মঙ্গলের পর বুধবারও মুরলীধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপির দফতরের বাইরে বিক্ষোভ দেখান শিখ সম্প্রদায়ের বহু মানুষ। তাঁদের দাবি, যে পুলিশ আধিকারিকের উদ্দেশে ‘খলিস্তানি’ মন্তব্য করা হয়েছে, সেই যশপ্রীত সিংহের কাছে তো বটেই গোটা শিখ সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। বিজেপি দফতর ঘেরাও কর্মসূচি থেকে উঠেছে ‘বিজেপি মুর্দাবাদ’ স্লোগানও। বিজেপি শিখবিরোধী, এই অভিযোগ তুলে মুনি লাল শিখ সঙ্গত গুরুদ্বার থেকে মুরলীধর সেন লেন পর্যন্ত একটি মিছিলেরও আয়োজন করা হয়েছে।
বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র অমিত মালব্য এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে দাবি করেছেন মুরলীধর সেন লেনের বাইরে শিখ সম্প্রদায়ের যাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাঁদের নেতৃত্বে রয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি। অমিতের অভিযোগ, তৃণমূল সন্দেশখালির বিষয় থেকে নজর ঘোরাতেই এই বিতর্ক তৈরি করেছে।
শুধু শহর কলকাতা নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতেও শিখ সম্প্রদায়ের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। শিখ সম্প্রদায়ের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে পশ্চিম বর্ধমানের বার্নপুর গুরুদ্বার কমিটির পক্ষ থেকে আসানসোল-হিরাপুর থানায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয় বুধবার দুপুরে। রাজ্যের বাইরেও এই বিতর্কের আঁচ পৌঁছেছে। ময়দানে নেমেছে আম আদমি পার্টি (আপ) এবং কংগ্রেসের মতো বিজেপি-বিরোধী দলগুলি।
খলিস্তানি বিতর্ক নিয়ে বাংলার শাসকদলের সঙ্গে সহমত অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আপ। তাদের দাবি, ওই শিখ পুলিশ অফিসারকে ‘খলিস্তানি’ বলে সংবিধানের সমস্ত সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে বিজেপি। আপ নেতা তথা পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘এক জন শিখ আইপিএস অফিসারকে বাংলার বিজেপি নেতৃত্ব দেশদ্রোহী বলেছেন, এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। বিজেপি সম্ভবত জানে না যে, আজ পর্যন্ত পঞ্জাবিরা দেশকে স্বাধীন করতে এবং স্বাধীনতা রক্ষা করতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে। বিজেপির উচিত শিখদের কাছে ক্ষমা চাওয়া।’’
একই দাবি করেছেন আপ নেতা তথা দিল্লির মন্ত্রী গোপাল রাই। তাঁর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা কর্তব্যরত এক জন আইপিএস অফিসারকে যে ভাবে খলিস্তানি বলে অপমান করেছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। যাঁরা দেশের ঐক্যে বিশ্বাসী তাঁরা জানেন যে, দেশকে শক্তিশালী করতে জাতি, ধর্ম, অঞ্চল বা ভাষার ভিত্তিতে কাউকে অপমান করা উচিত নয়। বিজেপি নেতাদের কথার মধ্যে কত যে ঘৃণা রয়েছে তা প্রকাশ্যে এসেছে। সংবিধানের সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে বিজেপি।’’
অন্য দিকে কংগ্রেসের দাবি, রাজ্য পুলিশের কাজ সমালোচনাযোগ্য হলেও ওই আইপিএসকে ‘খলিস্তানি’ বলে নিন্দনীয় কাজ করেছে বিজেপি। কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর দাবি, বিজেপি তাদের ‘রাজনৈতিক বাজার’ সাজাতেই ‘বিদ্বেষের চাষ’ শুরু করেছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা এক জন পুলিশ অফিসারকে ‘খলিস্তানি’ বলে সম্বোধন করেছেন। তাঁকে অপমান করেছেন। আমি এর নিন্দা করছি। বাংলার সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন নয় বিজেপি। আমরাও সন্দেশখালি যেতে চেয়েছিলাম। আমাদেরও থামানো হয়েছিল। তার মানে এই নয় যে, কর্তব্যরত কোনও অফিসারকে তাঁর ধর্ম নিয়ে অপমান করতে হবে। এই ধরনের মন্তব্যে আইপিএস যশপ্রীত সিংহ অবশ্যই অপমানিত বোধ করেছেন। কংগ্রেসও বাংলার পুলিশের সমালোচনা করে। কিন্তু আমরা এই ধরনের মন্তব্য সমর্থন করি না। এই মন্তব্যের জন্য বিজেপির উচিত প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।’’
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গবার দুপুরে। ওই দিন বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই সময় তাঁদের ধামাখালিতে আটকায় পুলিশ। তাঁদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয় পুলিশের। অভিযোগ, সেখানে কর্তব্যরত পাগড়িধারী আইপিএস অফিসার যশপ্রীতের উদ্দেশে ‘খলিস্তানি’ মন্তব্য উড়ে আসে বিজেপি নেতৃত্বের তরফে। রাজ্য পুলিশ অভিযোগ করে, ওই মন্তব্য করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। ঘটনার পর পরই একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টির নিন্দা করেন। এর পর থেকেই খলিস্তানি বিতর্ক নিয়ে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। ক্রমে তা আলোড়িত করেছে জাতীয় রাজনীতিকেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy