মেদিনীপুর শহরে আপের সেই পোস্টার। নিজস্ব চিত্র
দৃশ্যত ‘বীজ’ নেই। কিন্তু তার পরেও নজরে এল ‘অঙ্কুরোদ্গম’। গত বিধানসভা নির্বাচনে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের দল আম আদমি পার্টি (আপ)-র আক্ষরিক অর্থেই চিহ্ন ছিল না এ রাজ্যে। কিন্তু বুধবার হঠাৎই মেদিনীপুর শহর জুড়ে দেখা গিয়েছে আপের পোস্টার। একই সঙ্গে বিজেপি-র কায়দায় মিসড কল করে আপের সদস্য হওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে খড়গপুর আইআইটি-র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পড়ুয়া ছিলেন বর্তমান আপ প্রধান। সেই ‘শিকড়’কে আঁকড়ে ধরেই কি জঙ্গলমহলের মাটিতে আপাতত কুঁড়ি ফোটানোর কৌশল নিয়েছে আপ? এই প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। যদিও আপ নেতাদের দাবি, গোটা রাজ্য জুড়েই চলছে তাঁদের সদস্য সংগ্রহ অভিযান।
বুধবার মেদিনীপুর শহরের স্টেশন রোড-সহ কয়েকটি এলাকায় দেখতে পাওয়া যায় আপের পোস্টার। তাতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর ছবি এবং দলীয় প্রতীক ছাপা। সেই সঙ্গে দেওয়া হয়েছে একটি ফোন নম্বরও। পাশাপাশি বার্তা, মিসড কল দিয়ে আপের সদস্য হওয়ার। এই মেদিনীপুর শহর থেকেই খড়গপুরের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। যেখানে এক সময় পড়াশোনা করতে এসেছিলেন কেজরীবাল। আপের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অধ্যক্ষ সৌরভ ঘোষ। তিনি আবার পেশায় ইঞ্জিনিয়ারও। সৌরভের বক্তব্য, ‘‘দলের ‘বাংলা নির্মাণ অভিযান’ চলছে। সেই লক্ষ্যে মঙ্গলবার থেকে পোস্টার দেওয়া শুরু হয়েছে। মেদিনীপুর শহর ছাড়াও জেলার বিভিন্ন প্রান্তে প্রচার করা হচ্ছে। সংগঠন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে সদস্য সংগ্রহের মধ্য দিয়ে।’’ সৌরভের দাবি, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ইতিমধ্যেই ৫০০ সদস্য রয়েছে আপের। পোস্টারে দেওয়া নম্বর দেখে অনেকেই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলেও জানিয়েছেন আপ নেতারা।
আপের রাজ্য কমিটির সদস্য নাজির হোসেন জানিয়েছেন, শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর নয় রাজ্যের সব জেলাতেই সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে আপ। দলের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও রাজ্যের সব জেলায় ‘বাংলা নির্মাণ অভিযান’ শুরুর কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রতিটি জেলার জন্য একটি ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে।
বুধবার মেদিনীপুরে শহরে যে পোস্টার দেওয়া হয়েছে তাতে রাজনৈতিক বার্তাও দিয়েছে আপ। লেখা হয়েছে, ‘নোংরা রাজনীতিকে করতে সাফ, বাংলায় এ বার আসছে আপ’। পোস্টারে কারও নাম না করা হলেও, কেজরীবালের দলের এই বক্তব্য রাজ্যের শাসকদলকে নিশানা করে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। আর এই বক্তব্যের সূত্র ধরেই দানা বেঁধেছে নানা প্রশ্ন। জাতীয় ক্ষেত্রে, বিশেষত বিজেপি বিরোধিতায় বহু দিন ধরেই এক নৌকায় দেখা যায় তৃণমূল এবং আপকে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে কেজরীবালের ভাবমূর্তিকে সামনে রেখে আপের এই ‘দুই নৌকায় পা’ কেন? বিপুল ক্ষমতা নিয়ে রাজ্যে তৃতীয় বারের জন্য ফিরে আসার পর ত্রিপুরা, কেরল, উত্তরপ্রদেশ-সহ কয়েকটি রাজ্যে সংগঠন তৈরি করার কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু সেই একই উদ্দেশ্যে দিল্লিতে জোড়াফুল শিবিরের সক্রিয়তা এখনও পর্যন্ত তেমন ভাবে নজরে আসেনি। তা হলে ‘রাজনৈতিক বন্ধু’ হিসাবে পরিচিত আপের পশ্চিমবঙ্গে ‘আগ্রাসী’ চেহারা কেন? ‘মিত্রশক্তি’ আপের এ রাজ্যে ক্ষমতাবিস্তারের ইচ্ছা নিয়ে একেবারেই নিরুত্তাপ তৃণমূল শিবির। জোড়াফুল শিবিরের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সভাপতি সুজয় হাজরা বলছেন, ‘‘যদি কোনও রাজনৈতিক দল মিসড কল দিয়ে তাদের সদস্য সংখ্যা বাড়াতে চায় তাতে তৃণমূলের কিছু বলার নেই।’’ রাজ্যে ভোটের আগে গেরুয়া শিবিরের রাজনৈতিক উদ্যোগের কথা তুলে ধরে সুজয় বলছেন, ‘‘এর আগেও দেখেছি বিজেপি মিসড কল দিয়ে সদস্য সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু এখন ক’জন বিজেপি করেন?’’
বিষয়টি অবশ্য তৃণমূল বনাম আপ— এই সহজ সমীকরণ হিসাবে দেখছেন না বিজেপি নেতারা। তাঁদের আশঙ্কা, আপের পালে হাওয়া দিয়ে পদ্মশিবিরের জন সমর্থন ধসানোর কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। আপকে উড়িয়ে দেওয়ার ঢংয়েই বিজেপি-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সভাপতি অরূপ দাসের প্রশ্ন, ‘‘এখানে ওই রাজনৈতিক দলের কোনও সমর্থন আছে কি? বিজেপি বিরোধিতা করা ছাড়া ওদের আর কোন কাজ নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy