প্রতীকী ছবি।
হাসপাতাল জুড়েই একটা ‘আমরা করব জয়’ গোছের পরিবেশ ছিল। করোনা পজ়িটিভ এক তরুণীর প্রসব ঘিরে তেমনই মনোভাব ছিল চিকিৎসক, নার্স থেকে স্বাস্থ্যকর্মী— সকলেরই। শেষ পর্যন্ত তাঁরাই জিতলেন। প্রসূতি শুধু নিরাপদে জন্মই দিলেন না, সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে সন্তানকে নিয়ে বাড়িও গেলেন।
শুক্রবার বিকেলে ১২ দিনের ছেলেকে কোলে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান ওই তরুণী। রাজ্যের করোনা বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর কথায়, ‘‘এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল কোভিড মানেই মৃত্যু নয়।’’
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো ১ এপ্রিল থেকে ফুলেশ্বরের সঞ্জীবন হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা শুরু হয়। গত ১২ এপ্রিল ওই প্রসূতির করোনা ধরা পড়ে। পরের দিন তাঁকে ওই হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়। ১১ মে ছিল ওই তরুণীর সম্ভাব্য প্রসবের দিন। কিন্তু দিন এগিয়ে আসতে পারে অনুমান করে তাঁকে অত্যন্ত গুরুত্ব-সহ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। শুরু হয় করোনার চিকিৎসা। পাশাপাশি কার্ডিও টোকোগ্রাফি যন্ত্রের মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশুর উপরেও চলে নজরদারি। গত ২০ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রসবযন্ত্রণা শুরু হলে চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নেন মহিলার সাধারণ ডেলিভারি করাতে হবে। ওই রাতেই তিনি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।
হাসপাতালের অধিকর্তা, চিকিৎসক শুভাশিস মিত্র বলেন, ‘‘জন্মের সময়ে শিশু যাতে মায়ের সংস্পর্শে এসে সংক্রমিত না হয়, তার জন্য ওই মহিলার শরীরের উপরের অংশ সম্পূর্ণ সুরক্ষা বলয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল।’’ মা ও শিশুকে একটি আলাদা ঘরে রাখা হয়। মেডিক্যাল অধিকর্তা চিকিৎসক ডালিয়া মিত্র, নিওনেটোলজিস্ট ঊর্মিলা পিল্লাই রায়, স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে তৈরি মেডিক্যাল বোর্ড চিকিৎসার দায়িত্বে থাকেন। সংক্রমণ ঠেকাতে মায়ের থেকে ছয় ফুটের বেশি দূরত্বে রাখা হত শিশুকে। শুধুমাত্র স্তন্যপান করানোর সময়ে মায়ের কাছে দেওয়া হত শিশুটিকে। সেই সময়ে মাস্ক ছাড়াও মাকে গ্লাভস, চশমা, মাথায় টুপি পরানো হত।
স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পরামর্শ মতো পাঁচ দিন বয়স হতেই গত ২৫ এপ্রিল শিশু ও মায়ের লালারসের নমুনা পরীক্ষায় পাঠানো হয়। ২৭ এপ্রিল দু’জনেরই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। নিশ্চিত হতে ২৮ এপ্রিল ফের পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট নেগেটিভ এলে দু’জনকে ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: এনআরএস হাসপাতালে একসঙ্গে ৮ রোগী করোনায় সংক্রমিত
শুক্রবার সকালে ওই তরুণীর অনুরোধে ডালিয়াদেবী শিশুটির নাম রাখেন আরমান। ওই মহিলা বলেন, ‘‘ছেলে হওয়ায় আনন্দ হলেও পরে ভয় বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু সবার সহযোগিতায় করোনাকে জয় করতে পেরেছি।’’ আর শুভাশিসবাবু বলছেন, ‘‘মা ও শিশুর সুস্থ ভাবে বাড়ি ফেরা করোনা-যুদ্ধে জয়গানের সূচনা করল।’’
শুক্রবার মা ও শিশুর বেরোনোর সময়ে হাসপাতালে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, বিধায়ক, চিকিৎসক, নার্স থেকে স্বাস্থ্যকর্মী-সহ সকলে গাইলেন, ‘‘আমি ভয় করব না ভয় করব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy