Advertisement
E-Paper

পুলিশ মুচলেকা লিখিয়ে ছাড়তেই ‘বিয়ে’ নাবালিকার

পুলিশের দাবি, বৃহস্পতিবার দুই বাড়িতে গিয়ে বিয়ের ‘প্রমাণ’ পাওয়া যায়নি। রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশন পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সুদেব দাস

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫ ০৬:৩৩
Share
Save

মন্দিরে নাবালিকার বিয়ে হতে চলেছে খবর পেয়ে, পুলিশ পৌঁছে তা বন্ধ করেছিল। বর ও কন্যা পক্ষকে থানায় নিয়ে গিয়ে ‘নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হবে না’ সে মর্মে মুচলেকা লেখানো হয়। কিন্তু থানা থেকে বেরিয়েই দু’পক্ষ ‘চার হাত এক’ করে দেন বলে অভিযোগ।

নদিয়ার ধানতলা থানা এলাকার সোমবারের ঘটনা। রীতি অনুযায়ী, বুধবার বৌভাতের অনুষ্ঠানও হয়েছে পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রের দাবি। পরিবারের লোকজন সে কথা অস্বীকারও করছেন না। অথচ, পুলিশের দাবি, বৃহস্পতিবার দুই বাড়িতে গিয়ে বিয়ের ‘প্রমাণ’ পাওয়া যায়নি। রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশন পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের অন্যতম উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, “আইনে মুচলেকার বিধান নেই। মুচলেকা লিখিয়ে পুলিশ কাউকে ছেড়ে দিতে পারে না। উচিত ছিল, নাবালিকার বিয়ে আটকে তাকে হোমে পাঠানো ও দুই পরিবারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া।” পুলিশ কেন ব্যবস্থা নেয়নি? রানাঘাট পুলিশ-জেলার ডেপুটি সুপার (সীমান্ত) সোমনাথ ঝা বলেন, “বিষয়টি দেরিতে জেনেছি। তার পরেই খোঁজখবর শুরু করেছি।” তাঁর আশ্বাস, “সাধারণ ডায়েরি করে ঘটনার তদন্ত হচ্ছে।’’

স্থানীয় সূত্রের দাবি, ধানতলা থানার কাছেই একটি মন্দিরে ষোলো বছরের কিশোরীর সঙ্গে বছর উনিশের এক তরুণের ‘বিয়ের’ আয়োজন হয়। বাবার কর্মসূত্রে মেয়েটি বিহারে থাকে। ওই এলাকায় তার মামার বাড়ি। সেখানে আসা-যাওয়ার সূত্রে ওই ছেলেটির সঙ্গে তার পরিচয়ও প্রণয়।

সাম্প্রতিক জাতীয় পরিবার ও স্বাস্থ্য সমীক্ষা অনুযায়ী, নদিয়া জেলায় ২০-২৪ বছরের মহিলাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর বয়স পেরোনোর আগে। আইন অনুযায়ী, ২১ বছরের আগে ছেলেরাও বিয়ে করতে পারে না। এ দিন তরুণের মা দাবি করেন, ‘‘ছেলে ভুল করে বিয়ে করে ফেলেছে। বাড়িতে বৌ এনেছিল। তাই ভাত-কাপড়ের আয়োজন করেছিলাম।’’ যদিও ডেপুটি পুলিশ সুপার (সীমান্ত) বলেন, ‘‘এ দিন শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিককে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ ওই নাবালিকা ও তরুণের বাড়িতে গিয়েছিল। কিন্তু ওদের বিয়ের প্রমাণ মেলেনি।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রধান বুলু অধিকারীর সঙ্গে আত্মীয়তা থাকলেও ছেলেটির পরিবার ‘তৃণমূল ঘেঁষা’। ফলে, দুদলের নেতাদের তরফে পুলিশের কাছেকড়া পদক্ষেপ না করার ‘অনুরোধ’ গিয়ে থাকতে পারে। সিপিএমের রানাঘাট পূর্ব-১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক স্বরূপমুখোপাধ্যায়ের দাবি, “তৃণমূল আর বিজেপি যে একই মুদ্রার এ পিঠ-ও পিঠ, তা স্পষ্ট। ওরা আইন মানে না। পুলিশের আইনানুগ ব্যবস্থানেওয়া উচিত।’’

তবে পঞ্চায়েতের প্রধানের দাবি, ‘‘ওই ছেলেটির মা সম্পর্কে আমার ভাইঝি। কিন্তু বিয়ের ব্যাপারটা জানি না। এমন ঘটনা সমর্থনও করি না।’’ তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশীষ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। সামাজিক সচেতনতার অভাবে ঘটেছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ranaghat

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}