সময় দেওয়া হয়েছিল ২৪ ঘণ্টা। সেই সময় পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর জানালেন তিনি ‘সময়ের মধ্যেই’ শো কজ়ের জবাব দেবেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, বিধায়কের সঙ্গে কথা বলে সোমবার পর্যন্ত তাঁকে জবাবের সময় দেওয়া হল। শুক্রবার সন্ধ্যায় পরিষদীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় হুমায়ুনকে ফোন করেছিলেন। ভরতপুরের বিধায়ক শো কজ় চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করে জানিয়েছেন, ‘যথাসময়ে’ তিনি দলকে তাঁর জবাব জানাবেন।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কিছু মন্তব্যের প্রেক্ষিতে হুমায়ুন কিছু কথা বলেছেন। তাঁর ওই মন্তব্যের জেরে তাঁকে কারণ দর্শাতে বলেছে তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। তৃণমূল সূত্রে খবর, হুমায়ুনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে শো কজ়ের নির্দেশ দেন। তার পরে বৃহস্পতিবারই তৃণমূল বিধায়ককে শো কজ়ের চিঠি পাঠিয়ে দেয় তাঁর দল। শোভনদেব জানান, হুমায়ুনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তার প্রমাণ তাঁদের কাছে রয়েছে। বিধায়ককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তিনি উত্তর না দেন, তা হলে দল পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। শোভনদেবের কথায়, ‘‘আশা করছি, ঠিক সময়ে জবাব দেবেন বিধায়ক।’’
অন্য দিকে, তৃণমূলের একটি সূত্রে খবর, চিঠিটি বিধায়কের হোয়াট্সঅ্যাপে পাঠানো হয়েছিল। প্রথমে হুমায়ুন সেটি সম্ভবত দেখেননি। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় শোভনদেব তাঁর সঙ্গে ফোন করে কথা বলার পর চিঠিটি দেখেছেন এবং দলকে নিজের অবস্থান জানাবেন বলে কথা দিয়েছেন। আনন্দবাজার ডট কমকে হুমায়ুন বলেন, ‘‘শুক্রবার সন্ধ্যায় শোভনদেবদার সঙ্গে কথা বলেছি। শো কজ়ের চিঠি হাতে পেয়েছি। যথাযথ ভাবেই আমি দলের কাছে জবাব দেব।’’ জানা গিয়েছে, হুমায়ুন শোভনদেকে বলেছেন, দোল এবং হোলি উৎসবের কারণে নিজের বিধানসভা এলাকা নিয়ে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন। সোমবার বিধানসভায় গিয়ে তিনি শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান (শোভনদেব)-কে শো কজ়ের জবাব দেবেন। পরিষদীয় মন্ত্রীও জানান, তাঁকে সোমবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হল।
আরও পড়ুন:
হুমায়ুনকে তৃণমূলের শো কজ় অবশ্য নতুন ঘটনা নয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মন্তব্য করে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী। আবার দুঃখপ্রকাশও করেছেন। এর আগে গত বছর নভেম্বরে শো কজ় করা হয়েছিল তাঁকে। কারণ, সে বার হুমায়ুন বলেছিলেন, তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নেতা মানেন। কিন্তু তৃণমূল যদি আগামিদিনে তাঁকে টিকিট না দেয়, বেঁচে থাকলে সেই ‘অপকর্মের’ জবাব দেবেন। তার প্রেক্ষিতে পরে তিন পাতার জবাবি চিঠিতে বিধায়ক জানিয়েছেন, তিনি দলের ক্ষতি চান না। কাউকে আঘাত করতেও তিনি চাননি। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ জানানোর পরেও দল পদক্ষেপ না করায় আবেগতাড়িত হয়ে কিছু কথা বলে ফেলেছিলেন। পর ক্ষণেই আবার কেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে শো কজ় করা হবে না, কেন তাঁকে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির মুখোমুখি হতে হল না, প্রশ্ন তোলেন ‘বিদ্রোহী’ হুমায়ুন।
এ বারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, হুমায়ুনকে শো কজ় করার খবর প্রকাশ্যে আসার পরে পশ্চিমবঙ্গ মিমের রাজ্য সভাপতি ইমরান শোলাঙ্কি তাঁকে তৃণমূল ছেড়ে মিমে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এখন দেখার, ওই কারণ দর্শানোর চিঠির কী জবাব দেন হুমায়ুন এবং তৃণমূল তাঁকে নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কী করে।