প্রশাসনের এই বাড়িয়ে দেওয়া হাত ওলটপালট জীবনেও নতুন করে স্বপ্ন দেখার ভরসা জুগিয়েছে ওই নাবালিকাকে। সে বলছে, ‘‘ভেবেছিলাম আর কোনও দিন স্কুলে যেতে পারব না। ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে সেই সুযোগ পেলাম। স্বপ্ন সত্যি করবই।’’
ফাইল চিত্র।
মেয়েটি তখন সবে তেরো। মাহারা মেয়েকে পার করে দিয়ে স্বস্তিই পেয়েছিলেন পরিজনেরা। কাঁচা বয়সে বিয়ের পরে পড়াশোনাতেও দাঁড়ি পড়ে গিয়েছিল। বছর ঘুরতে না ঘুরতে জীবনে আরও বড় বিপর্যয়। আগুনে পুড়ে মারাত্মক জখম হয় ওই নাবালিকা। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা সেই মেয়েটিই এ বার পড়াশোনায় ফিরল। আর তাকে স্কুলে ফেরাল স্থানীয় প্রশাসন। আবার স্কুলে ফিরে রীতিমতো খুশি ওই কিশোরী। অতীতকে পিছনে ফেলে এ বার তাঁর স্বপ্নপূরণের লড়াই শুরু।
পূর্ব মেদিনীপুরের এক গ্রামের বছর পনেরোর ওই নাবালিকাকে প্রশাসনের উদ্যোগেই শনিবার ফের স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে। সে ভর্তি হয়েছে অষ্টম শ্রেণিতে। এই নাবালিকার বয়স যখন মাত্র ১০ বছর, তখন তার মা মারা যায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, বাবার তেমন মত না থাকলেও ১৩ বছর বয়সে আত্মীয়-স্বজনের চাপেই মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায় এলাকার এক যুবকের সঙ্গে। বিয়ের এক বছরের মধ্যে অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হয় সে। দীর্ঘ দিন ভর্তি থাকতে হয়েছিল তমলুক জেলা হাসপাতালে। কী ভাবে আগুন লেগেছিল তার কারণ স্পষ্ট ভাবে জানা যায়নি। অগ্নিদগ্ধ সেই মেয়েটিরও আর ঠাঁই হয়নি শ্বশুরবাড়িতে। বাবার কাছে থেকেই চলছিল চিকিৎসা। তবে বাবার রোজগার নেই। চেয়েচিন্তে কোনও মতে দু’মুঠো জোগাড় হয়। তাই মেয়ের চিকিৎসাতেও ঘাটতি হচ্ছিল। শেষমেশ খবর পৌঁছয় স্থানীয় বিডিও-র কাছে। মূলত বিডিও-র উদ্যোগেই মেয়েটির শিক্ষা ও চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছে ব্লক প্রশাসন ও ব্লক স্বাস্থ্য বিভাগ।
বিডিও নিজে ব্লকের এক চিকিৎসককে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন ওই নাবালিকার বাড়িতে। মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, সে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। আর দেরি করেনি ওই বিডিও। দ্রুত মেয়েটিক স্কুলে ভর্তি করার ব্যবস্থা করে দেন ওই প্রশাসনিক আধিকারিক।
শনিবার স্কুলে ভর্তির পাশাপাশি স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ব্লক প্রশাসনের তরফে ওই ছাত্রীর হাতে বই ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে তার চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্বও নিয়েছে ব্লক প্রশাসন। বিডিও নিজেও মহিলা। বলছিলেন, ‘‘মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে বুঝেছিলাম ও সত্যি পড়তে চায়। তাই আমাদের তরফে যতটুকু করা যায় করেছি।’’
প্রশাসনের এই বাড়িয়ে দেওয়া হাত ওলটপালট জীবনেও নতুন করে স্বপ্ন দেখার ভরসা জুগিয়েছে ওই নাবালিকাকে। সে বলছে, ‘‘ভেবেছিলাম আর কোনও দিন স্কুলে যেতে পারব না। ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে সেই সুযোগ পেলাম। স্বপ্ন সত্যি করবই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy