প্রতীকী ছবি।
স্কুল খুলে গিয়েছে অষ্টম শ্রেণি থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত। গত সোমবার থেকে সপ্তম শ্রেণি অবধি ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’ও শুরু হয়েছে। অথচ, এ সব জানেই না নদিয়ার কালীগঞ্জের লাখুরিখা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র মাসুদ শেখ। বর্তমানে সংসারের জন্য টাকা রোজগারে ব্যস্ত ওই পড়ুয়া।
করোনার জেরে দীর্ঘ দিন লকডাউন। তার পর থেকেই স্কুল বন্ধ ছিল। সে সময়ে রাজমিস্ত্রির কাজে জোগান দিতে দিতেই কখন যে দুটো বছর পার হয়েছে, খেয়াল নেই মাসুদের। বর্তমানে পাড়ায় একটি বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ করছে। মাসুদ বলে, ‘‘কবে স্কুল খুলেছে, ঠিক জানি না।’’
মাসুদের বাড়িতে পাঁচ ভাই। বাবা পরের জমিতে দিনমজুরের কাজ করেন। তাই বাড়তি আয়ের জন্য রাজমিস্ত্রির জুগলির কাজে নেমেছে সে। কাজ শেষে যেটুকু টাকা রোজগার হয়, তা বাবার হাতে তুলে দেয়।
কোন ক্লাসে পড়ত সে?
প্রশ্নের জবাবে খানিক থমকিয়ে, আমতা-আমতা করে মাসুদ বলে, ‘‘নাইনে পড়ার সময়ে লকডাউন হয়েছিল মনে হয়। তার পর থেকে তো আর স্কুলেই যাইনি।’’
স্কুল-ঘর ছেড়ে রাজমিস্ত্রির কাজে কেন?
এ ব্যাপারে মাসুদের ব্যাখ্যা— ‘‘বাড়িতেই এত দিন বসেছিলাম। কী আর করব, তাই কাজ করছি। ঘরে দুটো টাকা আসছে।’’
তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল আকিবুল শেখ। সে-ও রাজমিস্ত্রির জুগলির কাজ করে। সে বলে, ‘‘স্কুল খুলেছে, শুনেছি। তবে এত দিন স্কুলে যাইনি। এখন কোন ক্লাসে পড়ব, কিছুই জানি না। তাই আর স্কুলে যাই না।’’
জানা গেল, আকিবুলও লাখুরিখা উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুলছুট ছাত্র।
দুই স্কুলছুটই নদিয়ার কালীগঞ্জের সাহাপুরের বাসিন্দা। ওই গ্রামে গিয়ে জানা গেল, শুধু ওই দুই ছাত্রই নয়, ওই গ্রামে এই রকম আরও অনেকেই রয়েছে, যারা লকডাউনের পরে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সূত্রে জানা যাচ্ছে, কেউ গ্রামেই কাজ করছে। কেউ আবার বাইরের রাজ্যে কাজ নিয়ে চলে গিয়েছে। আকিবুলের বাবা সাগর শেখ অবশ্য বলেন, ‘‘ছেলে আবার স্কুলে যাক, পড়াশোনা করুক— সে আমিও চাই। তবে ওর এখন ইচ্ছে বাইরে কাজে যাবে। কাজ শিখবে।’’
স্কুলের শিক্ষকেরাও স্বীকার করছেন, ওই এলাকায় পড়ুয়াদের অনেকেই স্কুল খোলার কথা জানে না। তাঁরা জানাচ্ছেন, লকডাউনের মধ্যে বহু পরিবারের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। পরিবারের হাল ধরতে বাধ্য হয়ে অনেক পড়ুয়াই কাজে যোগ দিয়েছে। ফলে অনেকের কাছে স্কুল খোলার খবর পৌঁছয়নি।
এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে লাখুরিখা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবির পাত্র বলেন, ‘‘প্রথম দিনের চেয়ে পড়ুয়াদের উপস্থিতি হার বেড়েছে। আমরা নজর রাখছি কারা স্কুলে আসছে বা আসছে না। কয়েক দিন দেখে তার পরে গ্রামে গিয়ে অভিভাবকদের বোঝাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy