'বছরের বেস্ট ' পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় ইমামি গোষ্ঠীর দুই কর্ণধারকে। নিজস্ব চিত্র।
শুধু কি মনের মিল? নামও যে মিলে গিয়েছে। আর শুধুই কি নাম? জন্মতারিখও যে এক। এমন আশ্চর্য সমাপতন কালেভদ্রেই দেখা যায়। দুই অভিন্ন হৃদয় বন্ধু কেবল ব্যবসা মজবুত করতেই জুটি বাঁধেননি, তাঁদের জীবনও যেন একসূত্রে গেঁথে গিয়েছে। সুদূর রাজস্থান থেকে সেই যে বাংলায় এসেছিলেন, আর ফিরে যাননি। যাওয়ার প্রয়োজনও হয়নি। কারণ এই বাংলার মানুষের প্রতিই এক অবিচ্ছেদ্য অন্তরের টান তাঁরা অনুভব করেন প্রতি মুহূর্তে। কাজ করতে চান হাতে হাত মিলিয়ে। তাঁরা ইমামি গোষ্ঠীর কর্ণধার রাধেশ্যাম গোয়েন্কা ও রাধেশ্যাম আগরওয়াল। আনন্দবাজার অনলাইনের ‘বছরের বেস্ট’ সন্ধ্যায় দুই বন্ধু ‘রাধে রাধে’-র হাতেই বছরের অন্যতম সেরা শিল্পপতির পুরস্কার তুলে দেওয়া হল।
রাধেশ্যাম আগরওয়াল এ দিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন না। তবে তাঁর পুত্র আদিত্য ছিলেন। রাধেশ্যাম গোয়েন্কা ও তাঁর পুত্র মণীশ গোয়েঙ্কা দু’জনেই ছিলেন অনুষ্ঠানে। পুরস্কার নিতে উঠে রাধেশ্যাম গোয়েন্কা বলেন, “আমাদের দু’জনের নাম ও জন্মতারিখ যেমন এক, তেমনই আমাদের দুই বন্ধুর স্ত্রীর জন্মতারিখও এক। তাঁদের বয়সও এক। সুখ ও ভালবাসার সমাপতন আমাদের।”
ভালাবাসাই বটে। মাত্র চার বছর বয়সেই সুদূর রাজস্থান থেকে বাংলায় চলে এসেছিলেন রাধেশ্যাম গোয়েন্কা। তার পর থেকে এই বাংলাতেই পথ চলার শুরু। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরে বিলেত থেকে যেমন বণিকেরা এসেছিলেন, তেমনই দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে নানা সময়ে বণিকেরা এসে এই বাংলার বাণিজ্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলার মাটিতে ব্যবসার বহর বাড়িয়ে তাঁরা ফিরেও গিয়েছেন। ফিরে যাননি দুই রাধেশ্যাম। গত ৫০ বছর ধরে এ রাজ্যেই লগ্নি করে চলেছেন তাঁরা। রাধেশ্যাম গোয়েন্কার কথায়, “কলকাতা প্রিয় শহর। কী নেই এখানে। এ শহর সব কিছু দিয়েছে। এখানকার মানুষজনের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে চাই।”
কথায় বলে, অর্থ অনর্থের কারণ হতে পারে। কিন্তু অর্থ অনেক সময়েই অর্থবহও হয়ে ওঠে। যেমন হয়েছে দুই রাধেশ্যামের ক্ষেত্রে। স্কুল জীবন থেকে বন্ধু। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ছাত্র। উচ্চশিক্ষাও একই বিষয়ে। কলেজ জীবন থেকেই ব্যবসা করার ভাবনা ছিল দু’জনেরই। তখন হাতে পুঁজি ছিল না। কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় গিয়ে পুরনো বই কিনে সেখানে প্রসাধনী তৈরির পদ্ধতি নিয়ে পড়াশোনা করতেন। সেখানেই শেষ নয়। নানা রকম ভাবনা ঘুরপাক খেত তাঁদের মাথায়। কখনও ভাবতেন আঠা তৈরি করবেন, আবার কখনও লুডোর বোর্ড। পরবর্তীতে দু’জনেই বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি পান। তবে বেশি দিন তা ভাল লাগেনি। চাকরি ছেড়ে কলকাতার বুকেই ব্যবসা শুরু করবেন বলে ভাবেন।
নবজাগরণের কলকাতায় ৪৮ মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটে ৩৬ কাঠা জমির উপর যে জীর্ণ প্রাসাদ ছিল তাকে এ শহর চিনত মল্লিকবাড়ি নামে। সেটি তৈরি করেছিলেন বাবু স্বরূপচন্দ্র মল্লিক। এর পাশেই রাজা রাজেন মল্লিকের মার্বেল প্যালেস। সংস্কারের অভাবে ভগ্নপ্রায় দশা। ১৯৬৮ সালে সেই ভাঙাচোরা মল্লিকবাড়িরই ২০০ বর্গফুট জায়গায় তাঁদের ব্যবসা শুরু করেন দুই রাধেশ্যাম। মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি সম্বল করে তাঁরা পথ চলা শুরু করেছিলেন। তা আজ প্রায় ২০ হাজার কোটির বিশাল সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে।
শুরুতে প্রসাধনীর জিনিসপত্রই বিক্রি করত ইমামি। কিন্তু এখন ব্যবসা নানা দিকে প্রসারিত হয়েছে। প্রসাধনী তো বটেই পাশাপাশি নিউজপ্রিন্টের ব্যবসা, জমিবাড়ি, ভোজ্যতেল, প্যাকেজিং থেকে বই বিক্রির কারবারও আছে তাঁদের। ব্যবসা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। ব্যবসা বৃদ্ধি করতে দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাজারের উপরেও জোর দিচ্ছে ইমামি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy