(বাঁ দিক থেকে) প্রীতম ভদ্র, মহম্মদ সেলিম এবং অরণি মুখোপাধ্যায়ের হাতে সম্মান তুলে দিচ্ছেন অধীর চৌধুরী (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
বন্ধু, কী খবর...! কত দিন দেখা হয়নি।
দেখা হল বছরের বেস্ট সন্ধ্যায়। এ বছর হয়ে যাওয়া লোকসভা ভোটে বাংলার দুই জোটসঙ্গী শীর্ষনেতা অধীর চৌধুরী এবং মহম্মদ সেলিম। নিজেরা লড়েছিলেন একদম পাশাপাশি দুই আসনে। ভোট মেটার পর পরই এক বার মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়েছিল দু’জনের। দিল্লিতে। তার পর হল সোমবার, আনন্দবাজার অনলাইনের অনুষ্ঠানে।
আনন্দবাজার অনলাইনের বছরের বেস্ট সন্ধ্যায় দুই রন্ধনশিল্পী অরণি মুখোপাধ্যায় এবং প্রীতম ভদ্রকে সম্মানিত করা হয়। এই জুটির হাতেই সম্মান তুলে দেন মুর্শিদাবাদের রাজনৈতিক জুটি! একই সঙ্গে মঞ্চে উঠলেন অধীর এবং সেলিম। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সহাস্যে দুই রন্ধনশিল্পীর হাতে সম্মান তুলে দিলেন দুই রাজনীতিক। ভিড়ের মধ্যে বার কয়েক অধীর এবং সেলিমকে একান্তে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। দর্শকাসনে বসেছিলেন কাছাকাছিও।
কয়েক বছর আগেও অধীর এবং সেলিমের সম্পর্ক ছিল ‘অম্লমধুর’, যা প্রকাশ্যে এসে পড়েছিল ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে সংযুক্ত মোর্চার নামে ডাকা ব্রিগেড সমাবেশে। মঞ্চে তখন বক্তিতা করছিলেন তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর। তিনি তখন শুধু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বা বহরমপুরের সাংসদ নন, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতাও। ব্রিগেডে অধীরের বক্তৃতার মাঝেই মঞ্চে ওঠেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা তথা আইএসএফের ‘মুখ’ আব্বাস সিদ্দিকি। আব্বাসকে মঞ্চ প্রদক্ষিণ করাচ্ছিলেন সেলিম। চলছিল আব্বাস-সমর্থকদের উল্লাসধ্বনি। অধীরকে বক্ত়ৃতা থামিয়েই দিতে হয়। ক্ষুব্ধ অধীর পোডিয়াম ছেড়ে নেমে যেতে চেয়েছিলেন। শেষমেশ বর্ষীয়ান বিমান বসু অধীরকে শান্ত করেন। মাইক ধরলেও খেই হারানো অধীর তার পর অল্পই বলেছিলেন। ঘনিষ্ঠ মহলে সে দিন তিনি ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেছিলেন, ভরা ব্রিগেডের সামনে তাঁকে অপদস্থ করা হয়েছে।
এ কথা সর্বজনবিদিত যে, আইএসএফকে সংযুক্ত মোর্চায় শামিল করার প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি দৌত্য চালিয়েছিলেন সেলিমই। কংগ্রেসের সঙ্গে সেই ভোটে বামেদের সমঝোতা হলেও আইএসএফের সঙ্গে হয়নি। সেই সময়ে অবশ্য সেলিম সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক ছিলেন না। তখন দায়িত্বে ছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। ২০২২ সালের মার্চে সেলিম সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক হন।
সেলিম রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পর থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছিলেন। অধীরের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচতে শুরু করে। সাগরদিঘি উপনির্বাচনের সময়ে মুর্শিদাবাদ জেলা সিপিএম একরোখা ছিল যে, ওই আসনে দলের প্রতীকে প্রার্থী দাঁড় করাবেই। কিন্তু কংগ্রেসকে সমর্থনের বিষয়ে জেলা সিপিএমকে রাজি করিয়েছিলেন সেলিম। তিনিই অধীরকে অভয় দিয়েছিলেন। সেই ভোটে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস তৃণমূলকে হারানোর পরে রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল। কংগ্রেস প্রার্থীর জন্য অধীর যেমন সাগরদিঘিতে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন, তেমনই সেলিম নিজে একাধিক দিন প্রচারে গিয়েছিলেন। পাশাপাশি মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের মতো বাম যুবনেত্রীরা তাঁবু খাটিয়ে পড়েছিলেন সাগরদিঘিতে।
গত লোকসভা ভোটে অধীর-সেলিমের বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হয়। অধীরই বলেছিলেন, ‘‘সেলিম ভাই, আপনি মুর্শিদাবাদে দাঁড়ান। আমি দেখে নেব।’’ পাশের আসন বহরমপুরে ছিল অধীরের লড়াই। জোটের জুটি লড়েছিলেন পাশাপাশি কেন্দ্রে। যদিও দু’জনকেই হারতে হয় তৃণমূলের কাছে। দু’জনেই ছিলেন দ্বিতীয় স্থানে। পরবর্তী কালে প্রদেশ সভাপতি পদ গিয়েছে অধীরের। যিনি দায়িত্বে এসেছেন, সেই শুভঙ্কর সরকার অধীরের মতো তৃণমূল-বিরোধিতায় কট্টরপন্থী নয় বলেই রাজনৈতিক মহলের সাধারণ ধারণা।
লোকসভা ভোটে জোটের আগে কোনও বৈঠকই হয়নি অধীর এবং সেলিমের মধ্যে। কিন্তু জোট হয়েছিল। যদিও সেই জোট সিংহভাগ জায়গাতেই জামানত খুইয়েছে। অনেক দিন পর ফের অধীর-সেলিমের দেখা হল বছরের বেস্ট সন্ধ্যায়। কথাও হল। ২০২৬-এর লক্ষ্যে জোট নিয়ে কোনও পরামর্শ হল কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy