ক্লাসে ইংরেজি পড়াচ্ছেন বাইনান বামনদাস হাই স্কুলের সভাপতি। — নিজস্ব চিত্র।
বিজ্ঞানের শিক্ষক নেই বলে স্কুলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে সেই সংক্রান্ত পড়াশোনার পাট চুকেছে। ইংরেজির সবেধন নীলমণি শিক্ষকও অসুস্থ হয়ে দীর্ঘ ছুটিতে। ফলে বন্ধ হতে বসেছিল সেই পঠনপাঠনও। শেষে অভিভাবকদের একাংশ এবং স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের অনুরোধে ক্লাস নিতে শুরু করেছেন স্কুল-সভাপতি, ষাটোর্ধ্ব অশোক ভট্টাচার্য। ইতিহাসের স্নাতকোত্তর ও আইনের ডিগ্রিধারী অশোক রোজ বিনা পারিশ্রমিকে তিনটে করে ক্লাস নিচ্ছেন।
হাওড়ার বাগনানের বাইনানে বামনদাস হাই স্কুলে আপাতত এই ভাবেই চলছে একাদশ-দ্বাদশে ইংরেজির পড়াশোনা। এ ভাবে পড়ানো কি আইনসঙ্গত? জেলা স্কুল পরিদর্শক অজয়কুমার পাল মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “বিষয়টি আমি জানি না। খোঁজ নেওয়ার পরেই বলতে পারব।” তবে অভিভাবকদের একাংশ বলছেন, না হলে তো ওই দুই শ্রেণির পড়াই বন্ধ হয়ে যাবে। পড়ুয়ারা যাবে কোথায়?
সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ এবং আরও নানা কারণে স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যত স্তব্ধ। ফলে আরও অনেক স্কুলের মতোই প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক কম শতবর্ষের বামনদাস হাই স্কুলেও। সব মিলিয়ে প্রায় ১৭০০ পড়ুয়ার জন্য যেখানে ২৭ জন শিক্ষক থাকার কথা, আছেন মোটে ১৩ জন। সঙ্গে চার জন পার্শ্বশিক্ষক ও ন্যূনতম পারিশ্রমিকে নিযুক্ত পাঁচ জন অতিথি-শিক্ষক।
ইংরেজি পড়াতেন দু’জন শিক্ষক। স্কুল সূত্রে খবর, এক জন ছ’মাস আগে বদলি হয়ে যান। অন্য জন অসুস্থতার জন্য তিন মাস ধরে ছুটিতে। ফলে নিচু ক্লাসের পাঠ অন্য শিক্ষক দিয়ে হলেও একাদশ-দ্বাদশে কার্যত পড়া বন্ধ হতে বসেছিল। তখনই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক তপন নায়েক ও অভিভাবকদের একাংশ অশোককে অনুরোধ করেন, তিনিই যেন ইংরেজিটা পড়িয়ে দেন। পরিস্থিতি দেখে রাজি হন অশোক।
অশোক বলছেন, “স্কুল-সভাপতি হিসেবে আমি শিক্ষা দফতরের কাছে বার বার শিক্ষক নিয়োগের আবেদন করেছি।” কেন কিছু হচ্ছে না? জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতরের এক কর্তা জানান, শিক্ষক নিয়োগ করার কথা স্কুল সার্ভিস কমিশনের। তাঁদের কিছু করণীয় নেই। অশোক বলেন, “এক সময়ে চুটিয়ে গৃহশিক্ষকতা করতাম। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছি। পড়াতে অসুবিধা হচ্ছে না।”
অশোক বাইনান অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি। আজ, রবিবার, ২১ জুলাই কলকাতাতেও যাবেন। তবে তাঁর দাবি, “যখন স্কুলে থাকি, পারতপক্ষে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিই না।” স্কুল শেষে যিনি অশোককে মোটরবাইকে করে বাড়িতে পৌঁছে দেন, স্কুলের সেই শিক্ষাকর্মী লালন ঈশ্বর আবার বিজেপি নেতা। লালন বলেন, “স্কুলের যাতে ভাল হয়, সে জন্য দাদার নজরদারির কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy