প্রথমে স্ত্রীকে একের পর এক চড় মারেন, তার পর গলা টিপে মারার চেষ্টা করেন। তাতেও সুবিধা করতে না পারায় শেষে ছুরি দিয়ে স্ত্রী গৌরী অনিল সাম্ব্রেকরকে কোপান বেঙ্গালুরুর তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী রাকেশ রাজেন্দ্র খেড়েকর। অভিযুক্তকে জেরা করে এমনই জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। শুধু তা-ই নয়, গৌরীকে কোপানোর পরেও তিনি জীবিত ছিলেন। সেই অবস্থাতেই তাঁকে ট্রলিব্যাগে ভরেন রাকেশ।
তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, স্ত্রীকে ট্রলিব্যাগে ভরার পর সেটি নিয়ে গাড়িতে করে অন্যত্র ফেলে আসার পরিকল্পনা করেছিলেন রাকেশ। কিন্তু ট্রলিব্যাগ ভারি হয়ে যাওয়ায় সেটি টানতে গিয়ে হাতল ভেঙে যায়। তার পরই ট্রলিব্যাগ নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বদলে ফেলেছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। তার পর ট্রলিব্যাগটিকে টানতে টানতে বাথরুমে নিয়ে যান। সেখানে জল বার হওয়ার জায়গায় ট্রিলব্যাগটিকে রাখেন যাতে রক্ত চুঁইয়ে পড়লে তা পাইপ দিয়ে বেরিয়ে নালায় গিয়ে পড়ে।
তদন্তকারী এক আধিকারিকের দাবি, রাগের বশে নয়, পূর্বপরিকল্পনা করে এবং ঠান্ডায় মাথায় স্ত্রীকে খুন করেন রাকেশ। তিনি বলেন, ‘‘গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে রাকেশ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার নাটক করছেন। কিন্তু আমাদের সন্দেহ অন্য জায়গায়। রাকেশ সম্পূর্ণ সুস্থ। এই ঘটনায় সহানুভূতি আদায়ে অস্বাভাবিক আচরণের ভান করছেন। পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।’’ ওই আধিকারিক আরও জানান, সন্দেহ করা হচ্ছে খুনের পরিকল্পনা করেই স্ত্রীকে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে এসেছিলেন রাকেশ।
ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, রাকেশের শরীরে আঁচড়ের দাগ পাওয়া গিয়েছে। তা থেকে অনুমান করা হচ্ছে, গৌরীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়েছিল। গৌরীর পেটে ছুরি মারায় অত্যধিক রক্তক্ষরণ হয়। তাতে তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়েছিলেন। তখন তাঁকে ট্রলিব্যাগে ভরে দেন রাকেশ। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, ট্রলিব্যাগে যখন গৌরীকে ভরা হয়, তখনও তিনি জীবিত ছিলেন। ঘরে বেশ কয়েক জায়গায় লালা পাওয়া গিয়েছে। জীবিত থাকলেই এই লালা বেরিয়ে আসে মানুষের মুখ থেকে। যদি আগেই মৃত্যু হত, তা হলে এই লালা পাওয়া যেত না বলে দাবি তদন্তকারীদের।
তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছেন, সন্দেহ করা হচ্ছে খুনের পর ঘটনাস্থল ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। তার পর ট্রলিব্যাগটি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন রাকেশ। কিন্তু সেটির হাতল ভেঙে যাওয়ায় বাথরুমে রেখে ঘরে তালা দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান। মুম্বইয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। শহরে ঢোকার আগে ফোন বন্ধ করে দেন। পুণে ঢোকার আগে আবার ফোন চালু করেন। তার পর গৌরীর দাদাকে ফোন করেন। তাঁকে জানান গৌরীকে খুন করে ঘরে রেখে এসেছেন। এ কথা জানিয়ে আবার ফোন বন্ধ করে দেন। বাড়িওয়ালা এবং তার পর এক পড়শিকেও ফোন করে একই কথা জানান রাকেশ। সেই ফোন পেয়েই পুলিশকে খবর দেন তাঁরা। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে প্রথমে কিছুই পায়নি। কিন্তু বাথরুমে নজর পড়তেই তারা দেখে একটি ট্রলিব্যাগ রয়েছে। তা দেখেই সন্দেহ হয় পুলিশের। ট্লিব্যাগ খুলতেই গৌরীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়।