বিশ্বভারতী প্রেস আপাতত বন্ধ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
খাতায়-কলমে এখনও তা চালু। কিন্তু, কাজ হয় না বেশ কয়েক মাস। এ বার পাকাপাকি ভাবেই বন্ধ হতে চলেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে তৈরি শান্তিনিকেতন প্রেস।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক সাতটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে তাদের নিজেদের প্রেস বা ছাপাখানা বন্ধ করতে হবে। তাই শতাব্দী প্রাচীন বিশ্বভারতীর প্রেসও বন্ধ হবে। সূত্রের খবর, ছাপাখানা বিভাগে ম্যানেজার-সহ ৩৯ জন কর্মী ছিলেন। ২০১৮ সালে ছাপাখানার দায়িত্বে থাকা ম্যানেজারকে কলকাতার গ্রন্থন বিভাগে পাঠানো হয়। বাকি কর্মীদেরও একে একে পাঠানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে। ওই বছর শেষের দিকে ছাপার কাজ পুরোপুরি ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্বভারতী একটি নোটিস জারি করে জানিয়েছে, গ্রন্থন বিভাগের ডিরেক্টর অমৃত সেনকে চেয়ারপার্সন করে ১০ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছাপাখানা নিয়ে ৫ আগস্ট বৈঠকও ডাকা হয়েছে। যন্ত্রপাতি এবং বাড়িটি নিয়ে কী করা হবে, তা ওই বৈঠকে ঠিক হবে বলেই জানা যাচ্ছে। এমনকি প্রেসের মেশিনগুলিও নিলাম করা হতে পারে বলে কর্মীমহলে গুঞ্জন। ছাপাখানা বিভাগের এক প্রাক্তন কর্মীর আক্ষেপ, ‘‘বিশ্বভারতী প্রেস অন্য কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপাখানার থেকে অনেক উন্নত। সব মেশিনপত্রই এখনও পর্যন্ত সচল রয়েছে। দীর্ঘদিন এখানে কাজ করেছি। অথচ আজ আমাকে অন্য বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
শান্তিনিকেতন প্রেস নিছক এক প্রেস নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে ঐতিহ্য ও ইতিহাস। বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯১৭-র
৮ জানুয়ারি আমেরিকার নেব্রাস্কা স্টেটের লিঙ্কন শহরে অলিভার থিয়েটারে রবীন্দ্রনাথের বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘ন্যাশনালিজ়ম’। ওই দিনই লিঙ্কনের বাসিন্দারা রবীন্দ্রনাথকে একটি মুদ্রণযন্ত্র উপহার দেন। নাম ‘দ্য লিঙ্কন প্রেস’। উপহারটি মূলত ছিল শান্তিনিকেতনের ছাত্রদের জন্য। যন্ত্রটির গায়ে ধাতুর পাতে খোদাই করা ছিল: ‘প্রেজ়েন্টেড টু দ্য বয়েজ় অব শান্তিনিকেতন’। ১৩২৫-এর আশ্বিন, অক্টোবর ১৯১৮-য় প্রকাশিত হয় শান্তিনিকেতন প্রেসে মুদ্রিত প্রথম বই, রবীন্দ্রনাথের গানের দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের করা স্বরলিপি-সহ সংকলন গীত-পঞ্চাশিকা। তার পরে বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই প্রেস।
কবিগুরুর সেই প্রিয় ছাপাখানা বন্ধের কথা জেনে বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী এবং আশ্রমিকেরা মর্মাহত। প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুরের কথায়, ‘‘রবীন্দ্রনাথের হাতের তৈরি জিনিস এটি। সরকারের উচিত এই ছাপাখানাকে হেরিটেজ ঘোষণা করা।’’ আর এক আশ্রমিক অনিল কুমার কোনার বলেন, ‘‘অন্য কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় রবীন্দ্রনাথের হাতে তৈরি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ আলাদা। সেই ঐতিহ্যকে নষ্ট না করাই দরকার।’’ বিশ্বভারতীর কর্মসমিতির সদস্য সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই প্রেস বিশ্বভারতীর অঙ্গ। বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হয়নি।’’
এ বিষয়ে বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ছুটিতে আছেন। তাই কিছু বলবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy