বাবার কোলে সদ্যোজাত। মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে। ছবি: নারায়ণ দে
পার্থ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার
যমে-মানুষে লড়াই একেই বলে।
একে তো সময়ের আগেই ভূমিষ্ঠ হয়েছিল শিশুটি। জন্মের সময় তার ওজন ছিল অনেকটাই কম। তার উপরে শিশুর মা করোনা পজ়িটিভ। শিশুর শরীরেও করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। সমস্যা এখানেই শেষ নয়। করোনার পাশাপাশি জন্মের সময় থেকেই শিশুটি ‘বার্থ অ্যাসফিক্সিয়া’তেও আক্রান্ত ছিল। স্বাভাবিক ভাবে শিশুটির শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া চালু করতেও চিকিৎসকদের কিছুটা সময় লেগে যায়। এর পর দেখা যায় আরও এক সমস্যা। করোনা সংক্রমণের কারণে শিশুর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে দাঁড়িয়েছে ৭০-এ। ফলে শিশুটির প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। শুরু হয় যমে-মানুষে টানাটানি।
এক সপ্তাহ ধরে সেই টানাটানির পরে অবশেষে জয়লাভ। সদ্যোজাত সাত দিনের শিশুটিকে সুস্থ করে তুলেছেন আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হতে পারেন বলে বিভিন্ন মহলে যখন জোর চর্চা চলছে, তখন জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের এমন সাফল্যে খুশি আলিপুরদুয়ার।
জেলা হাসপাতালের এসএনসিইউ বিভাগে শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক সুনীল পান্না। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সকলের কাছেই শিশুটিকে সুস্থ করে তোলা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ, একে তো শিশুটি করোনা পজ়িটিভ ছিল। পাশাপাশি জন্মের সময় থেকেই আরও অনেকগুলি সমস্যা তার শরীরে দেখা দিয়েছিল। যেগুলি যথেষ্ট ঝুঁকির ছিল। কিন্তু শিশুটি চিকিৎসায় খুব ভাল সাড়া দিচ্ছিল। সে জন্যই আমরা হয়তো দ্রুত তাকে সুস্থ করে তুলতে পারলাম।’’ এসএনসিইউ-এর সিস্টার ইন-চার্জ চিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের বিশ্বাস ছিল শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠবে। তাই কোনও অবস্থাতেই কেউ হাল ছাড়িনি।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুটির বাড়ি দলগাঁওয়ের জয় বীরপাড়া এলাকায়। সময়ের আগেই করোনায় আক্রান্ত শিশুটির মা প্রসব বেদনা নিয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন। গত সপ্তাহের মঙ্গলবার সেখানেই শিশুর জন্ম দেন তিনি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, দু’দিন আগে শিশুটির করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের সুপার চিন্ময় বর্মণ বলেন, ‘‘আমরা তৃতীয় ঢেউয়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। সে ক্ষেত্রে শিশুদের কী করে আরও বেশি সুরক্ষিত রাখা যায়, তা সকলেই ভাবছি। তার আগে এই ঘটনা আমাদের আত্মবিশ্বাস একটু বাড়িয়ে দিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy