যে কোনও বাধা পেরিয়ে তাঁর ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প চালিয়ে নিয়ে যেতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তাঁর সেই সংকল্প শুনে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিলেন রেশন ডিলারদের একাংশের নেতা বিশ্বম্ভর বসু। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা রেশন বণ্টন করেন। সেই কাজ চালিয়েও যেতে চান। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন, তাতে তাঁদের ফেরিওয়ালা হয়ে যেতে হয়। যা তাঁরা একেবারেই চান না। একই সঙ্গে তাঁদের সংযোজন, তাঁরা যে প্রস্তাব দিচ্ছেন, তাতে শুধু তাঁদের নিজেদের নয় সরকারেরও আখেরে ভালই হবে।
বৃহস্পতিবার বিধানসভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন মমতা। সেখানেই দুয়ারে রেশন প্রসঙ্গ উঠতে তিনি বলেন, ‘‘মানুষের জন্য দুয়ারে রেশন প্রকল্প চালু হয়েছিল। মানুষের স্বার্থেই দুয়ারে রেশন চলবে। সরকার কারও গায়ের জোরের কাছে মাথা নত করবে না।’’ মুখ্যমন্ত্রী এ-ও বলেন যে, ‘‘দরকারে বিধানসভার মাধ্যমে আদালতে আবেদন করব।’’ মমতার এই বক্তব্য প্রসঙ্গেই অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলারস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘শুনলাম বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, দুয়ারে রেশনের বিষয়ে তিনি যত দূর যেতে হয় তত দূর যাবেন। আমি রেশন ডিলারদের সংগঠনের তরফে ওঁকে সম্মান জানিয়েই বলছি, আমরা যা বলেছিল তাতে আখেরে রাজ্যের ভালই হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে সেই ‘ভাল’র কথা কেউ জানাননি। তাই হয়তো তিনি বিষয়টি বুঝতে পারছেন না। তা না হলে তিনি অত্যন্ত বাস্তববাদী এবং জনদরদীও।’’ এ ব্যাপারে হাই কোর্টের রায়ের প্রসঙ্গ টেনে বিশ্বম্ভর বলেন, ‘‘আমরা এ ব্যাপারে হাই কোর্টে মামলা করে ডিভিশন বেঞ্চে জিতেছি এবং রাজ্য যে এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে তার রায়ের অপেক্ষাও করছি। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে, দুয়ারে রেশন বেআইনি। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের পরিপন্থী। সেই জন্যই হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ওই রায় দিয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, গত ২৮ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্যের দুয়ারে রেশন প্রকল্পকে ‘বেআইনি’ এবং ‘অবৈধ’ বলে মন্তব্য করেছিলে। হাই কোর্ট বলেছিল, ‘‘আইনের চোখে এই প্রকল্পের কোনও ‘গ্রহণযোগ্যতা নেই’। রাজ্যের দুয়ারে রেশন প্রকল্প অবৈধ।’’ হাই কোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে রাজ্য। বিশ্বম্ভর সেই মামলার কথাই উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে বলেছেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম রাজ্য সরকারের যে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তাতে কিছুটা খরচ বাঁচাতে। মাসে ৫২ কোটি টাকা করে খরচ বাঁচত সরকারের। সেটা হয়তো কেউ মাননীয়াকে জানাননি। উনি অত্যন্ত বাস্তববাদী এবং জনদরদী মানুষ। আমি নিশ্চিত, উনি এটা জানলে বিষয়টি ভেবে দেখতেন। আমরা রেশন বণ্টন করতে চাই ফেরিওয়ালা হতে চাই না।’’