তনুকা সেনগুপ্ত। নিজস্ব চিত্র
সোঁদা মাটির মানুষের দুঃখে পাশে দাঁড়ালেন লালমাটির তনুকা সেনগুপ্ত।
ঝাড়গ্রাম শহরের এই ঘরণী সংসার খরচ বাঁচিয়েই দেড় দশক আগে শুরু করেছিলেন সমাজসেবা। পাশে পেয়েছিলেন স্বামী বিশ্বজিৎকেও। কয়েকজন সম-মনোভাবাপন্নকে নিয়ে এত দিন জঙ্গলমহলের মানুষের জন্য কাজ করছেন। এ বার ‘ইয়াসে’ ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনের কুমিরমারি, ঘোড়ামারা, নামখানার ঈশ্বরীপুর এলাকার সাড়ে ছ’শো বাসিন্দার জন্য নানা খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়েছেন তনুকা। তাঁকে সহযোগিতা করেছেন কলকাতার বাসিন্দা সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা পাপিয়া সেন ভট্টাচার্য। পাপিয়া ওই সব এলাকায় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির ক্ষতিগ্রস্ত ১৬০টি পরিবারের কাছেও পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়েছেন তনুকা। তিনি বলছেন, ‘‘আমিও যেতে পারতাম। ঝাড়গ্রাম থেকে হাজার পাঁচেক টাকায় গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া যেত। কিন্তু সেই খরচটাও বাঁচিয়ে আরও বেশি মানুষকে সাহায্য পাঠাতে পেরেছি।’’
ঝাড়গ্রাম শহরের কদমকাননের বাসিন্দা তনুকা সেবামূলক কাজ শুরু করেছিলেন নিজের এলাকা থেকেই। বছর পনেরো আগে বাড়ির উঠোনেই শুরু করেন ছক ভাঙা অবৈতনিক শিক্ষাদান। গড়ে তুলেছেন ‘সবুজপ্রাণ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানও। স্কুলছুটদের স্কুলে ফেরানো, শবর শিশুদের স্কুলমুখী করা, প্রত্যন্ত এলাকার শিশুদের বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, শিক্ষা সহায়ক সামগ্রী বিলির মতো নানা কাজের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন তনুকা। নানা জনের থেকে পুরনো পোশাক চেয়ে এনে নিজের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ‘বস্ত্র ব্যাঙ্ক’ও। সেই সব পোশাক কেচে ইস্ত্রি করে তিনি পৌঁছে দেন জঙ্গলমহলের বিভিন্ন প্রান্তে অভাবী মানুষের কাছে। গত বছর করোনার লকডাউনের সময়ে বেলপাহাড়ি, লালগড়, জামবনির প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন খাদ্যসামগ্রী। চলতি বছরেও
সাধ্য মতো খাদ্যসামগ্রী বিলির কাজ করে চলেছেন। তনুকা বলেন, ‘‘ঘর-সংসার সামলে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে আমার স্বামীর পূর্ণ সমর্থন ছিল। পরে আরও কয়েকজনকে পেয়ে গেলাম। এ ভাবেই জেলাটাকে চিনেছি। কত মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে।’’
করোনা আবহের আগে পর্যন্ত প্রতি বছর পুজোর সময়ে জেলার প্রত্যন্ত এলাকার শিশুদের খাওয়ানো-সহ গাড়িতে মণ্ডপ ও প্রতিমা দর্শনেরও ব্যবস্থা করেছেন তনুকা। এখন তাঁর কর্মকাণ্ডে বিশ্বজিতের পাশাপাশি, অনুদান-সাহায্য করছেন প্রতিষ্ঠানের সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীরাও। বিশ্বজিৎ-তনুকার একমাত্র মেয়ে ত্রিজিতা কলকাতার বিদ্যাসাগর স্কুল অফ সোশ্যাল ওয়ার্ক থেকে সমাজকল্যাণে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স অফ সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার) পড়ছেন। ত্রিজিতাও বলছেন, ‘‘পড়াশোনা শেষ করে মায়ের কাজের পাশে দাঁড়াতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy