Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

খাবার ফেললেই দিতে হবে ২০ টাকা

আলিপুরদুয়ার শহরের থানা মোড়ে একাধিক খাবারের হোটেল রয়েছে। যে হোটেলগুলিতে দিনভর সরকারি কর্মী, ব্যবসায়ী কিংবা বিভিন্ন দোকানের কর্মীদের অনেকেই খাওয়া-দাওয়া করেন।

জরিমানা: এই নোটিস ঝুলছে হোটেলে। নিজস্ব চিত্র

জরিমানা: এই নোটিস ঝুলছে হোটেলে। নিজস্ব চিত্র

পার্থ চক্রবর্তী 
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৫০
Share: Save:

জার্মানির লোকজন অনেক দিন ধরেই জানেন, হোটেলে বাড়তি খাবার নিয়ে নষ্ট করলে গুনাগার দিতে হবে। তেলঙ্গানার একটি রেস্তোরাঁতেও একই নিয়ম চালু হয়েছে। এ বারে আলিপুরদুয়ার শহরের মোড়েও একই কাণ্ড। সেখানে অতিরিক্ত ভাত, ডাল, আনাজ নিলে বাড়তি টাকা গোনার প্রয়োজন নেই। কিন্তু সেই খাবার এতটুকু নষ্ট করা যাবে না। তখনই খাবারের দামের সঙ্গে জরিমানা হিসেবে গুনতে হবে অতিরিক্ত ২০ টাকা। খাবার অপচয় বন্ধ করতে গত দু’সপ্তাহ ধরে এই নিয়ম চালু হয়েছে আলিপুরদুয়ার শহরের থানা মোড়ের হোটেলটি। ফলও মিলেছে হাতে-নাতে। হোটেল কর্তৃপক্ষের দাবি, চার-পাঁচ জনের থেকে জরিমানা আদায়ের পর এখন হোটেলে খাবার অপচয় অনেকটাই কমে গিয়েছে।

আলিপুরদুয়ার শহরের থানা মোড়ে একাধিক খাবারের হোটেল রয়েছে। যে হোটেলগুলিতে দিনভর সরকারি কর্মী, ব্যবসায়ী কিংবা বিভিন্ন দোকানের কর্মীদের অনেকেই খাওয়া-দাওয়া করেন। ২০১৩ সালে সেখানেই ছোট্ট একটি হোটেল ভাড়া নেন শহরের উদয়ন বিতান এলাকার বাসিন্দা ৩২ বছরের রণজিৎ দে।

নিজের হোটেল চালানোর অভিজ্ঞতা থেকে নানা সময় পথশিশু থেকে শুরু করে ফুটপাতে বাস করা অনেকেই যে খিদে মেটাতে তাঁর কাছে আসেন, তা বহুবার দেখেছেন রণজিৎ। এ-ও দেখেছেন, অনেকেই তাঁর হোটেলে খেতে এসে খাবারের অপচয় করেন। রণজিতের কথায়, “কত মানুষ আছেন, যারা দিনের পর দিন অভুক্ত অবস্থায় থাকেন। অনাহারে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। আবার অনেকে সেই খাবারই যথেচ্ছ পরিমাণে নষ্ট করেন।”

তাই নিজের হোটেলে খাবার নষ্ট বন্ধে উদ্যোগী হন রণজিৎ। থানা মোড়ের আর পাঁচটি হোটেলের মতো তাঁর হোটেলেও খাবার ‘মিল সিস্টেমে’ দেওয়া হয়। অর্থাৎ, যে কেউ মাছ, মাংস, ডিম বা নিরামিষ খান না কেন, পরে অতিরিক্ত ভাত, ডাল বা আনাজ চাইলে বাড়তি টাকা দিতে হবে না। কিন্তু তা বলে খাবার অপচয়? এই নিয়ে অনেক দিন ধরেই তিনি খদ্দেরদের মধ্যে প্রচার চালাচ্ছেন।

রণজিৎ দাবি করলেন, “খদ্দেরদের অনেকবার বলেও কোনও কাজ হচ্ছিল না।” এর পরই তিনি অপচয়ে করলে কুড়ি টাকা ‘জরিমানা’ করার সিদ্ধান্ত নেন। সপ্তাহ দুয়েক আগে সেই নোটিস সাঁটিয়েও দেন দোকানের দেওয়ালে।

রণজিৎ জানেন না, জার্মানিতে এই জরিমানা ৫০ ইউরো। তেলঙ্গানার রেস্তোরাঁটিতে ৫০ টাকা। সেখানে আবার খাবার চেটেপুটে শেষ করলে ১০ টাকার পুরস্কারও আছে। কেন এই জরিমানা? সকলের একটাই যুক্তি: টাকা তোমার, কিন্তু খাবার বানাতে যে সব উপাদান লাগে, তা সমাজ সমষ্টিগত চেষ্টায় উৎপাদন করে। আর পৃথিবীতে অনেক মানুষ না খেয়ে বা আধপেটা খেয়ে থাকে। তাই সেই খাবার নষ্ট করার অধিকার নেই তোমার।

রণজিৎও একই কারণে অপচয় রোধে নেমেছেন। তাঁর ‘নির্দেশ’ না শুনে খাবার নষ্ট করায় এই দুই সপ্তাহে চার-পাঁচ জনকে জরিমানা দিয়ে হয়েছে। জরিমানা চাইতেই যাদের কারও কারও সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন রণজিৎ। তবু তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অনড়।

তাঁর সাফ কথা, “খাবার অপচয় করার জন্য যাঁদের থেকে জরিমানা নিচ্ছি, তাঁদের অনেকেই হয়তো আমার দোকানে আর আসবেন না। কিন্তু একবার জরিমানার মুখে পড়ে তাঁদের খাবার নষ্ট করার প্রবণতা কমবে, আমি নিশ্চিত।”

আর রণজয়ের উদ্দেশ্যটা তো সেটাই।

অন্য বিষয়গুলি:

Fine Wasting Food Hotel Alipurduar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy