(বাঁ দিকে) বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা সেই হার্দিক হাসপাতাল। প্রয়াত মৌসুমী দে (ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকারের চিকিৎসক-পুত্রের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির মামলা করল পুলিশ। সুভাষের পুত্র সোমরাজ সরকার এক জন স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ এবং শল্য চিকিৎসক। অভিযোগ, চিকিৎসক সোমরাজের গাফিলতিতেই গত মাসে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। এ ব্যাপারে মৃতার স্বামী পুলিশে অভিযোগ করেছিলেন। সেই অভিযোগকে এফআইআর হিসাবে গ্রহণ করে মামলার তদন্ত শুরু করল রাজ্যের পুলিশ।
বাঁকুড়ায় ‘মন্ত্রী সুভাষের পরিবারের হাসপাতাল’ বলে পরিচিত হার্দিক হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা করেন সোমরাজ। হাসপাতালের গেটে ঝোলানো রয়েছে তাঁর নামের বোর্ড-সহ চিকিৎসার ডিগ্রিও। গত মার্চে এই হাসপাতালেই সন্তানপ্রসবের জন্য ভর্তি হওয়া এক ২৬ বছরের তরুণীর শারীরিক অবনতি হওয়ার পর অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় চিকিৎসক সোমরাজের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও দেখান এলাকার মানুষ। ভাঙচুর চালান হাসপাতালে। এর আগেও এলাকার মানুষ ভাঙচুর চালিয়েছিলেন হাসপাতালে। সম্প্রতিই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এই ঘটনায় কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছিল বাঁকুড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর। তার পরে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানো হয় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরেও। এর পরই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষের পুত্রের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করে পুলিশ।
সুভাষ কেন্দ্রের শিক্ষা মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী। গত বছরের লোকসভা ভোটে বাঁকুড়া আসন থেকে বিজেপির টিকিটে জিতেছিলেন। এ বছরও তাঁকেই বাঁকুড়ার প্রার্থী করেছে বিজেপি। লোকসভা ভোটের মুখে সুভাষের পুত্র সোমরাজের বিরুদ্ধে মামলা শুরু হওয়ায় বাঁকুড়ার রাজনীতিতে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
পুলিশের এফআইআরে বলা হয়েছে, গত ২১ মার্চ ওই প্রসূতির চিকিৎসা কী ভাবে হয়েছিল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে হাসপাতালের বক্তব্যে। যেখানে হাসপাতালের নার্স এক রকম কথা বলছেন, সেখানে কাগজের নথি বলছে অন্য রকম। এ ছাড়াও মিলেছে গাফিলতির প্রমাণ। তদন্তে জানা গিয়েছে প্রসবের ১৩ ঘণ্টা পর প্রসূতিকে দেখতে আসেন অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক। তা-ও তাঁর শারীরিক অবনতির খবর পাওয়ার পর। চিকিৎসক সোমরাজের বিরুদ্ধে তাঁর চিকিৎসকের ডিগ্রির অপব্যবহারেরও অভিযোগ করা হয়েছে এফআইআরে। বলা হয়েছে, অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও ওই হাসপাতালে প্রসূতিদের গর্ভপাত করানো হত। প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসা এমনই নানা বিষয় নিয়ে বিশদে জানতে পরবর্তী তদন্ত এগোবে বলে লেখা হয়েছে ওই এফআইআরে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ মার্চ বাঁকুড়া শহরের কামারপাড়া এলাকার মৌসুমী দে নামের এক প্রসূতি প্রসবযন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হন বাঁকুড়ারই থানাগোড়া এলাকার ওই বেসরকারি হাসপাতালে। ওই দিন সকালেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক কন্যাসন্তানের জন্মও দেন তিনি। মৌসুমীর স্বামীর অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের পর তাঁর স্ত্রীকে দেখে সোমরাজ এবং অন্য চিকিৎসকেরা জানান, তিনি ভাল আছেন। অথচ কয়েক ঘণ্টা পরেই হঠাৎ মাত্রাছাড়া রক্তপাত হতে শুরু করে মৌসুমীর। রক্তচাপও নেমে আসে ৭০/৪০-এ। এই ঘটনার খবর পাওয়ার পর রাত ১১টা ৪০ মিনিটে চিকিৎসক সোমরাজ রোগীকে দেখতে আসেন। তার পরেও চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয়। দেরি হয় প্রসূতিকে রক্ত দিতেও। ক্রমে শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু হওয়ায় মৌসুমীকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয় হার্দিক হাসপাতাল থেকে। এর পরে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন ২৫ মার্চ মৃত্যু হয় তাঁর। পরে ময়নাতদন্তে জানা যায়, শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যু হয়েছে মৌসুমীর।
এর পরই এই ঘটনায় চিকিৎসক সোমরাজ এবং হার্দিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা এবং চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেন মৌসুমীর স্বামী তন্ময় দে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের আর্জিও জানান। অন্য দিকে বিষয়টিকে ইস্যু করে রাস্তায় নামে তৃণমূলও। মৃতের পরিবারের সঙ্গে বিক্ষোভে শামিল হতে দেখা যায় বাঁকুড়ার পুরপ্রধান অলকা সেন মজুমদার থেকে শুরু করে বহু তৃণমূল নেতাকেই। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে স্বাস্থ্য দফতর। সম্প্রতি ঘটনার তদন্ত করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে রিপোর্ট পেশ করে বাঁকুড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এরপরই মৃতার স্বামীর অভিযোগকে এফআইআর হিসাবে গ্রহণ করে মামলা রুজু করে পুলিশ ।
তবে অভিযোগ উঠলেও এ ব্যাপারে অভিযুক্ত চিকিৎসক সোমরাজের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বাঁকুড়ার বিজেপি প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষও বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। হার্দিক হাসপাতালের সিইও শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘এফআইআরের কথা আমরা জানতাম না। সংবাদমাধ্যমের কাছেই প্রথম খবরটা পাই। এর আগে ঘটনা সম্পর্কে স্বাস্থ্য দফতর আমাদের কারণ দর্শাতে বলেছিল। আমরা তার উত্তরও পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।’’ অন্য দিকে, বাঁকুড়ার তৃণমূল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে বার বার ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসায় গাফিলাতির অভিযোগ ওঠে। এমনটা হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। তাই আইন আইনের পথে হেঁটেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy