কাজে ব্যস্ত গৌরাঙ্গবাবু। নিজস্ব চিত্র
দুপুরে পাড়ে দড়ি দিয়ে নৌকা বাঁধছিলেন তিনি। দেখে বোঝার উপায় নেই, কয়েক ঘণ্টা আগেই যাত্রীর প্রাণ বাঁচাতে নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ভাগীরথীতে। কাটোয়ার বল্লভপাড়ার বাসিন্দা গৌরাঙ্গ রাজোয়ার এ নিয়ে তিন বার বাঁচালেন নৌকা থেকে ঝাঁপ দেওয়া যাত্রীদের। তাতে অবশ্য বিশেষ কৃতিত্বের কিছু দেখেন তিনি নিজে। এ দিন যেমন নৌকার পাটাতন সরাতে-সরাতে বলেন, ‘‘এ আর এমন কী! ডুবন্তকে তো বাঁচাতে হবেই।’’
শনিবার সকালে কাটোয়ায় ফেরিঘাট থেকে বল্লভপাড়াগামী নৌকায় চেপে মাঝ নদীতে ঝাঁপ দেন বহরমপুরের বৃদ্ধা কল্পনা ঘোষ। ঝাঁপ দেওয়ার আওয়াজ পাওয়া মাত্র জলে নেমে পড়েন বছর আটান্নর গৌরাঙ্গবাবু। প্রথমে সাঁতরে গিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কল্পনাদেবী সাড়া দিচ্ছেন না দেখে লাইভ সেভিং টিউব ছুড়তে বলেন জলে ঝাঁপানো আর এক মাঝি, বছর কুড়ির পল্টু হালদারকে। কল্পনাদেবী ওই টিউব ধরলে তাঁকে টেনে নৌকায় তোলেন গৌরাঙ্গবাবু।
গৌরাঙ্গবাবু জানান, বছর পাঁচেক আগে দুই সন্তানকে নিয়ে গঙ্গায় ঝাঁপ দেওয়া এক বধূকে বাঁচাতে জলে নেমেছিলেন। বছর দেড়েকের একটি শিশুকে বাঁচাতে না পারলেও উদ্ধার করেন ওই নদিয়ার বড়আটারির বাসিন্দা ওই বধূ ও এক সন্তানকে। এই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে রাজ্য সরকারের তরফে দশ হাজার টাকা পুরস্কার পান তিনি। দু’হাজার টাকা পুরস্কার দেন তৎকালীন জেলা পুলিশ সুপারও। গত বছর ঘোষহাটের বাসিন্দা আর এক মহিলাকে একই রকম ভাবে জল থেকে তুলে আনেন তিনি।
ঘাটের ইজারাদার অশোক সরকার এ দিন বলেন, ‘‘গৌরাঙ্গবাবুর কোনও তুলনা নেই।’ ’পল্টু বলেন, ‘‘গৌরাঙ্গদার কাছেই শিখেছি, মানুষের প্রাণের মূল্য কতটা। তাই আজ ওঁর কথায় আমিও জলে নেমে পড়ি।’’
এই ঘাটেই দিন দুয়েক আগে ৯ মাসের মেয়েকে নিয়ে ভাগীরথীতে ঝাঁপ দেন মন্তেশ্বরের এক বধূ। তাঁদের উদ্ধার করেন মাঝি মনিরুল শেখ ও কালো শেখ। এ দিন ফের একই রকম ঘটনা ঘটল। কাটোয়ার মহকুমাশাসক সৌমেন পাল মাঝিদের এমন ভূমিকার প্রশংসা করেন। গৌরাঙ্গবাবুর স্ত্রী তুলসীদেবী বলেন, ‘‘প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ওঁর এই সাহস যেন আজীবন থাকে, সেটুকুই প্রার্থনা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy