পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন পরিবহণ নিগমে কর্মী স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের দ্বিতীয় দফার প্রক্রিয়া শুরু হল। পরিবহণ দফতরের খবর, এই পর্বে রাজ্যের চারটি পরিবহণ নিগমের সাড়ে আটশো কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এঁদের সকলকে আগাম অবসর দেওয়া গেলে রুগ্ণ নিগমগুলি স্বনির্ভরতার পথে অনেকটা এগোতে পারবে প্রশাসকদের আশা। দ্বিতীয় পর্যায়ের এই স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে সরকারের প্রায় প্রায় ১৭০ কোটি টাকা খরচ হবে।
দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি আপাতত অর্থ দফতরের অনুমোদনের অপেক্ষায়। “তাদের সবুজ সঙ্কেত পেলে আগামী অর্থবর্ষে (২০১৫-১৬) দ্বিতীয় দফার স্বেচ্ছাবসর চালু হয়ে যাবে।’’ বলেন তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রাজ্যের শাসনক্ষমতায় এসে ঠিক করেছিল, ভর্তুকির খুঁটি সরিয়ে সরকারি পরিবহণকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর চেষ্টা হবে। নিগমগুলোর অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা লাঘবের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাবসর চালু করারও সিদ্ধান্ত হয়। অবসর নিতে ইচ্ছুক, পঞ্চাশোর্ধ্ব এমন ৮২৩ জন কর্মীকে প্রথম দফায় প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছিল। ওঁদের মধ্যে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি)-এরই ৫৮১ জন। সেই সঙ্গে কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (সিএসটিসি), কলকাতা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি) এবং দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এসবিএসটিসি)-এর যথাক্রমে ৬২, ৬০ ও ১২০ জন স্বেচ্ছায় আগাম অবসর নেন। এর পিছনে সরকারের খরচ হয়েছিল প্রায় ১৩৩ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় পর্যায়ে রাজ্যের চারটি সরকারি পরিবহণ নিগমের পঞ্চাশোর্ধ্ব ৮৫০ কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার পরিকল্পনা। পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এ বারও সংখ্যার নিরিখে তালিকার শীর্ষে এনবিএসটিসি। ওই নিগমের ৩৫০ জনকে স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হবে। সিএসটিসি এবং সিটিসি’তে দেওয়া হবে দু’শো জন করে কর্মীকে। আর এসবিএসটিসি-র ১০০ জন এই দফায় প্রকল্পের আওতায় আসছেন। এ দফায় মোট খরচ ধরা হয়েছে অন্তত ১৬৭ কোটি। তার ৮৭ কোটিই যাবে এনবিএসটিসি’র স্বেচ্ছাবসর খাতে।
পরিকল্পনাটির সফল রূপায়ণ হলে নিগমগুলোর আর্থিক দুরবস্থা অনেকটা কাটবে বলে পরিবহণ-কর্তারা আশাবাদী। এক কর্তার কথায়, “পঞ্চাশের বেশি যাঁদের বয়স, তাঁদের অনেকেই অবসর নিতে আগ্রহী। ওঁদের সম্মানের সঙ্গে বিদায় জানানো হবে।” প্রসঙ্গত, কর্মীদের তরফে প্রাথমিক ভাবে খুব একটা সাড়া না-পেয়ে সরকার ‘বিদায় প্যাকেজ’-এর টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দফতর-সূত্রের খবর: সংশ্লিষ্ট কর্মীরা অবসর প্যাকেজের সঙ্গে বকেয়া বেতন, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ও অর্জিত ছুটির বিনিময়ে প্রাপ্য টাকাও পাবেন। তাতে কর্মী মহলে যথেষ্ট আগ্রহ দেখা দিয়েছে বলে দফতর-সূত্রের দাবি। কর্মীদের একাংশেরও বক্তব্য, নিগমগুলোর হাল দেখে অনেকেই আর থাকতে চাইছেন না। “ঠিকঠাক মাইনে পাচ্ছি না, পিএফের টাকা জমা পড়ছে না। এর চেয়ে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে চলে যাওয়াই তো ভাল!” মন্তব্য এনবিএসটিসি’র এক কর্মীর।
ইউনিয়নগুলোর কী প্রতিক্রিয়া?
বিরোধী ইউনিয়নের নেতারা অবশ্য সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। সিটু’র সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মতো পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চায়। যে কারণে স্বেচ্ছাবসরের পাশাপাশি বাস চালানো ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হচ্ছে।” সরকার কী বলে?
বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তিনি বলেন, “পরিবহণ ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের কোনও ভাবনা সরকারের নেই। বরং গত ক’মাসে হাজারেরও বেশি নতুন বাস কেনা হয়েছে। সরকারি পরিবহণের গুরুত্ব বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।” মন্ত্রীর দাবি, “নিগমের কোনও কর্মীকে অবসর নিতে জবরদস্তি করা হচ্ছে না। যাঁরা রাজি, প্রাপ্য-সহ সম্মানের সঙ্গে আমরা তাঁদের বিদায় জানাতে চাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy