Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Education

আট ‘দাদা’র পকেট-খরচে জোড়া পাঠশালা

এলাকার কিছু  যুবক-যুবতীকে সাম্মানিক দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়রের আট জন।

কলাইডাঙায় চলছে পাঠশালা। নিজস্ব চিত্র

কলাইডাঙায় চলছে পাঠশালা। নিজস্ব চিত্র

তারাশঙ্কর গুপ্ত
পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৫৭
Share: Save:

কেউ বি-টেক, কেউ স্নাতকোত্তরের ছাত্র, কেউ চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। করোনা আবহে দুঃস্থ বাচ্চাদের বাড়ির পড়ায় সাহায্য করতে নিজেদের পকেট-খরচের টাকায় তাঁরাই খুলেছেন দু’টি পাঠশালা। এলাকার কিছু যুবক-যুবতীকে সাম্মানিক দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়রের আট জন। বিডিও প্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুঃস্থ পড়ুয়াদের জন্য এ সাহায্য অনেকখানি। ওঁদের প্রশংসা করতেই হবে।’’

পাত্রসায়রের বাসিন্দা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পড়ুয়া কৃশানু ভট্টাচার্য, বি-টেক পড়ুয়া শৌভিক মুখোপাধ্যায়েরা বলেন, ‘‘আট বন্ধু জেলার বাইরে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে বুঝতে পারি, গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য কতটা লড়াই করতে হয়। তুলনায় শহরের ছেলেমেয়েরা অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে এগিয়ে থাকে। তখনই ঠিক করি, গ্রামের পড়ুয়াদের জন্য কিছু করব।’’ সে ইচ্ছে থেকেই গত সরস্বতী পুজোয় বই-খাতা বিলি করতে আট জন গিয়েছিলেন পাত্রসায়রের আদিবাসী গ্রাম কলাইডাঙায়। সেখানে অভিভাবক খোকন কিস্কু, সজল হেমব্রম বলেন, ‘‘ওঁদের বলেছিলাম, ‘এক দিন বই দিলেই হবে না। বাচ্চাদের পড়ানোর হাল ধরুন’। আমাদের অনেকে পড়াশোনা জানে না। রোজগারও তত নয়, যে টিউশনে দেব।’’ তখনই ওই আট জন ওই গ্রামে পাঠশালা খুলবেন বলে ঠিক করেন।

শৌভিকদের সঙ্গী চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া স্বরূপকুমার চন্দ্র, কলেজ পড়ুয়া কৌশিক ঘোষাল বিশ্বজিৎ দত্ত, সন্দীপ মাইতি, শুভজিৎ মিত্র, ডি ফার্মের পড়ুয়া দেবাশিস রায়েরা বলেন, ‘‘বাচ্চাগুলোকে পড়ানোর সময় আমরা দিতে পারব না। তাই এলাকার যে সব যুবক-যুবতী নিজেদের পড়ার খরচ চালাতে টিউশন দেন, তাঁদের মধ্যে ছ’জনকে বেছেছি। গ্রামবাসীর দেওয়া ঘরে ১২ জুন থেকে পাঠশালা খোলা হয়।’’

পাঠশালায় রোজ সকালে প্রাক প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের কী ভাবে পড়াশোনায় উৎসাহ দিতে হবে, সে জন্য সপ্তাহে এক দিন অভিভাবকদেরও ‘ক্লাস’ নেওয়া হয়। আট বন্ধু জানান, তাঁদের এই উদ্যোগে তাঁদের বন্ধু ও শিক্ষকদের অনেকে অর্থ সাহায্য করছেন। ১ সেপ্টেম্বর পাত্রসায়রের কালঞ্জয় মন্দিরের কাছে আরও একটি পাঠশালা শুরু হয়েছে।

দু’টি জায়গা মিলিয়ে জনা ৬০ ছাত্রছাত্রী পড়ছে। আট ‘দাদা’র দেওয়া মাস্ক পরে, দূরত্ববিধি মেনে ক্লাস করছে তারা। কলাইডাঙার পড়ুয়া সপ্তম শ্রেণির সকুল কিস্কু বলে, ‘‘আগে ইংরেজিতে নিজের নাম, বাবার নাম লিখতে বানান ভুল করতাম। পাঠশালায় এসে ঠিক বানান লিখতে শিখেছি।’’ পঞ্চম শ্রেণির উর্মিলা টুডু জানায়, তার অঙ্কের ভয় কেটেছে। পঞ্চম শ্রেণির রামকৃষ্ণ হেমব্রমের কথায়, ‘‘স্যরেরা পড়ানোর ফাঁকে ভাল মানুষ হতে বলেন।’’

কলাইডাঙার ছেলেমেয়েরা মূলত পুদুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাত্রসায়র বামিরা জিডি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। দুই স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীনেশ নন্দী ও রঘুনাথ দে বলেন, ‘‘ওই আট জনের এই চেষ্টায় এলাকার বাচ্চাদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

education patrasayar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy