Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Furfura Sharif

ফুরফুরার উন্নয়নে নজর নবান্নের, বরাদ্দ হল ৫৮ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা, তৈরি হবে মুসাফিরখানাও

পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের ইসলাম ধর্মালম্বীদের কাছে হুগলি জেলার ফুরফুরা পবিত্র তীর্থস্থান। সেখানকার পিরজাদা তথা হুজুরদের ঘিরে আবেগও তেমনই। সারা বছর রাজনীতিকদেরও যাতায়াত লেগে থাকে হুগলির এই জনপদে।

Furfura Sharif

হুগলির ফুরফুরা শরিফ। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৩ ১৩:৩৬
Share: Save:

হুগলির ফুরফুরা শরিফের উন্নয়নকল্পে সাড়ে ৫৮ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ফুরফুরার উন্নয়নে মোট ৬২ লক্ষ ৮৯ হাজার ৪৯২ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ফুরফুরা শরিফ উন্নয়ন পর্ষদের মাধ্যমে ওই অর্থ খরচ করা হবে। বৃহস্পতিবার বিধানসভার অধিবেশনে ফিরহাদ এ কথা বলার পর ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা তথা ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি প্রশ্ন তোলেন, ফুরফুরা উন্নয়ন পর্ষদের অফিস কোথায়? জবাবে ফিরহাদ বলেন, ‘‘এখনও কোনও অফিস আমরা পাইনি। ওখানে একটা পরিত্যক্ত জায়গা পাওয়া গিয়েছে। সেখানেই অফিস হবে। ফুরফুরা শরিফের গেটের পাশে যে জমি রয়েছে সেখানেই অফিস, মুসাফিরখানা হবে। আপাতত শ্রীরামপুরে মহকুমা শাসকের অফিস থেকে কাজ চলবে।’’

পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ইসলাম ধর্মালম্বীদের কাছে ফুরফুরা পবিত্র তীর্থস্থান। সেখানকার পিরজাদা তথা হুজুরদের ঘিরে আবেগও তেমনই। সারা বছর রাজনীতিকদেরও যাতায়াত লেগে থাকে হুগলির জাঙ্গিপাড়া ব্লকের এই জনপদে। অনেকেই মনে করেন, বিভিন্ন দলের রাজনীতিকদের ফুরফুরায় যাওয়ার পিছনে সংখ্যালঘু ভোটের অঙ্ক থাকে। বামজমানা থেকেই তা চলে আসছে। একটা সময়ে হুগলির প্রয়াত সিপিএম নেতা সুনীল সরকার দলের তরফে ফুরফুরার সঙ্গে ‘সমন্বয়’ রাখতেন।

২০০৮ সাল থেকে ছবিটা বদলাতে শুরু করে। ফুরফুরার পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকির সঙ্গে তৃণমূলের তৎকালীন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সম্পর্ক এবং ঘনিষ্ঠতা রাজ্য রাজনীতিতে সুবিদিত ছিল। সেই সময়ে ঔপচারিকতা সারতে অন্য দলের নেতারা গেলেও ফুরফুরা কার্যত তৃণমূলের হয়ে গিয়েছিল বলেই জানতেন রাজনীতির কারবারিরা। ফুরফুরা শরিফ উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করা হয়। তার চেয়ারম্যান করা হয় ফিরহাদকে। সেটাই চলছিল। ত্বহা মাঝেমাঝে ‘বিদ্রোহী’ হতেন। আবার চুপও করে যেতেন। তবে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে থেকে সেই সমীকরণে কিছুটা বদল আসে। অনেকের মতে, তৃণমূল খানিকটা বিপাকে পড়েছিল আব্বাস সিদ্দিকি এবং নওশাদের আগমনে। ভাঙড়ে নওশাদের জয় পরিস্থিতি আরও খানিকটা ঘোরালো করেছিল। অনেকের অভিমত, সেই কারণেই একদা নওশাদদের কথা বলতে গিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের নেতা তথা সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসির উদাহরণ টেনেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সাগরদিঘি উপনির্বাচনের পরে ফুরফুরা শরিফের উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান বদল করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ফিরহাদকে সরিয়ে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয় সপ্তগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্তকে। মমতাই সরকারে এসে ফুরফুরা উন্নয়ন পর্ষদ তৈরি করেছিলেন। যেমন করেছেন তারকেশ্বরের ক্ষেত্রেও। অনেকের মতে, অতীতেও ফুরফুরা শরিফে হুজুরদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন ছিল। ত্বহার উল্টো সুরে চিরকাল কথা বলে এসেছেন ইব্রাহিম সিদ্দিকি। কিন্তু সেই বিভাজন শাসকদলকে কখনও ‘বিড়ম্বিত’ করেনি। নওশাদদের ‘উত্থানে’ সেই বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে।

হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর এবং মালদহ, মুর্শিদাবাদের বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে ফুরফুরার প্রভাব রয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন। লোকসভা ভোটের আগে ফুরফুরা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হয়ে উঠবে নানা অঙ্কে। সে দিক থেকে ফুরফুরার উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দের কথা বিধানসভায় মন্ত্রীর জানানোও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE