শ্যামনগরের বাসুদেবপুরে রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
রাস্তায় রাস্তায় এখন স্বয়ংক্রিয় সোডিয়াম ভেপার আর এলইডি আলো।
বাসিন্দাদের পরিস্রুত পানীয় জল দিতে তত্পর পুরসভা।
কাঁচা নর্দমা পাকা হচ্ছে।
সংস্কার হচ্ছে গঙ্গার ঘাটগুলি।
শ্যামনগর জুড়ে এখন ঢালাও উন্নয়নের কাজ চলছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি এতটুকুও। চটকল ছাড়াও বহু কারখানা রয়েছে এ শহরের বুক জুড়ে। শহরের প্রধান রাস্তা ঘোষপাড়া রোড সব সময় যানজটে নাজেহাল। প্রশাসনিক দিক থেকে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের মধ্যে রয়েছে এই শহর। ব্যস্ত রাস্তায় ট্রাফিক ব্যবস্থা চোখে পড়ার মতো বিন্দুমাত্রও নেই। জগদ্দল ও নোয়াপাড়া থানার মাঝখানে থাকা এই শহরের আইনকানুন সামলানোর দায়িত্বও দুই থানার। তার মধ্যে জগদ্দলের অংশই বেশি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জগদ্দলের আইসি সাসপেন্ড হয়ে আছেন। নতুন আইসিও নিয়োগ হয়নি। ফলে, এলাকায় চুরি, বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্ম চলছে রমরমিয়েই।
সম্প্রতি বাসুদেবপুর মোড়ে সোনার দোকান থেকে গয়না-সহ সিসিটিভির গোটা যন্ত্রাংশই উপড়ে নিয়ে গিয়েছিল চোরেরা। তার কিনারা হয়নি এখনও। গত তিন মাসে এ ছাড়াও একাধিক খুনের ঘটনায় পুরবাসীর আতঙ্ক এখনও কাটেনি। শুধু শ্যামনগর এলাকাতেই এক বছরে চুরির সংখ্যা প্রায় ৩৫-এর মতো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এখন খোয়া যাওয়া জিনিস ফেরত পাননি বাসিন্দারা। এনেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নও তুলছেন।
এলাকার এক পেট্রোল পাম্প-মালিক তাপস চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘মাঝেমধ্যেই রাত-বিরেতে সন্দেহজনক যুবকেরা তেল ভরতে আসে। দু’এক বার ভয় দেখিয়ে তেল ভরতে চেয়েছে। পুলিশি টহলদারি ঠিকমতো না হলে রাতে পেট্রল পাম্প খোলা রাখাটাই চিন্তার হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অজয় ঠাকুর অবশ্য দাবি করেছেন, “নোয়াপাড়া ছোট থানা। তার আইসি’ই আপাতত জগদ্দলের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। এসিপি’রাও আছেন। যে কোনও সংবেদনশীল ঘটনায় আমরাও সব সময় নজর রাখছি।” কিন্তু বাসিন্দাদের ভয় তাতে যাচ্ছে না।
তবে, মোটের উপরে নাগরিক পরিষেবা নিয়ে এলাকার বাসিন্দারা সন্তোষই প্রকাশ করেছেন। মূলাজোড়, রাহুতা, কাউগাছি, কেউটিয়ার শ্যামনগরে এখন কিছুটা ভাটপাড়া, কিছুটা গাড়ুলিয়া, কিছুটা কাউগাছি-২ পঞ্চায়েত মিলিয়ে ব্যস্ত জনজীবনের ছবি! শ্যামনগর স্টেশনের গায়ে কালীবাড়ি বাজার সব সময়েই জমজমাট। এ ছাড়াও দৈনন্দিন চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছোট বাজার এখন পাড়ার মোড়ে মোড়ে। শহরের একমাত্র শ্মশান নিমতলা ঘাটে এতদিন কাঠের চুল্লি ছিল। স্থানীয় এক ইটভাটার মালিক ২৮ কাঠা জমি পুরসভাকে দেওয়ায় এখন সেখানে ইলেকট্রিক চুল্লি বসছে। মাটির তলা দিয়ে নিকাশি ব্যবস্থা এবং পিচ ঢালা মসৃণ রাস্তা হচ্ছে। তার জন্য অবশ্য সাধারণ মানুষকে যাতায়াতে কিছুটা মুশকিলে পড়তে হচ্ছে। তবে, টালিগঞ্জের একটি স্কুলের ইংরেজি শিক্ষিকা সঞ্চিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, “কষ্ট করলে তবেই না কেষ্ট মেলে।”
শ্যামনগরের বেশিরভাগ অংশই ভাটপাড়া পুরসভার তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কিছুটা অংশ।, বাকিটা ২৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের। ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের অর্জুন সিংহ বলেন, “গোটা রাজ্যে পানীয় জলের ক্ষেত্রে আমরাই প্রথম পুরসভা যারা কেএমডিএ’র প্রকল্প নিজেদের উদ্যোগে বাস্তবায়িত করেছি। এরপর রাস্তা আর নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কার হচ্ছে। মানুষ যদি সচেতন থাকেন, তা হলে এই শহর আরও সুন্দর করে গড়ে তোলা যাবে। কোনও কাজ আটকে থাকবে না।” ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে গরিব মানুষদের বাসস্থানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে চেয়ারম্যান জানান।
এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে শহর আরও বেশি বাসযোগ্য, আরও সুন্দর হয়ে উঠবে বলে মনে করেন বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy