খেলার একটি মুহূর্ত। নিজস্ব চিত্র।
বর্তমান ঠিকানা মুম্বই হোক বা মধ্যমগ্রাম, বছরের ঠিক এই সময়টিতে তাঁরা সদলবলে ঘরে ফেরেন। উপলক্ষ, গ্রামের ফুটবল টুর্নামেন্ট। ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে যার সামর্থ্য মতো খরচ করে কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা অঞ্চল থেকে খেলোয়াড়দের নিয়ে এসে দল তৈরি করেন। আর বসিরহাটের মাটিয়া হাইস্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত দিন-রাতের খেলায় একে অন্যকে টেক্কা দিতে রীতিমতো উত্সবে মাতেন এলাকার মানুষ।
দিন কয়েক আগে মাটিয়া অগ্রদূত স্পোর্টিং ক্লাবের ব্যবস্থাপনায়, গত বারো বছর ধরে চলা এই প্রতিযোগিতায় ১৬টি দলের খেলা দেখতে মাঠে হাজার চল্লিশ দর্শক ভিড় করেছিলেন। মহিলা দর্শকদের জন্য গ্রামের মানুষ বাঁশ, তক্তা, খাটিয়া দিয়ে যে যার গ্রামের বা পরিবারের নাম লিখে, রঙিন কাপড় দিয়ে সাজিয়ে অস্থায়ী গ্যালারি করেন। খেলা উপলক্ষে সারা দিন ধরে মেলা, খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়।
ক্লাব সম্পাদক মেহেবুব হাসান বলেন, “বেশ কয়েক বছর ধরে নামী ফুটবলারদের নিয়ে এই খেলা এখানকার রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ এই দিনটির দিকে তাকিয়ে থাকেন। ফুটবল খেলার প্রতি ছেলেদের আগ্রহও বাড়ে। কয়েক বছর আগে শৈলেন মান্না এসেছিলেন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করতে, সে কথা মাথায় রেখে এ বারে তাঁর স্মৃতিতে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।” কেবল ফুটবল খেলাই নয়, ওই ক্লাবে স্থানীয় ছেলেদের প্রশিক্ষণ দেন প্রখ্যাত ফুটবলার নাজিমুল হক এবং সরিফুল ইসলাম। মেধাবী ও দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের বই-খাতা, গরিব মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ, রক্তদান ও স্বাস্থ্যশিবির-সহ নানা সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত ক্লাবটি।
পেশোয়ারের সেনা স্কুলে জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে বিশ্ব শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে পায়রা উড়িয়ে, খুদেদের হাতে পেনসিল-খাতা তুলে দিয়ে শুরু হয় শৈলেন মান্না স্মৃতি ফুটবল প্রতিযোগিতা। ৬ জন করে খেলোয়াড়ের এই প্রতিযোগিতায় এ বারে মুর্শিদাবাদ, মধ্যমগ্রাম, বসিরহাট, দেগঙ্গা, দত্তপুকুর, গড়িয়া-সহ কলকাতা থেকে আসা খেলোয়াড়েরা যোগ দেন। কলকাতার প্রথম বিভাগের খেলায় বেশ কয়েক জন নাইজেরিয়ান ফুটবলারকে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলতে দেখা যায়। গোলাপ উপহার দিয়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরিচয় সারেন বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক এটিএম আব্দুল্লা রনি, প্রখ্যাত ফুটবলার নাজিমুল হক, শ্রীনগর-মাটিয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ঝন্টু মল্লিক-সহ বিশিষ্টজনেরা।
ওই দিন খেলার ফাইনালে ওঠে মাটিয়া মত্স আড়ত সমিতি এবং পশ্চিম বিবিপুর যুবক সঙ্ঘ। ফাইনালে মাটিয়া মত্স আড়ত সমিতির পক্ষে নাইজেরিয়ান ফুটবলার জোসেফ ২টি গোল করেন। পশ্চিম বিবিপুর যুবক সঙ্ঘের পক্ষে এক মাত্র গোলটি করেন আহমেদ। মাটিয়া মত্স আড়ত সমিতি ২-১ ব্যবধানে পশ্চিম বিবিপুর যুবক সঙ্ঘকে হারিয়ে জয়ের শিরোপা লাভ করে। প্রতিযোগিতার সেরা ফুটবলার হন পশ্চিম বিবিপুরের ফারুক এবং ফাইনালে সেরা ও সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পান জোসেফ। ফাইনালে যোগদানকারী দু’টি দলকে লক্ষাধিক টাকা নগদ পুরস্কার এবং ট্রফি দেওয়া হয়। খেলা পরিচালনা করেন মাসুদুর জামান তুহিন, মামুন আকতার, অশোক মজুমদার এবং আরসাদ আলি। ফাইনালের আগে আতসবাজির প্রদর্শনী উপভোগ করে কয়েক হাজার দর্শক বাড়ির পথ ধরেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy