বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিল হাবরা থানার গোবরডাঙার বাসিন্দা অষ্টম শ্রেণির তিন ছাত্রী। দিল্লি থেকে তাদের উদ্ধার করল পুলিশ। রাজধানী এক্সপ্রেসের বাথরুমে চেপে মেয়ে তিনটি দিল্লি গিয়ে পৌঁছয় বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে দিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।
উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “নিখোঁজ তিন ছাত্রী এখন দিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানায় রয়েছে। তাদের আনতে পুলিশের একটি দলকে পাঠানো হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিল্লি দেখার পরিকল্পনা করে বুধবার তারা বাড়ি থেকে বেরোয়। স্কুলে না গিয়ে তারা ট্রেনে চেপে কলকাতা যায়। হাওড়া থেকে বিকেল ৪টের সময় রাজধানী এক্সপ্রেসে চড়ে দিল্লির দিকে রওনা হয়। তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, কাছে টাকা-পয়সা তেমন না থাকায় ওই তিন কিশোরী রাজধানী এক্সপ্রেসের বাথরুমে ঢুকে পড়ে।
এ দিকে সন্ধে হয়ে গেলেও মেয়েরা বাড়ি না ফেরায় তাদের পরিবারের তরফে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। অভিযোগ জানানো হয় পুলিশের কাছে। এর মধ্যে এলাকার এক ব্যক্তি জানান, বামনগাছিতে কলকাতাগামী ট্রেনে দেখেছিলেন ওই মেয়েদের। কিন্তু কথা বলতে গেলেও ওরা এড়িয়ে যায়। অভিযোগ পেয়ে হাবরা থানার আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায় রাতেই হাওড়া জিআরপির ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মোবাইলে জিআরপির কাছে মেয়েদের ছবিও পাঠিয়ে দেন। কিন্তু তারাও খোঁজ করে মেয়েদের হদিশ পায়নি।
কী ভাবে খোঁজ মিলল মেয়েদের?
পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েদের কাছে ফোন না থাকায় মোবাইলের টাওয়ার দেখেও তাদের অবস্থান বোঝার উপায় ছিল না। কিন্তু তাদের পরিবার সূত্রে খবর মেলে, এক কিশোরী তার পিসতুতো দাদার ফোন থেকে এলাকারই বাসিন্দা একটি ছেলের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলত। সেই দাদার বাড়ি বনগাঁয়। রহস্যের সমাধান সূত্র মেলে সেখান থেকেই!
মেয়েটির বন্ধুকে নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে গোবরডাঙা থেকে পুলিশ বনগাঁয় আসছিল মেয়েটির দাদার খোঁজে। ইতিমধ্যে বেলা ১টা নাগাদ বন্ধুর ফোনে যোগাযোগ করে ওই কিশোরী। জানায়, সে দিল্লিতে আছে। সেখানে ছেলেটিকে চলে যেতেও অনুরোধ করে সে।
মেয়েটির বন্ধুর ফোন থেকে পুলিশ পাল্টা ফোন করে মেয়েটিকে। ওই কিশোরীর বন্ধুর গলা ভাঁড়িয়ে তাদের ফিরে আসতে বলা হয়। মেয়েরা জানায়, বাড়িতে ফিরলে মারধর জুটবে। সে জন্য তারা ফিরতে চায় না।
পুলিশ অবশ্য তত ক্ষণে দিল্লিতে মোবাইলের অবস্থান জেনে ফেলেছে। সেই সূত্র ধরে তদন্ত এগোয়। জানা যায়, রাস্তায় এক মহিলার ফোন থেকে ওই কিশোরী যোগাযোগ করেছিল। পুলিশ ফোনে তাদের ভয় দেখিয়ে বলে। ওই মহিলা পুলিশের কাছ থেকে সব শুনে মেয়েদের থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। হাবরা থানার পুলিশও তাদের বলে, তারা যেন কাছের কোনও থানায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেই মতো ওই মহিলা তিন কিশোরীকে বাসে তুলে দেন।
হাবরা থানার পুলিশ দিল্লিতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের প্রতিনিধি পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানায় যান। হাবরা থানার পুলিশ ফোনেও দিল্লি পুলিশের সঙ্গে কথা বলে। পুলিশ জানিয়েছে, এক কিশোরীর আত্মীয়া গুরগাঁওয়ের একটি হোটেলে কাজ করেন। মেয়েরা তাঁর কাছেই যাচ্ছিল। মাঝপথে দিল্লি ঘুরে দেখার ইচ্ছে ছিল। পুলিশ ওই মহিলাকেও পার্লামেন্ট থানায় যেতে বলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy