সাত সকালে পঞ্চায়েত দফতরের ভেতর থেকে খুটখাট শব্দ।
সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ আশপাশের বাজার এলাকায় লোক জড়ো হতে শুরু করেছে। উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখা যায়, দফতরের দরজা-জানলা ভেতর থেকে বন্ধ। সকলেই ধরে নেন, চোর ঢুকেছে। দরজায় তালা এঁটে খবর দেওয়া হয় পুলিশকে।
সোমবার হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েতের এই ঘটনায় পুলিশও কিছু ক্ষণের মধ্যে এসে পড়ে। কিন্তু ভেতরে ক’জন আছে, তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র আছে কিনা, এ সব সাতপাঁচ ভাবতে হয় পুলিশ কর্মীদেরও। পঞ্চায়েত প্রধানের অনুপস্থিতিতে তাঁরা দফতরে ঢুকতে চাননি। খবর দেওয়া হয় প্রধান সিপিএমের নমিতা পরামান্যকে।
তিনি যত ক্ষণে এলেন, তত ক্ষণে বেলা গড়িয়েছে। প্রধানের উপস্থিতিতে দরজার তালা খুলে সকলের চক্ষু চড়কগাছ। ভিতরে গুটিসুটি মেরে বসে আছেন পঞ্চায়েতেরই এক অস্থায়ী কর্মী অমরেন্দ্র মৃধা। পুলিশ তাঁকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কী কারণে সাত সকালে পঞ্চায়েতে ঢুকতে হয়েছিল তাঁকে, তা নিয়ে সদুত্তর দিতে না পারায় আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, প্রধানের নির্দেশেই কর্মসূত্রে তিনি দফতরে গিয়েছিলেন। সে কথা অস্বীকার করছেন না প্রধানও। তিনি বলেন, “অমরেন্দ্র পঞ্চায়েতের এক জন কর্মী। অডিটের কাজের জন্য জরুরি নথি-সংক্রান্ত বিষয়ে আমার অনুমতিতেই উনি দফতরে ঢুকেছিলেন।” কিন্তু কেন সাত সকালে সকলের অলক্ষে দফতরে যাওয়ার দরকার পড়ল কেন? তা নিয়ে অবশ্য প্রধান কোনও মন্তব্য করতে চাননি। হেমনগর উপকূলবর্তী থানার ওসি অমলেশ বালা বলেন, “ভেতর থেকে তালা মেরে পঞ্চায়েত দফতরে কাজ করছিলেন অস্থায়ী কর্মী অমরেন্দ্র মৃধা। কেন এত সকালে তিনি পঞ্চায়েত ঢুকেছিলেন, সে ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
এ দিকে, অমরেন্দ্রর বিরুদ্ধে নথি লোপাট করার চেষ্টার অভিযোগ এনে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য গোবিন্দ অধিকারী। সম্প্রতি তৃণমূলের পক্ষে প্রধানকে স্মারকলিপি দিয়ে জানানো হয়েছিল, অমরেন্দ্রর ঠিকাদারির লাইসেন্স আছে। অতএব তিনি কোনও ভাবেই পঞ্চায়েতের কর্মী হতে পারেন না। এই ঘটনা বেআইনি। বিডিও-র পক্ষে তদন্তও শুরু হয়। তদন্ত চলাকালীন আপাতত পঞ্চায়েতের কাজ করতে বারণও করা হয়েছিল তাঁকে। তার পরেও কেন প্রধান তাঁকে দফতরের কাজে ভেতরে পাঠালেন, তা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে।
তৃণমূলের হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক নেতা দেবেশ মণ্ডল বলেন, “ঠিকাদারির লাইসেন্স নিয়ে রাস্তা বা বাঁধের কাজ করেন উনি। ও দিকে, পঞ্চায়েতে অস্থায়ী কর্মী হিসেবেও কাজ করেন। এটা অবৈধ। এর মধ্যে প্রভাব খাটিয়ে ৬৫ হাজার টাকার ডিসপ্লে বোর্ড তৈরির বরাতে প্রধানকে দিয়ে সইও করিয়ে নিয়েছেন।” তাঁর আরও অভিযোগ, “বিষয়টি জানাজানি হলে আমরা ওঁর অবৈধ কারবারের বিষয়ে প্রধান এবং বিডিওকে জানাই। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় জরুরি নথি নষ্টের জন্যই নির্ঘাত পঞ্চায়েত ভবনে ঢুকেছিলেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy