Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

আসামি ধরবই, বিক্ষোভের মুখে আশ্বাস ওসি-র

এক শিক্ষিকা খুনের মামলায় অভিযুক্তদের ধরা নিয়ে গড়িমসির অভিযোগে পুলিশের উপরে চড়াও হল জনতা। পুলিশের সঙ্গে তাদের মারামারিতে সোমবার ধুন্ধুমার হল উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জে। লাঠি এবং ঢিলের ঘায়ে মাথায় চোট পান স্থানীয় থানার ওসি। তাঁকে এবং বিডিও-কে দীর্ঘ ক্ষণ ঘেরাও করে রাখেন এলাকাবাসী।

পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ। সোমবার হিঙ্গলগঞ্জে। ছবি: নির্মল বসু

পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ। সোমবার হিঙ্গলগঞ্জে। ছবি: নির্মল বসু

নিজস্ব সংবাদদাতা
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৭
Share: Save:

এক শিক্ষিকা খুনের মামলায় অভিযুক্তদের ধরা নিয়ে গড়িমসির অভিযোগে পুলিশের উপরে চড়াও হল জনতা। পুলিশের সঙ্গে তাদের মারামারিতে সোমবার ধুন্ধুমার হল উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জে। লাঠি এবং ঢিলের ঘায়ে মাথায় চোট পান স্থানীয় থানার ওসি। তাঁকে এবং বিডিও-কে দীর্ঘ ক্ষণ ঘেরাও করে রাখেন এলাকাবাসী। সীমান্ত রক্ষী বাহিনী নামিয়েও কাজ হয়নি। পরে র্যাফ এবং পুলিশের বিরাট বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশকে মারধর এবং গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে স্থানীয় পঞ্চায়েতের এক তৃণমূল সদস্য-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

গত ১৩ জুলাই রাতে নিজের বাড়িতেই হিঙ্গলগঞ্জের সান্ডেলের বিল শ্রীরামকৃষ্ণ সেবা মিশনের গদাধর পাঠশালার শিক্ষিকা ফুলরেণু সরকার (৪২) খুন হন। স্থানীয় সূত্রের খবর, শিক্ষকতার পাশাপাশি সমাজসেবার সঙ্গে যুক্ত থাকায় এলাকায় জনপ্রিয় ছিলেন ফুলরেণুদেবী। ওই খুনে পুলিশ এ পর্যন্ত কাউকে ধরতে না পারায় এলাকায় ক্ষোভ ছিল।

গ্রামবাসী ঘটনার এক দিন পরেই শিক্ষিকা খুনে জড়িতদের ধরার ব্যাপারে পুলিশ গাফিলতি করছে এই অভিযোগে সরব হন। ওসি-কে ঘেরাও করে তখন বিক্ষোভ দেখানো হয়। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, সে সময় পুলিশ ‘দু’দিনের মধ্যে’ খুনে জড়িতদের ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু কথা রাখেনি। আততায়ীরা গ্রেফতার না হওয়ায় তাঁরা আতঙ্কে রয়েছেন এই যুক্তিতে এবং দ্রুত তাদের ধরার দাবিতে গত বুধবার এলাকার মহিলাদের একাংশ হিঙ্গলগঞ্জ থানায় স্মারকলিপি দেন। এ দিন সকালে কিছু স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষিকা খুনে জড়িতদের ধরার দাবিতে কনেকনগর-কাঁটাবাড়ি মোড়ে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন। ফলে, পারহাসনাবাদ এবং নেবুখালির মধ্যে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সেই সময় হিঙ্গলগঞ্জ থানার এক অফিসার, সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে সেখানে গেলে রটে যায়, ওসি মনিরুল ইসলামের নির্দেশে রবিবার রাতে ওই অফিসার নিহতের পরিবারকে থানায় ডেকে এলাকাবাসীর আন্দোলন থেকে দূরে থাকতে চাপাচাপি করেছেন। জনতা চড়াও হয় ওই অফিসারের উপরে। জওয়ানেরা অফিসারটিকে বাঁচান। এর পরে ওসি ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাঁর উপরেও হামলা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ জবাব দিতে গিয়ে মহিলাদের উপরে লাঠি চালিয়েছে অভিযোগে আরও খেপে ওঠে জনতা। ওসি-কে আশ্রয় নিতে হয় বাসস্ট্যান্ডের চালায়।

খবর পেয়ে হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও বিশ্বজিৎ বসু ঘটনাস্থলে গেলে তিনিও ঘেরাও-বিক্ষোভের মধ্যে পড়েন। বিডিও-র কথায় জনতা শান্ত হয়নি। এক সময় ওসি-কে মাইক হাতে বলতে শোনা যায়, “অনেক অপমান করেছেন। মারতে হয়, মারুন। কিন্তু আসামি আমি ধরবই।” ওসি-র দাবি, ফুলরেণুদেবীর খুনে পড়শিদের কয়েকজন যুক্ত আছেন বলে পুলিশ মনে করছে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞেরা ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে অনেকটা প্রমাণ পেয়েছেন। পুলিশ আরও কিছু প্রমাণের অপেক্ষায় রয়েছে। তাঁর সংযোজন, “আমাকে বিশ্বাস করে একটু সময় দিন। আমি আসামী ধরবই। তার পরেও আমাকে অপারগ মনে করলে উপরওয়ালাদের বলুন।”

সান্ডেলের বিল পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য জয়নাল আবেদিন এবং ইকবাল আহমেদ মুকুল বলেন, “ওসি কেবল বলছেন, খুব শীঘ্রই দুষ্কৃতী ধরা পড়বে। কিন্তু কবে তারা ধরা পড়বে, মানুষ তা জানতে চান।”

এসডিপিও (বসিরহাট) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন র্যাফ-সহ বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করেন। জয়নাল আবেদিন-সহ পাঁচ জনকে ধরা হয়। অভিজিৎবাবুরও আশ্বাস, “আশা করা যাচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি খুনে জড়িতদের ধরা যাবে।”

নিহত শিক্ষিকার ছেলে শঙ্কর সরকার বলেন, “আমি চাই, মায়ের খুনিরা দ্রুত গ্রেফতার হোক। না হলে গ্রামবাসীর মধ্যে অবিশ্বাস এবং আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।” এলাকাবাসীর হুঁশিয়ারি, খুনে জড়িতদেরা দ্রুত ধরা না না হলে আরও বড় আন্দোলনে নামবেন তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

hingalgunj phulrenu sarkar murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE