ভাম মেরে উল্লাস।
‘হাই বন্ধুরা! কী ডিশ দিয়ে পার্টি করছ তোমরা? সেই বোরিং চিকেন, মাটন, ল্যাম্ব বা বড়জোর হ্যাম? ধুস! আমরা পার্টি করছি কী দিয়ে দেখো! হাই প্রোটিন!’
ফেসবুকে এমন পোস্ট দেখে চমকে উঠেছিলেন অনেকেই। দুষ্প্রাপ্য ও বিরল একটি ভামকে মেরে, কেটে, রান্না করে ‘পার্টি’ করছে একদল ছেলেমেয়ে। এমনিতেই এখন সচরাচর দেখা যায় না বিলুপ্তপ্রায় ওই ভামদের। তাই ওই প্রাণীটিকে বন্যপ্রাণ সুরক্ষা আইনের দু’নম্বর শিডিউলের পার্ট ২ তালিকায় রাখা হয়েছে। বাঘ-সিংহের মতো ভামও ধরা বা মেরে ফেলা গুরুতর অপরাধ। সেই ভাম মেরে কলেজ পড়ুয়াদের ভোজের ছবি দেখেই ঝ়ড় ওঠে ফেসবুকে।
খবর পেয়েই নড়েচড়ে বসে বন দফতর। তাদের সঙ্গে যৌথ তদন্তে নামে সিআইডি। ওই পোস্ট ধরে তদন্ত শুরু করে সাইবার ক্রাইম শাখাও। বেগতিক বুঝে ফেসবুক থেকে পোস্টগুলি তুলে নেন ওই তরুণ-তরুণীরা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। মঙ্গলবার বিকেলে সিআইডি, বন দফতর ও টিটাগড় থানার পুলিশ যৌথ ভাবে তল্লাশি চালিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার পলতার জাভরপুর থেকে ধরে ফেলে প্রণয় বাউল নামে এক যুবককে। তাঁকে জেরা করে অন্যদের খোঁজেও তল্লাশি শুরু হয়েছে। তবে বাকিরা পলাতক বলে জানিয়েছে সিআইডি। প্রণয়কে রাতেই জেরা শুরু করেছে বন দফতর। সিআইডি-র স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের অফিসার মনতোষ রাজ এ দিন জানান, আজ, বুধবার ধৃতকে বারাসত কোর্টে তোলা হবে। তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চালাবে পুলিশ।
আরও পড়ুন:
পণ করুন, শৌচালয় ছাড়া বিয়ে নয়, মেয়েদের অনুরোধ সুব্রতর
বন দফতরের রে়ঞ্জ অফিসার সুকুমার দাস এ দিন জানিয়েছেন, ভাম বা গন্ধগোকুল ‘সিভেট ক্যাট’ নামে পরিচিত। বিড়াল প্রজাতির শান্ত প্রাণীটি আস্তে আস্তে অবলুপ্তির পথে। সেই কারণেই গুরুত্বপূর্ণ শিডিউল দুইয়ে রাখা হয়েছে ভামকে। তাই ভাম হত্যা করলে সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডের বিধানও রয়েছে। সুকুমারবাবুর কথায়, ‘‘এমন প্রাণীকে মেরে, খেয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ছবি দেওয়ার মধ্যে কী বীরত্ব রয়েছে, সেটাই জেরা করে দেখা হচ্ছে।’’
প্রণয়কে জেরা করে বন দফতরের কর্তারা এ দিন জানান, সব চেয়ে আশঙ্কার কথা হল, প্রণয় বিধাননগরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজও করেন। তিনি জানেন, ভাম মারা অপরাধ। বন দফতর জানিয়েছে, কিছু দিন আগে এই জেলা থেকেই পাচারের সময়ে ধরা পড়ে ১০০ কোটি টাকার সাপের বিষ। লুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী, কচ্ছপ বা পাখিদের শিকার করে, খেয়ে বীরত্ব দেখানোর ঘটনা আগেও ঘটেছে। এই জেলারই বিয়েবাড়ির মেনু কার্ডে লেখা ছিল, ‘বিশেষ আকর্ষণ: নিষিদ্ধ পাখির মাংস।’ ট্রাকভর্তি কচ্ছপ ধরা পড়েছে। জেলার বিভাগীয় বনাধিকারিক মানিকলাল সরকারের কথায়, ‘‘এত ধরপাকড়ের পরেও এই ধরনের প্রবৃত্তি একেবারে বন্ধ হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy