Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

পাত্রের লাথি, মণ্ডপেই বিয়ে ভাঙলেন তরুণী

রবিবার ক্যানিংয়ের জয়রামখালি গ্রামে সামাজিক বিয়ে হওয়ার কথা ছিল উর্মিলা দাসের। পাত্র সোনারপুরের বনহুগলির বাসিন্দা বীরু দাস।

তাণ্ডব: এ ভাবেই নষ্ট করা হয়েছিল খাবার। নিজস্ব চিত্র

তাণ্ডব: এ ভাবেই নষ্ট করা হয়েছিল খাবার। নিজস্ব চিত্র

প্রসেনজিৎ সাহা 
শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৪৩
Share: Save:

মাস ছ’য়েক আগে রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়েছিল। দাবি মতো পণের টাকাও দেওয়া হয়। কিন্তু পরে আরও টাকার দাবি তোলে ছেলের পরিবার। সেই টাকাও দিতে রাজি হয়েছিলেন পাত্রীপক্ষ। অভিযোগ, তারপরেও বিভিন্ন অছিলায় পাত্রীপক্ষকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করছিল বরের বাড়ির লোকজন। পাত্র লাথি মারে পাত্রীকে। বিয়ের পিঁড়িতে বসেই সে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পাত্রী ও তাঁর বাড়ির লোকজন। আইনজীবীর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের পথে হাঁটতে চলেছেন তাঁরা।

রবিবার ক্যানিংয়ের জয়রামখালি গ্রামে সামাজিক বিয়ে হওয়ার কথা ছিল উর্মিলা দাসের। পাত্র সোনারপুরের বনহুগলির বাসিন্দা বীরু দাস। অভিযোগ, বিয়ে বাড়িতে এসে বরযাত্রীরা তাণ্ডব শুরু করে। নানা অজুহাতে বিয়ের আসরে ভাঙচুর চালায়। খাবার উল্টে দেয়। উর্মিলা বলেন, ‘‘যারা বিয়ের দিন এমন কাণ্ড করতে পারে, তাদের বাড়ির ছেলের সঙ্গে বিয়ে না হওয়াই ভাল।’’ এতে সায় দেন পাত্রীর দাদা রবিন, গৌর দাস। তাঁরা বলেন, ‘‘এরা তো মেয়েটাকে পরে মেরেও ফেলতে পারে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বীরু পেশায় গাড়ি চালক। তরুণীর বাবা আগেই মারা যাওয়ায় তাঁর চার দাদা মিলে দেখাশোনার পরে একমাত্র বোনের বিয়ে ঠিক করেছিলেন। ধারদেনা করে সমস্ত আয়োজন করেন পণের টাকা মেটান।

কন্যাপক্ষের অভিযোগ, বিয়েতে প্রথমে ২০ হাজার টাকা পণ চায় পাত্র। পরে সুযোগ বুঝে আরও ৫ হাজার দর হাঁকিয়ে বসে। তা দিতে রাজিও হন মেয়ের বাড়ির লোকজন। রবিবার রাত ১০টা নাগাদ বিয়ের লগ্ন থাকলেও বরযাত্রীদের নিয়ে পাত্র রাত দেড়টায় পৌঁছয়। পুরোহিত বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বললে বরযাত্রীরা রাজি হয়নি। আগে নাচানাচি হবে প্যান্ডেলে, এই বায়না জোড়ে। পাত্রীর দাদা-বৌদিরা জানান, অনেক রাত হয়েছে। এখন চার হাত আগে এক হয়ে যাক। তারপরে বাকি কিছু।

অনেক অনুনয়-বিনয়ের পরে শুরু হয় আচার অনুষ্ঠান। বরযাত্রীরা খেতে ঢোকে প্যান্ডেলে। সেখানে ক্যাটারিংয়ের কর্মীদের সঙ্গে বচসা শুরু করে। এক সময়ে প্যান্ডেলের চেয়ার-টেবিল, ঝাড়বাতি ভাঙতে শুরু করে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, ক্যাটারিংয়ের ছেলেরা বাধা দিতে গেলে তাঁদের মারধর করে মদ্যপ বরযাত্রীদের কয়েক জন। ভাঁড়ার ঘরে ঢুকে খাবার নষ্ট করে।

পাত্রীপক্ষ ঠেকাতে এলে তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পাত্র বিয়ের পিঁড়ি থেকে উঠতে গেলে উর্মিলা তাকে বারণ করেন। বলেন, বিয়েটা আগে সেরে ফেলতে। বীরু হবু স্ত্রীর বুকেই লাথি মেরে উঠে যায় বলে অভিযোগ। অসুস্থ হয়ে পড়েন উর্মিলা। তাঁকে পরে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসার নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য।

বিয়ে করতে না চেয়ে আসর ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বীরু। এলাকার লোক এ বার ক্ষেপে ওঠেন। বরযাত্রীদের দু’চার ঘা বসিয়েও দেন। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে আসর ছাড়ে বেশির ভাগ বরযাত্রী। পাত্র-সহ আট জনকে আটকে রাখে কন্যাপক্ষ। ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণ না দিলে তাদের ছাড়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

সোমবার সকালে বরপক্ষের কিছু লোকজন আবার আসে জয়রামখালিতে। ভুল স্বীকার করে আটক বর ও বরযাত্রীদের উদ্ধার করে নিয়ে যেতে চায়। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ও এলাকার বাসিন্দারা আলোচনায় বসেন। তবে কোনও পক্ষই থানায় অভিযোগ জানায়নি।

বীরু অবশ্য বলে, “কিছু লোক মদ খেয়েছিল। ভুল হয়ে গিয়েছে। আমিও অন্যায় করেছি। তবে ও যদি বিয়ে করতে চায়, আমি রাজি।’’

ততক্ষণে অবশ্য অন্য সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন সাহসিনী উর্মিলা।

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy