এখনও জলমগ্ন একাধিক এলাকা। —নিজস্ব চিত্র।
নিম্নচাপ ও কটালের জোড়া ফলারের জেরে শুক্রবার সকাল থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রায় সর্বত্রই আকাশ ছিল মেঘলা। সকাল থেকেই দফায় দফায় বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। তবে সুন্দরবন উপকূল এলাকায় বৃষ্টির পরিমান ছিল বেশি। শুক্রবার নামখানা, সাগর, ঘোড়ামারা, মৌসুনি ও গোসাবার দু'একটি জায়গায় জোয়ারের সময় বেহাল বাঁধ দিয়ে নোনা জল ঢুকলেও পর জল নেমে যায়। নতুন করে কোন বাঁধ না ভাঙলেও আগামী কটালগুলিতে জল আটকানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের কাছে। তাই আগামী কয়েকদিন ধরে সুন্দরবনের বেহাল বাঁধগুলি দ্রুততার সাথে সারিয়ে তোলা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। জেলা শাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘ইয়াসের পর থেকেই বিপর্যস্ত বাঁধগুলির মেরামতি চলছিল। অধিকাংশ জায়গাতেই কাজ শেষের পথে৷ কটালের জেরে নতুন করে বাঁধ ভাঙার খবর নেই।'’’
নিম্নচাপ ও কটালের প্রভাবে সুন্দরবন ও উপকূলের নদ-নদীতে জলস্ফীতি দেখা গেলেও শুক্রবার কোনও বাঁধ ভাঙার খবর পাওয়া যায় নি। তবে ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি থেকে জোয়ারের সময় জল ঢুকতে শুরু করে। নামখানার পাতিবুনিয়া, ঈশ্বরীপুর ও মৌসুনি দ্বীপের বালিয়াড়া, সিগনাল পয়েন্ট, পয়লাঘেরি এবং ঘোড়ামারা দ্বীপের খাসিমারা, হাটখোলা, চুনপুরি এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। যদিও ভাটার সময় আবার জল নেমে যায়।
তবে সামনের পূর্ণিমার কটালের সময় যাতে বাঁধগুলি জল আটকে দিতে পারে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে সুন্দরবন উন্নয়ন দপ্তরও। প্রশাসন ও সেচ দফতরের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে সুন্দরবন ও উপকূলের সব বাঁধ তৈরি ও মেরামতি দ্রুত সেরে ফেলতে চাইছে তারা। বিপুল এলাকা জলমগ্ন না হলেও নদী ও সমুদ্র ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। জল চলে আসে বাঁধের কানায় কানায়। আগামী তিন দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস দেয় আবহাওয়া দপ্তর। শনিবার পর্যন্ত জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় নতুন করে আতঙ্ক দানা বেঁধেছে সুন্দরবনবাসীর মনে।
শুক্রবার সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা নামখানা ব্লক প্রশাসনের দপ্তরে একটি পর্যলোচনা বৈঠক করেন। বৈঠকে ছিলেন কাকদ্বীপের মহকুমা শাসক অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায়, বিডিও শান্তনু সিংহ ঠাকুর-সহ সেচ দপ্তরের আধিকারিকরা। সেই বৈঠকে বাঁধ মেরামতির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। সেচ দপ্তরের আধিকারিকদের থেকে বাঁধ মেরামতি নিয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতির খোঁজ নেন মন্ত্রী। তবে দুর্গত মানুষদের কথায় আতঙ্ক ফুটে উঠেছে। ইয়াসের জেরে এখনও জল নামেনি অনেক এলাকা থেকে। তার মধ্যে কোটালের আতঙ্ক কুরে কুরে খাচ্ছে তাঁদের। মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘জোরকদমে বাঁধ মেরামতি চলছে। কাজ প্রায় শেষের পথে। আশাকরি এই বাঁধগুলি আগামী কটালে সময় উপকূলকে রক্ষা করবে।’’
তবে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ সসুন্দরবনবাসী। ইয়াস ও পুর্ণিমার কটালের জেরে নদী ও সমুদ্রে জলস্ফীতির কারণে প্লাবিত হয়েছিল সুন্দরবন ও জেলার উপকূলবর্তী এলাকাগুলি। কিন্তু দু'সপ্তাহ কেটে গেলেও অনেক জায়গাই এখনও জলমগ্ন। তার উপর প্রতি মাসে কটালের চোখ রাঙানিতে কপালে চিন্তার ভাঁজ। এই পরিস্থিতিতে স্থায়ী ও কংক্রিটের বাঁধ তৈরির দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। এবার এই বিষয় নিয়েই সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রীর সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন একদল মহিলা। শুক্রবার বিকেলে নামখানা বিডিও অফিসের সামনে মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরাকে দেখতে পেয়েই নারায়ণগঞ্জ এলাকার মহিলারা তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরে স্থায়ী বাঁধ তৈরির আবেদন জানাতে থাকেন।
বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নামখানা বিডিও অফিসে ত্রান সামগ্রী আনতে গিয়েছিলেন স্থানীয় নারায়ণগঞ্জ এলাকার শতাধিক মহিলা। ত্রাণ আনতে গিয়েই বিডিও অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। দাবি করেন, ত্রাণ নয় আগে পাকাপোক্ত বাঁধ চাই। যদিও পুলিশ বিক্ষোভকারী মহিলাদের কাউকেই বিডিও অফিস চত্বরে ঢুকতে দেয়নি। ফলে বিডিও অফিসের ফটকের সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সকেল। বিডিও অফিসে বৈঠক সেরে বেরোনোর সময় বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে মাত্র দু’জন মহিলাকে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়। তাঁদের স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy