—প্রতীকী ছবি।
রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লক সিপিএমের দুর্গ বলে পরিচিত ছিল এক সময়ে। ১৯৯৮ সালে তৃণমূলের জন্মের পরেও ওই দুর্গে ফাটল ধরাতে অনেক সময় লেগেছে শাসক দলের। ২০০৮ সালে তৃণমূল, কংগ্রেস, এসইউসি জোট করে পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদের আসন দখল করেছিল এখানে। ২০১৩ সালে ফের গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদের দখল নেয় সিপিএম। তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট করে মাত্র দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে জয়ী হয়েছিল।
২০১৮ সাল থেকে রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকে তৃণমূলের উত্থান শুরু। ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০টিতে জয়জয়কার হয় তৃণমূলের। শুধু রাধাকান্তপুর পঞ্চায়েত সিপিএম দখলে রাখে। পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ তৃণমূলের দখলে যায়। মথুরাপুর ২ ব্লক এলাকাটি রায়দিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। ২০১১ সাল থেকে বিধানসভা, লোকসভা ভোটে তৃণমূল জয়ী হয়েছে এখান থেকে। তবে এ বার ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে গোষ্ঠীকোন্দল, আমপানের দুর্নীতির অভিযোগ, স্বজনপোষণের অভিযোগ তৃণমূলকে ভোগাতে পারে বলে দলেরই অনেকের মত।তবে তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক অলোক জলদাতা বলেন, ‘‘আমাদের এখানে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ হয়নি। কোনও গোষ্ঠীকোন্দলও নেই। আমপানের ক্ষতিগ্রস্ত নামের তালিকায় সকলের নাম ছিল। তবে কেন্দ্রের বঞ্চনার জন্য অনেকে ক্ষতিপূরণ পায়নি। ২০১৮ সালের মতো এ বারও অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১১টি পঞ্চায়েতে মোট আসন সংখ্যা ২১১টি। পঞ্চায়েত সমিতিতে ৩৩টি ও জেলা পরিষদ ৩টি আসন আছে। মথুরাপুর ২ ব্লকে বিজেপি সব আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। রায়দিঘি বিধানসভার মধ্যে পড়ে মথুরাপুর ২ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েত ছাড়াও মথুরাপুর ১ ব্লকের আরও ৬টি পঞ্চায়েত। এক সময়ে সিপিএমের শক্ত ঘাঁটিতে তৃণমূল শক্তিবৃদ্ধি করার পাশাপাশি গত কয়েক বছরে এখানে বিজেপিরও উত্থান হয়েছে। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে সিপিএমকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থান নেয় বিজেপি। সে বার তৃণমূল পেয়েছিল ৫১.৮৪ শতাংশ ভোট, ৩৭.২৯ শতাংশ পেয়েছিল বিজেপি। সিপিএম পায় মাত্র ৬.৩৯ শতাংশ ভোট। তার প্রভাব পড়েছিল পরের বিধানসভা ভোটে। ত্রিমুখী লড়াইয়ে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ছিল প্রায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার। বিজেপি পেয়েছিল ৮০ হাজার ভোট। সিপিএম পেয়েছিল প্রায় ৩৭ হাজার ভোট।
গত বিধানসভা ও লোকসভা ভোটের পর থেকে বিজেপি পায়ের তলার মাটি আরও শক্ত হয় এই এলাকায়। এ বার কিছু কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে সিপিএমের সঙ্গে বিজেপির বোঝাপড়া হয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূল শিবিরের। সে কথা অবশ্য মানেননি সিপিএম বা বিজেপি নেতারা।
এলাকার বাসিন্দা, বিজেপির মথুরাপুর সংগঠনিক জেলার সভাপতি প্রদ্যোৎ বৈদ্য বলেন, ‘‘২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমাদের মনোনয়ন পর্যন্ত জমা করতে দেওয়া হয়নি। বুথে বুথে সন্ত্রাস হয়েছিল। দলের উত্থান হলেও মানুষ ভয়ে প্রার্থী হতে চাননি। তবে এ বার সব আসনে প্রার্থী দেওয়া গিয়েছে। ভাল ফলাফল করব আমরা।’’ তবে দলের একটি সূত্রের মতে, গোষ্ঠীকোন্দল ভোগাচ্ছে বিজেপিকেও। গ্রামীণ এলাকায় নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। সে প্রসঙ্গে প্রদ্যোৎ অবশ্য বলেন, ‘‘সাংগঠনিক শক্তি ভালই আছে। কোনও গোষ্ঠীকোন্দল নেই।’’
গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েকটি আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি সিপিএম। এলাকার প্রবীন সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শাসক দল এলাকায় চোখে পড়ার মতো কোনও উন্নয়ন করেনি। ঢাকির সঙ্গে জটা সংযোগকারী সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড এখনও হল না। বাম জমানায় ওই সেতুর কাজ ৯০ ভাগ হয়ে গিয়েছিল। বাসস্ট্যান্ড, হিমঘর ও মার্কেট কমপ্লেক্স এখনও তৈরি হয়নি। বিগত বছরগুলিতে এলাকার বিধায়ক দেবশ্রী রায় টোটো দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা লুট করে চলে গিয়েছেন।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘আমপানে সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে। শাসক দলের একই পরিবারের ৫-১০ জন করে ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন। অথচ, তাঁদের অনেকের পাকা বাড়ি আছে। স্বজনপোষণ করতে গিয়ে পঞ্চায়েতের সদস্যকে কান ধরে ওঠবস করে অন্যায় স্বীকার করতে হয়েছে।’’ সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, শাসক দলের চাপে কিছু আসনে প্রার্থী দেওয়া যায়নি।
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিধায়ক অলোক জলদাতা বলেন, ‘‘গত নির্বাচনে সন্ত্রাস হলে রাধাকান্তপুর পঞ্চায়েত সিপিএম দখল করল কী করে? গত নির্বাচনে কেবল মাত্র দু’টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। বাকি সমস্ত পঞ্চায়েতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। একই ভাবে এ বারও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। মনোনয়নে কাকে বাধা দেওয়া হয়নি। সিপিএমের সংগঠন নেই বলে ওরা সব জায়গায় প্রার্থী দিতে পারেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy