আশাতীত ভাবে বাজার উঠেছে শেষ চারটি কাজের দিনে। মোট ৪৭০৮ পয়েন্ট লাফ দিয়ে সেনসেক্স পৌঁছে গিয়েছে ৭৮,৫৫৩ পয়েন্টে। ১৪১৯ পয়েন্ট বেড়ে নিফ্টি ছুঁয়েছে ২৩,৮৫২ অঙ্ক। ফলে অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে লগ্নিকারীদের মনে। তবে এখন তাঁদের প্রশ্ন, এই উত্থান কি আদৌ ধরে রাখা যাবে? সন্দেহ নেই চিন বাদে অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে আমেরিকার চড়া হারে ঘোষিত নতুন শুল্ক চালু ৯০ দিন পিছিয়ে যাওয়াই এই উত্থানের প্রধান কারণ। তার সঙ্গে শক্তি জুগিয়েছে আরও দু’টি ঘটনা। প্রথমত, মার্চে খুচরো এবং পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার কমেছে। দ্বিতীয়ত, এ বছর স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। মূল্যবৃদ্ধি মাথা নামানোয় আশা জেগেছে জুনে আরও এক দফা সুদ কমাতে পারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। আগের দু’বার ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে মোট ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে রেপো রেটকে (যে হারে আরবিআই অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয়) নামিয়ে এনেছে ৬ শতাংশে। ফলে ইতিমধ্যেই কিছুটা করে বিভিন্ন ধরনের ঋণে সুদ ছেঁটেছে ব্যাঙ্কগুলি। এতে শিল্প এবং খুচরো ঋণগ্রহীতাদের কিছুটা করে সুবিধা হবে। তার উপরে বৃষ্টি ভাল হলে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতি ঘটবে, তেমনই খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সব মিলিয়ে বহু দিন পরে বাজারে এক ভাল লাগার আবহ তৈরি হয়েছে। বুলদের আনাগোনা নজরে পড়ছে। উৎসাহ দেখা যাচ্ছে লগ্নিকারীদের মধ্যে। ক্রেতার ভূমিকায় বাজারে ফেরত এসেছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিও।
যদিও আগামী দিনে বাজার আরও এগোবে কি না, তা একাধিক বিষয়ের উপরে নির্ভর করবে। এর মধ্যে আছে বিদেশি লগ্নিকারীদের পুঁজি ঢালা বহাল থাকবে কি না, গত অর্থবর্ষ এবং শেষ তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ সংস্থাগুলির আর্থিক ফলাফল কেমন হয় ইত্যাদি। এ ছাড়া দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে শুল্কের ব্যাপারে আমেরিকা থেকে কতটা সুবিধা ভারত আদায় করতে সক্ষম হয়, তা-ও স্থির করবে সূচকের গতি। টানা শেয়ার বিক্রি করার পর শেষ তিন দিনের লেনদেনে বিদেশী লগ্নিকারী সংস্থাগুলি মোট ১৪,৬৭০ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য তথা শুল্ক নীতি ভারতের জন্যে নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে আশা বিভিন্ন মহলের। ফলে এ দেশের তেমন বড় কোনও লোকসান হবে বলে মনে করছে না তারা। এই পরিস্থিতিতে শেয়ার বাজারে আবার বড় মাপের ধস নামার তেমন আশঙ্কা নেই বললেই চলে। বরং উত্থান জারি থাকতে পারে বলে আশা করছেন কেউ কেউ।
এ দিকে, টিসিএস এবং ইনফোসিস-সহ কয়েকটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার আর্থিক ফল বাজারকে কিছুটা হতাশ করলেও, গত সপ্তাহে ২০২৪-২৬ অর্থবর্ষ ও তার শেষ তিন মাসের হিসেবে ভাল ফলাফল উপহার দিয়েছে বেসরকারি এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক এবং আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক। শেষ তিন মাসে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা ৬.৭% বেড়ে পৌঁছেছে ১৭,৬১৬ কোটি টাকায়। একই মেয়াদে অপর ব্যাঙ্কটি ঘরে তুলেছে ১২,৬৩০ কোটির লাভ, যা গত বছরের তুলনায় ১৭.৯৫% বেশি। এই দুই ব্যাঙ্ক শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১ টাকা এবং ২ টাকা মূল দামের শেয়ার পিছু যথাক্রমে ২২ টাকা এবং ১১ টাকার ডিভিডেন্ড সুপারিশ করেছে। শেষ তিন মাসে ৬৩.৩% মুনাফা বেড়েছে বেসরকারি ইয়েস ব্যাঙ্কেরও। এ সপ্তাহে শেয়ার বাজারে এই সব ফলাফলের প্রভাব দেখা যাবে বলে ধারণা।
তবে আগের চার দিনে দুই সূচক হারানো জমির অনেকটা উদ্ধার করলেও, সর্বোচ্চ জায়গা থেকে তারা এখনও অনেকটা পিছনে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ ৮৫,৮৩৬ পয়েন্ট ছুঁয়েছিল সেনসেক্স। তা থেকে এখনও সূচকটি ৭২৮৩ পয়েন্ট (৮.৪৮%) নীচে। এখন দেখার কত দিনে সেনসেক্স ফের সেখানে পৌঁছয়।
অন্য দিকে ঋণের পাশাপাশি গত সপ্তাহে জমায় সুদ কমিয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক। লক্ষণীয় বিষয় হল, কিছু ব্যাঙ্ক সুদ কমিয়েছে সেভিংস অ্যাকাউন্টেও। ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে কমিয়ে এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক এবং আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক সুদ নামিয়ে এনেছে ২.৭৫ শতাংশে। ৫০ লক্ষ টাকার কম জমায় যা প্রযোজ্য হবে। স্টেট ব্যাঙ্কে সেভিংসে সুদের হার ২.৭%। অর্থাৎ সেভিংসে আর বেশি টাকা ফেলে রাখা যাবে না। বিশেষ উঁচু হারে করদাতাদের ক্ষেত্রে। মেয়াদি আমানতেও সুদ কমানো হয়েছে বড় মেয়াদে। পরবর্তী ঋণনীতিতে রেপো রেট আরও কমানো হলে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আগামী দিনে সুদ আরও কমতে পারে। যা চাপে ফেলবে সুদ নির্ভর মানুষদের।
(মতামত ব্যক্তিগত)
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)