চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকেরা ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল করতে পারবেন বলে জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শনিবার থেকেই তাঁদের নতুন করে স্কুলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ দিন দুই জেলার অনেক স্কুলেই চাকরিহারা শিক্ষকেরা কাজে যোগ দেননি। অনেকেই জানান, কে যোগ্য, কে অযোগ্য তা নিয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা না আসা পর্যন্ত কাজে যোগ দিতে চাইছেন না। তবে কিছু স্কুলে শিক্ষকেরা এ দিন কাজে যোগ দেন। অনিশ্চয়তা দূরে সরিয়ে আগের মতোই ক্লাসও করান। মাস্টারমশাই-দিদিমণিদের ফের ক্লাসে পেয়ে খুশি ছাত্রছাত্রীরা।
পাথরপ্রতিমার পশ্চিম শ্রীপতিনগর ডক্টর বিসিরায় মেমোরিলায় হাই স্কুলের পাঁচ শিক্ষকের মধ্যে চার জনের চাকরি গিয়েছে। এ দিন চাকরি হারানো কোনও শিক্ষক স্কুলে আসেননি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পার্থসারথী মিশ্র বলেন, “চাকরি হারানো শিক্ষকেরা জানান, রাজ্য সরকারের তরফে যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশিত হলে তবেই স্কুলে আসবেন।” শিক্ষাকর্মীরাও সোমবার থেকে স্কুলে আসবে বলেছেন বলে জানান তিনি। পার্থের কথায়, ‘‘আমরা কাউকে বারণ করতে পারি না।”
মৌসুনি বালিয়াড়া কিশোর হাই স্কুলের ছ’জন শিক্ষকের চাকরি যায়। এ দিন কেউই স্কুলে আসেননি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরিন্দম মাইতি বলেন, “আজ কেউ স্কুলে আসেননি। শুনছি, সোম-মঙ্গলবার নাগাদ ওঁরা আসবেন। ক’জন আসবেন, তা অবশ্য জানি না।” সুন্দরবন জনকল্যাণ সঙ্ঘ বিদ্যানিকেতনের চাকরি হারানো ১১ জন শিক্ষকের কেউই এ দিন স্কুলে ফেরেননি। একই ছবি বাসন্তীর ফুলমালঞ্চ ঋতু ভকত হাই স্কুল, বাসন্তীর সুন্দরবন আদর্শ বিদ্যাপীঠ, সোনাখালি নরেন্দ্র শিক্ষা নিকেতন, ক্যানিং ডেভিড সেশুন হাই স্কুল, রাঙাবেলিয়া হাই স্কুলের। সোনাখালি নরেন্দ্র শিক্ষা নিকেতনের চাকরিহারা শিক্ষক শুভাশিস নস্কর বলেন, “যত দিন না সরকার যোগ্য-অযোগ্যের, তালিকা প্রকাশ করছে, আমরা কাজে যোগ দেব না।”
গোপালনগরের ন’হাটা সারদা সুন্দরী বালিকা বিদ্যামন্দিরের ৮ জন চাকরিহারা শিক্ষিকার কেউই এ দিন স্কুলে আসেননি। প্রধান শিক্ষিকা শম্পা পাল বলেন, “কেন ওঁরা স্কুলে আসেননি, তা জানি না। বেতন পোর্টাল আপডেট করতে আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করব। শিক্ষা দফতর থেকে কোনও নির্দেশ আসে কিনা দেখি।” আমডাঙা, দেগঙ্গা ও বারাসতের বেশ কিছু স্কুলেও শিক্ষকেরা যোগদান করেননি। এ দিন বিকেলে বারাসতের কাছারি ময়দান থেকে মিছিল করেন শিক্ষকদের একাংশ। তাঁদের দাবি, সরকারকে অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
উল্টো ছবি দেখা গিয়েছে কিছু স্কুলে। সাগরে নটেন্দ্রপুর নটেন্দ্রনাথ হাই স্কুলের চাকরি হারানো ন’জন শিক্ষকই এ দিন কাজে যোগ দেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সমীর বসু বলেন, “চাকরি হারানো সব শিক্ষকই স্কুলে ফিরেছেন। আমরাও সকলকে নিতে বাধ্য হয়েছি। কে যোগ্য বা কে অযোগ্য— তা তো আমরা জানি না। এখন সকলেই ক্লাস করাচ্ছেন। সরকারি নির্দেশ এলে তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভাঙড় গার্লস হাই স্কুলের সাত জন শিক্ষিকার চাকরি বাতিল হয়। এ দিন সকলে স্কুলে এসেছিলেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)