রাজপুরের হরকালী বিদ্যাপীঠে বুথে পড়ে ভাঙা ইভিএম। নিজস্ব চিত্র।
তখন ভোট পড়েছে মাত্র সাতটি। উত্তেজনা ছড়াল রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের রাজপুর বিদ্যানিধি হাইস্কুলের একটি বুথে। বুথে ঢুকে ইভিএম ভাঙচুর করে একদল লোক। এই ঘটনায় তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে নির্দল প্রার্থী-সহ বিরোধীরা। শাসক দলের পাল্টা অভিযোগ নির্দল প্রার্থীর বিরুদ্ধে। ওই পুরসভারই ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে আবার মহিলা নির্দল প্রার্থীকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে।
সকাল ৮টা। মহেশতলার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের চকচান্দুল অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথগুলিতে কোথাও বিরোধী এজেন্টের অস্তিত্ব নেই। বুথের ৫০ মিটারের মধ্যে দল বেঁধে রাস্তার ধারে বসে শাসক দলের মহিলাকর্মীরা। তাঁদের নজরদারি পেরিয়ে ভোট দিতে যেতে হচ্ছে সকলকে। বুথের আরও কাছাকাছি চার-পাঁচ জন তৃণমূল কর্মী নজরদারি চালাচ্ছেন। দেড়শো মিটার দূরে তখন ভোট দিয়ে ফেরা লোকজনের হাতে গুঁজে দেওয়া হচ্ছে টিফিনের প্যাকেট।
রাজপুর-সোনারপুরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে বিরোধী এজেন্টদের মারধর করে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসক দল। পুলিশের দাবি, অভিযোগ পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের চারটি বুথে ছ’টি ইভিএম মেশিন ভেঙে দেওয়া হয়। তৃণমূল প্রার্থী রাজীব চন্দের অভিযোগ, ‘‘নির্দল প্রার্থী শিশির ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে এমন ঘটেছে।’’ শিশিরের পাল্টা অভিযোগ তৃণমূলের দিকে। সূত্রের খবর, ইভিএম ভাঙচুরের ঘটনায় ছ’জনকে
গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কর্তব্যরত প্রিসাইডিং অফিসার বলেন, “একদল লোক এসে ইভিএম ভাঙচুর করে। আমরা নতুন ইভিএম দিয়ে ফের ভোট শুরু করি।’’
শাসক দলের বাইক-বাহিনীর দাপটে বিরোধীরা বাড়ি থেকে বেরোতে পারছেন না, এমন অভিযোগ পেয়ে সকালে মহেশতলার হেঁতালখালির পশ্চিম পাড়ায় রুট মার্চ করে পুলিশ। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দির স্কুলের বাইরেও দেখা গিয়েছে বাইক-বাহিনীর দাপট। সেখানে ‘ছাপ্পা’ আটকাতে বাম প্রার্থী শিল্পী চৌধুরীকে বুথের বাইরে বসে থাকতে দেখা যায়। নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক নন্দিনী ঘোষ ৩৪ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের একটি স্কুলের একাধিক বুথে ঢুকে দেখেন, সিসি ক্যামেরার মুখ দেওয়ালের দিকে ঘোরানো। তা আবার ঘেরাটোপের দিকে করার নির্দেশ দেন তিনি। আট নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থী শাহিদা খাতুনের এজেন্ট আলমগির মোল্লাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে।
সকালেই রাজপুর-সোনারপুরে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে মহিলা নির্দল প্রার্থী মহুয়া দাসকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ। মহুয়ার অভিযোগ, ‘‘বুথের ভিতরে সিসি ক্যামেরার মুখ উপর দিকে করে দেওয়া হয়েছিল। অবাধে চলছিল ছাপ্পা। প্রতিবাদ করায় শাসক দলের আশ্রিত গুন্ডারা আমার শাড়ি খুলে নেওয়ার চেষ্টা করে।’’ যদিও ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী দেবব্রত মণ্ডল একে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
পাশাপাশি সৌহার্দ্যের চিত্রও ছিল। সেখানে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে একসঙ্গে বুথে ঘুরতে দেখা যায় ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী নজরুল আলি মণ্ডল, বিজেপি প্রার্থী সুপ্রতিম কর্মকার ও কংগ্রেস প্রার্থী শাকাউদ্দিন মণ্ডলকে। নজরুল বলেন, ‘‘রাজনৈতিক মতভেদ থাকতেই পারে। কিন্তু অবাধ নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকাই বাঞ্ছনীয়।’’ বারুইপুর (পশ্চিম)-এর বিধায়ক তথা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সকাল থেকেই বারুইপুর পুরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডের বিভিন্ন বুথে ঘুরে ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।
ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুলে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তুষার ঘোষ বলেন, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে পুলিশ ও প্রশাসনকে নিয়ে ভোট লুট করেছে শাসক দল।’’ একই অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বিজেপি নেতা সুনীপ দাসও। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার এই রাজ্যে আর নেই।’’ তৃণমূলের মুখপাত্র তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পর্যবেক্ষক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘নির্বাচনে গো-হারা হারবে বলে আগে থেকেই ভোট লুটের গল্প ফেঁদে নিজেদের মুখ লুকনোর পথ খুঁজছেন বিরোধীরা।’’
মহেশতলার বাটানগর নিউল্যান্ড পার্ক এলাকায় ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সমন্বয় পল্লিতেও শাসক এবং বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান দেখা গিয়েছে। তবে ওই পুর এলাকায় সারা দিনে তেমন ভাবে বিজেপি কর্মীদের দেখা যায়নি। মহেশতলা পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান দুলাল দাস বলেন, ‘‘প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রস্তুতি ছাড়াই ভোটে নেমেছিলেন বিরোধীরা। ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ অর্থহীন। শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy