ভিড় ঠেলে যাতায়াত। ক্যানিংয়ে। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা
সরকারি বাস বাড়লেও ভিড়ের ছবি বদলাল না। সোমবার, সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে দুই ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা থেকে কলকাতাগামী বাসে এক চিলতে জায়গা জোগাড় করতে নাজেহাল হতে হয়েছে যাত্রীদের। যাত্রীদের মত, চাইলেও সুরক্ষাবিধি মানতে পারছেন না তাঁরা। তবে এ দিন গত সপ্তাহের থেকে ভিড় কিছুটা কম ছিল। সরকারি অফিসে দু’টি শিফটে ডিউটি, বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি এর একটি কারণ হলে অন্য কারণ- যৌথভাবে গাড়ি ভাড়া করে যাতায়াত করছেন অনেকেই। তবে স্থানীয় এলাকায় স্বল্প দূরত্বে চলাচল করা বাসে এদিনও যাত্রী চোখে পড়েনি।
কাঁচরাপাড়া, নৈহাটি, কল্যাণী এলাকায় শুরু হয়েছে নতুন পরিবহণ ব্যবসা। বিভিন্ন ট্রাভেলস সংস্থা কলকাতা পর্যন্ত ১৩ এবং ২০ আসনের বড় গাড়ি চালু করেছেন। সেখানে তাঁরা আসন পিছু মাসিক ভাড়ায় যাত্রী নিচ্ছেন। ভাড়া পড়ছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। কাঁচরাপাড়ার বাসিন্দা দুলাল সরকার বলছেন, “ট্রেনের মাসিক টিকিট ১৮৬ টাকা। এখন সেখানে তিন হাজার টাকা পড়ছে। কিন্তু উপায়ও কিছু নেই। এটাই হয়তো নিউ নরমাল।”
সরকারি অফিস খুললেও বনগাঁয় বাসে ভিড় বিশেষ হচ্ছে না। তবে সব আসনে যাত্রী থাকছে। বাসে ওঠা-নামার সময়ে দূরত্ববিধি শিকেয় উঠছে। কর্মস্থলে যাঁদের যেতেই হচ্ছে, তাঁদের বেশিরভাগ সাইকেল কিংবা মোটরবাইকে যাতায়াত করছেন। কেউ কেউ ২০-২৫ কিলোমিটারও সাইকেলে যাচ্ছেন। লোকাল ট্রেন চালু না হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন বনগাঁ-হাবড়া-অশোকনগর-গোবরডাঙার বাসিন্দারা। কলকাতা যাঁদের কর্মস্থল, বাধ্য হয়ে তাঁদের বাসেই যাতায়াত করতে হচ্ছে। ফলে কলকাতার বাসে ভিড় বাড়ছে। ভোগান্তি হচ্ছে বলে অনেকে একসঙ্গে গাড়ি ভাড়া করে যাতায়াত করছেন।
জয়নগরের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম লোকাল ট্রেন। কিন্তু ট্রেন নেই বলে বিস্তর সমস্যায় পড়ছেন এলাকার চাকরিজীবীরা। তাঁদের কথা ভেবে নিমপীঠ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত একটি বাস চালু হল সোমবার। স্ট্যান্ড থেকেই বাসটি ভর্তি হয়ে যায়। ৬টায় বাসটি নিমপীঠে এবং ফিরতি বাস ধর্মতলা থেকে বিকেল পাঁচটায় ছাড়বে। বাস বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা। এতদিন ট্রেনই ছিল ক্যানিং, গোসাবা, বাসন্তীর বাসিন্দাদের কলাকাতা যাওয়ার মূল উপায়। এখন কলকাতা যাওয়ার জন্য তাঁদের স্থানীয় বাস বা অটোতে করে বারুইপুর পর্যন্ত যাচ্ছেন। সেখান থেকে অন্য বাসে কলকাতা। অন্যান্য এলাকার মতো এখানেও তিন চারজন মিলে একটি গাড়ি গোটা মাসের জন্য ভাড়া করেছেন অনেকেই।
বসিরহাটের ছবিটা আবার আলাদা। কলকাতাগামী হাতে গোনা কয়েকটি বাস চললেও তাতে ভিড় নেই। কারণ ট্রেনে যে পথ দু’-আড়াই ঘণ্টায় যাওয়া যায়, বাসে লাগছে দ্বিগুণ সময়। যাঁরা নিয়মিত যাতায়াত করছেন, সময় এবং হয়রানি এড়াতে তাঁরা গাড়ি ভাড়া করে যাতায়াত করছেন। স্থানীয় এলাকায় যাঁদের অফিস, তাঁরা সাইকেল কিংবা মোটরবাইকে যাতায়াত করছেন। ছোঁয়াচ এড়াতে অনেকে বারাসত, এমনকী কলকাতাও বাইকে যাতায়াত করছেন।
শ্যামবাজার- ভাঙড়-কাঁঠালিয়া, এবং কাশীপুর-বালিহল্ট রুটে আগে প্রতিনিয়ত বাস চলত। এই রুটগুলিতে বাস চলাচল এখনও স্বাভাবিক হয়নি। তার ফলে নিউটাউন, সল্টলেক-সহ কলকাতার বাসিন্দাদের ভোগান্তি দিনদিন বাড়ছে। ঘটকপুকুর থেকে বাসন্তী হাইওয়ে দিয়ে বাবুঘাট, নবান্ন, রাজাবাজার রুটেও প্রচুর বাস চলত। সোমবার থেকে কেবলমাত্র ঘটকপুকুর-বাবুঘাট রুটে চলাচল করছে। নবান্ন এবং রাজাবাজারের যাত্রীদেরও ওই বাসেই যাতায়াত করতে হয়েছে। ফলে বাসগুলিতে অস্বাভাবিক ভিড় হয়েছে।
ভাঙড় থেকে জয়নগরের অফিসে যেতে হচ্ছে নাজমা সুলতানাকে। গণপরিবহণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ায় বেজায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁকে। আপাতত কয়েকজন মিলে গাড়ি ভাড়া করে যাতায়াত করছেন। কিন্তু, তাতে অনেকে বেশি টাকা খরচ হচ্ছে তাঁদের। ভাঙড়ের এক ছোট ব্যবসায়ী ইন্তিখাব আলম বড় বাজার থেকে মনোহারি দ্রব্য কিনে স্থানীয় দোকানগুলিতে সরবরাহ করেন। তিনি বলেন, “বাস চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় সমস্যায় পড়েছি। গাড়ি ভাড়া করে মাল এনে পোষাবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy