আবাস যোজনার টাকা না পাওয়ায় সম্পূর্ণ হয়নি বাড়ি তৈরির কাজ। — ফাইল চিত্র।
বনগাঁ ব্লকের ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতের বাসিন্দা রঞ্জিত সরকারে ইচ্ছে ছিল, সরকারি প্রকল্পে পাকা বাড়ি করবেন। চলতি বছরের মে মাসে তিনি আবাস যোজনার পাকা বাড়ির জন্য প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, দ্রুত স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে। কিন্তু দ্বিতীয় কিস্তির টাকা না মেলায় বাড়ি তৈরির কাজ শেষ করতে পারেননি।
হীরালাল দেবনাথ পাকা বাড়ির তৈরির জন্য চলতি বছরের জুন মাসে দ্বিতীয় কিস্তির ৫০ টাকা পেয়েছিলেন। কিন্তু তৃতীয় কিস্তির ১০ হাজার টাকা এখনও পাননি। ফলে তিনিও পড়েছেন সমস্যায়।
আবাস যোজনার পাকা বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেও সরকারি টাকা না পেয়ে অনেকেই বাড়ি তৈরির কাজ শেষ করতে পারেননি। আবার অনেকেরই নাম পাকা বাড়ি প্রাপকের তালিকায় উঠলেও টাকা পাননি।
চৌবেড়িয়া ২ পঞ্চায়েতের দমদমা এলাকার অনেক গরিব মানুষের নাম বিপিএল তালিকায় থাকলেও তাঁরা এখনও আবাস যোজনার পাকা বাড়ি পাননি। সত্য সর্দার, কালী সর্দার, খগেন সর্দারেরা জানালেন, কয়েকবার আবেদন করলেও মেলেনি পাকা বাড়ি।
প্রশাসন ও পঞ্চায়েত প্রধানেরা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার যোগ্য উপভোক্তাদের বাড়ি তৈরির প্রস্তাব দীর্ঘদিন আটকে রেখেছিল কেন্দ্র। ওই প্রকল্পে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সে কারণেই গরিব মানুষের পাকা বাড়ির স্বপ্ন থমকে ছিল।
প্রায় ৮ মাস পরে ওই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার আবার কাজ শুরু করার অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকারকে। সব মিলিয়ে ওই কাজে অর্থের পরিমাণ ৮২০০ কোটি টাকা। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় বরাদ্দ না পাওয়ায় রাজ্যের পক্ষে বাড়ি তৈরির কাজ কার্যত অসম্ভব ছিল। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, প্রকল্পের নাম নিয়ে কিছু জটিলতায় টাকাও আটকেছিল। সে জটিলতা কেটেছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণায় উপভোক্তারা নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে পঞ্চায়েত প্রধানেরাও স্বস্তি পাচ্ছেন।
বনগাঁ ব্লকের গঙ্গানন্দপুর পঞ্চায়েত এলাকায় টাকার অভাবে অনেক বাড়ি অসমাপ্ত হয়ে পড়ে আছে। পঞ্চায়েত প্রধান জাফর আলি মণ্ডল বলেন, ‘‘আবাস যোজনায় যাঁরা পাকা বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন, এতদিন টাকার অভাবে তাঁরা কাজ শেষ করতে পারেননি। তৃতীয় কিস্তির ১০ হাজার টাকা দেওয়া যায়নি। তৃতীয় কিস্তির টাকা পাননি এমন উপভোক্তার সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। এ ছাড়া, প্রায় ৭০০ পরিবারের নাম তালিকাভুক্ত করে রাখা আছে। টাকা পাওয়া গেলে তাঁরাও নতুন পাকা বাড়ি পাবেন।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আবাস যোজনার পাকা বাড়ির জন্য তিন কিস্তিতে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। প্রথম কিস্তিতে ৬০ হাজার, দ্বিতীয় কিস্তিতে ৫০ হাজার এবং তৃতীয় কিস্তিতে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘টাকার অভাবে কারও বাড়ি অর্ধেক হয়ে পড়েছিল, কেউ সবে বাড়ির কাজ শুরু করেছিলেন। প্রায় ৮ মাস টাকার অভাবে কাজ বন্ধ ছিল।’’
বনগাঁ ব্লকের বৈরামপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তনুজা খাতুন মোল্লা জানালেন, ৩৩৮০ জনের নাম পাকা বাড়ির জন্য তালিকাভুক্ত করা আছে। টাকার অভাবে বাড়ি দেওয়া যায়নি। বাগদা ব্লকের সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েতের প্রধান সৌমেন ঘোষ জানালেন, প্রায় ৩৫০০ জনের নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে। হাবড়া ২ ব্লকের ভুরকুন্ডা পঞ্চায়েতের প্রধান বৃন্দাবন ঘোষ জানান, পাকা বাড়ি তৈরির জন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তির টাকা কিছু মানুষের পাওয়া বাকি আছে। নতুন করে ১৮০০ জনের নাম তালিকায় আছে। টাকা এলে তাঁরাও পাবেন।
বিভিন্ন এলাকায় এর আগে আবাস যোজনার টাকা পাওয়া নিয়ে কাটমানি অভিযোগ উঠেছে। উপভোক্তাদের আশা, এত কিছুর পরে প্রকল্প ফের চালু হচ্ছে। আর যেন কোথাও কাটমানির চক্করে পড়তে না হয়। সম্প্রতি সরকারি আবাস যোজনায় পাকা ঘর পাইয়ে দেওয়ার নাম করে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক যুব তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। বাগদা ব্লকের আষাঢ়ু পঞ্চায়েতের পাটকেলপোতা এলাকার ঘটনা। প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করছে।
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, আবাস যোজনার পাকা বাড়ি পেতে হলে কাউকে টাকা দিতে হয় না। গোটা প্রক্রিয়া অনলাইনে পোর্টালের মাধ্যমে হয়। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, দুর্নীতির অভিযোগ পেলেই তদন্ত করে পদক্ষেপ করা হয়।
বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি রামপদ দাস বলেন, ‘‘এ বারও আমাদের আশঙ্কা, তৃণমূল নেতারা কেউ কেউ কাটমানি নেওয়ার নিতে পারেন। তবে এ বার আমরা দলের পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতন করব। বলব, পাকা বাড়ি তৈরির টাকা সরাসরি কেন্দ্র পাঠাচ্ছে তাদের জন্য। এখানে কাউকে কোনও টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কেউ এ বার কাটমানি নিতে চাইলে জেলে ঢুকবে।’’
তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসের কথায়, ‘‘আগেও এখানে স্বচ্ছতার সঙ্গে মানুষ আবাস যোজনার পাকা বাড়ি তৈরির টাকা পেয়েছেন। এ বারও পাবেন। বিরোধীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে মিথ্যে অভিযোগ তুলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে বিজেপি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy