পরিযায়ী: পাখির সমাবেশ স্বরূপনগরে। নিজস্ব চিত্র
এ যেন পাখিদের আশ্রম!
ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে। আবার সন্ধ্যা নামতেই ঘুম আসে পাখিদেরই গানে। ছবিটা স্বরূপনগরের চারঘাট পঞ্চায়েতের বাড়ঘরিয়া গ্রামের। আর এখানকার অন্যতম আকর্ষণ পাখিরালয়।
পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতী নদী। ওই গ্রামের শিরিশ, বাঁশ, বকুল, লম্বু, নিম, তাল, আমলকি, তেঁতুল, নারকেল, খেজুর গাছের ডালে বিকেল হতেই বক, টিয়া, পানকৌড়ি, ঘুঘু, শামুখখোল, শালিক, বুলবুলি, ময়না, কাক, বাবুইদের ভিড় লেগে যায়। গাছের ডালে ডালেই তাদের বাসা। ভোরের আলো ফুটতেই পাখির দল আকাশে উড়ে যায়। দিনান্তে ফেরে বাসায়। এ ভাবেই বছর কেটে যায়। তাই বাড়ঘরিয়া গ্রামে পাখিদের যাওয়া আসা কখনও বন্ধ হয় না।
এলাকাবাসীর দাবি, বর্তমানে পাখির সংখ্যা লক্ষ ছাড়িয়েছে। গত ৪০-৫০ বছর ধরে পাখিদের কলরবে মুখর হয়ে আছে বাড়ঘরিয়া গ্রাম। কোনও ঋতুতেই গ্রাম ছেড়ে যায় না পাখির দল। ২০০০ সালের বন্যার পরে অনেকে গ্রাম ছাড়লেও পাখিরা কিন্তু তাদের বাসা ছাড়েনি। বরং সংখ্যায় আরও অনেক গুণ বেড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকায় বহিরাগত কেউ এলেই ঘুরতে যান এই পাখিরালয়ে। শীত পড়তেই দূরদূরান্ত থেকে নানা প্রজাতির বড় পাখি আসতে শুরু করে এখানে। লাল, কালো, সবুজ কিংবা হলুদ পাখিদের নিরন্তর কলরব এবং তাদের বিষ্ঠায় গাছের গোড়া ভরে গেলেও গ্রামের মানুষ তাতে রাগ করে না। বরং চোরা শিকারিরা যাতে পাখি মারতে না পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, গাছের তলা পরিষ্কার করে ব্লিচিং ছড়ানো হয়। প্রতি দিন এখানে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন পাখি দেখতে। সেটা গ্রামের লোকের কাছে বেশ গর্বেরও। বেশ কয়েক বার পাখি মারতে এসে চোরা শিকারিরা গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়েছেন। বন্দুক রেখে গ্রাম ছাড়তে হয়েছে। সেই বন্দুক থানায় জমা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাহানারা বিবি বলেন, ‘‘এক সময়ে আরও গাছপালা ছিল। কালক্রমে বেশির ভাগ গাছ হয় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে, কিংবা ঘর-বাড়ি এবং জলাশয় তৈরির কারণে কমে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও কিন্তু পাখির দল গ্রাম ছাড়েনি। গ্রামে কোনও অনুষ্ঠান হলে মাইক কিংবা ঢাক-ঢোলের শব্দেও পাখির দল উড়ে যায় না।’’স্থানীয় জুলপিকার মণ্ডল, রহিসউদ্দিন বিশ্বাসের কথায়, ‘‘গ্রামের মানুষ পাখিদের ভালবাসে। আপনজনের মতো ওদেরও নিরাপত্তার কথা ভাবে। তাই চোরা শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা করতে আগলে রেখেছে।’’
চারঘাট পঞ্চায়েত প্রধান নাজমা খাতুন বলেন, ‘‘দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন ওই পাখিরালয় দেখতে। পাখিদের কেউ যাতে বিরক্ত না করে সে দিকে লক্ষ রাখেন গ্রামের মানুষ।’’ বিডিও বিপ্লব বিশ্বাস জানান, পাখিদের যাতে নিশ্চিন্তে থাকতে পারে সে দিকে নজর দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy