উদ্ধার হওয়া ভবঘুরে।
রাস্তার ধারে পড়ে থাকা ভবঘুরেকে দেখে শিউরে উঠছিলেন অনেকেই। লোকটির বাঁ পায়ের আঙুল থেকে পায়ের পাতার অর্ধেকটার হাড় বেরিয়ে আছে। বাকিটায় পোকা থিকথিক করছে। পাশ ফেরার ক্ষমতাটুকু নেই। কিন্তু নিষ্প্রাণ মুখগুলো শুধু এক পলক দেখে চোখ, নাক কুঁচকে চলে গিয়েছে। লোকটিকে হাসপাতালে পাঠানো দূর অস্ত্, এক ফোঁটা জল এগিয়ে দেননি কেউ।
স্টেশনের বাকি ভবঘুরে ও হকাররা অবশ্য আরপিএফ এর এক কনস্টেবলকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। তাতে কাজ হয়নি। শুধু প্রায় অচেতন লোকটির স্থান পরিবর্তন হয়েছে স্টেশনের বাইরে আইল্যান্ডের পাশে। ঠিক ওই জায়গাটিতেই অটোর লম্বা লাইন পড়ে প্রতিদিন সকালে। বুধবার সকালেও নাকে রুমাল চাপা দিয়ে অনেকেই যে যার গন্তব্যে চলে গিয়েছেন।
কিন্তু তারকেশ্বরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বাকিদের মতো চলে যেতে পারেননি। অটো থেকে নেমে ট্রেন ধরার জন্য ব্যারাকপুর স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন। ওই ভবঘুরেকে এ ভাবে পড়ে থাকতে দেখে আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করেন, কী ভাবে লোকটিকে হাসপাতালে পাঠানো যায়। ইতিমধ্যেই অবশ্য খবর পৌঁছেছিল ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামীর কাছে। সামনেই ছিলেন ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান উত্তম দাস। উত্তমবাবু মিটিং ছেড়ে পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্সটি নিয়ে চলে আসেন স্টেশনের কাছে। ওই ভবঘুরেকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে নিজেই ব্যারাকপুর বি এন বসু মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করান। রফিকুলও থেমে থাকেননি। পকেট থেকে দু’হাজার টাকা বের করে চেয়ারম্যানের হাতে দিয়ে বলেন, ‘‘ওঁর তো কেউ নেই। আমি সামান্য একটা কাজ করি। এটুকু টাকাই এই মুহূর্তে সঙ্গে ছিল। ওঁর চিকিৎসার জন্য যাতে খরচ হয় দেখবেন।’’ পুরসভার চেয়ারম্যানও উত্তমবাবু বলেন, ‘‘ভাল লাগল এই শহরের মানুষ না হয়েও এক জন ভবঘুরের জন্য মানিব্যাগ থেকে সব টাকা বের করে দিতে পারার মনটা যে আছে সেটা দেখে। এই মানুষগুলোর জন্য আমরা এখনও সামাজিক।’’
— নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy