সফল: রজত (বাঁ দিকে) ও রাকেশ সরকার। নিজস্ব চিত্র।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি সত্যিই ঘটে।
২০০৫ সালে গাইঘাটার চৌগাছা এলাকার বাসিন্দা যমজ ভাই রজত ও রাকেশ সরকার মাধ্যমিক পরীক্ষায় একই নম্বর পেয়ে সকলকে অবাক করেছিলেন। দু’জনেরই প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৫৭৭।
এ বছরের আইএসসি পরীক্ষায় কলকাতার ফ্র্যাঙ্ক অ্যান্টনি পাবলিক স্কুলের ছাত্র যমজ ভাই মহম্মদ আয়ান ও মহম্মদ আরশ মুস্তাফা দ্বিতীয় স্থানে থাকা ৫৮ জনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।
গাইঘাটার রজত-রাকেশ দু’জনেই আজ প্রতিষ্ঠিত। আয়ান-আরশের সাফল্যের কথা শুনেছেন তাঁরা। রজত বলেন, “সংবাদমাধ্যমে দু’ভাইয়ের সাফল্যের কথা পড়েছি। খুব আনন্দ হচ্ছে। নিজেদের মাধ্যমিকের ফলাফলের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। কখনও সুযোগ হলে ওদের সঙ্গে দেখা করে দু’জনকে উৎসাহ দিতে চাই। নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারি ওদের।”
মাধ্যমিক পরীক্ষার সাফল্যের পরে রজত-রাকেশরা নিজেদের পথপ্রদর্শক হিসেবে পেয়েছিলেন, দুই কৃতী যমজ ভাই, রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত ও তাঁর সহোদর শিক্ষাব্রতী অতীশ দাশগুপ্তকে। তাঁরা দু’জনেই স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় চমকপ্রদ ভাবে পেয়েছিলেন একই নম্বর। অসীম-অতীশের পরামর্শেই রজত ও রাকেশ মাইক্রো-বায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। রজত এখন একটি বেসরকারি সংস্থায় মাইক্রো বায়োলজিস্ট হিসেবে কর্মরত, রাকেশ বেলেঘাটার নাইসেডে ভাইরোলজি নিয়ে গবেষণা করছেন।
দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান রজত-রাকেশকে পারিবারিক অনটনের কারণে বাবা গণেশের সঙ্গে খেতে কাজ করতে হত। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনও দু’ভাই খেতে জন খাটতে গিয়েছিলেন। তাঁদের একই নম্বর প্রাপ্তির খবর প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকায়।
ওই সময়ে যমজদের একই নম্বর পাওয়ার খবর শুনে আনন্দ লুকোননি অসীম ও অতীশবাবু। তাঁদের আমন্ত্রণে রজত-রাকেশ মহাকরণে গিয়ে দেখা করেছিলেন এই দুই ভাইয়ের সঙ্গে। দুই ভাইকে তাঁরা মিষ্টি খাইয়েছিলেন। এরপর অসীম-অতীশ পৌঁছে গিয়েছিলেন রজত-রাকেশের চৌগাছার বাড়িতে। পরিবারের পক্ষে তাঁদের ডাবের জল ও নারকেল নাড়ু দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছিল।
দু’ভাইকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য কিছু আর্থিক সাহায্যও করেছিলেন অসীমবাবুরা। এর পাশাপাশি সব সময় রজত-রাকেশকে পরামর্শ দিয়ে এসেছেন অসীম ও অতীশ। রজত বলেন, “অসীমবাবুদের জন্যই আমরা মাইক্রো-বায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছি। কোন বিষয় নিয়ে আমাদের পড়াশোনা করা উচিত, তার পরামর্শ ওঁরাই দিয়েছিলেন।” দীর্ঘদিন অসীমবাবুর সঙ্গে তাঁদের ফোনে যোগাযোগ থাকলেও এখন আর নিয়মিত কথাবার্তা হয় না।
চৌগাছা মডেল অ্যাকাডেমি থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছেন রজত-রাকেশ। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন চাঁদপাড়া বাণী বিদ্যাবীথি স্কুল থেকে। উচ্চ মাধ্যমিকে তাঁদের নম্বরের ব্যবধান ছিল ১ নম্বর। পরে তাঁরা আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ থেকে বিএসসি ও বিধাননগর গর্ভমেন্ট কলেজ থেকে এমএসসি পাশ করেন। রজত জানান, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে তাঁদের দু’জনেরই প্রথম শ্রেণি ছিল, নম্বরের তফাতও ছিল সামান্য।
যমজ হলে কি জীবনে সাফল্য পেতে সুবিধা হয়?
রজতের কথায়, “যমজ মানে এক সঙ্গে বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা-খেলাধূলা সবেতেই একে অন্যকে সাহায্য করা। একজনের খামতি অন্যজন পূরণ করে দিতে পারার সুযোগও থাকে। জীবনের লক্ষ্যপূরণে এক সঙ্গে এগিয়ে চলার আনন্দই আলাদা।”
২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রজত-রাকেশদের পারিবারিক অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। টিন-বেড়ার ঘর থেকে পাকা একতলা বাড়িতে চলে গিয়েছেন তাঁরা। দু’জনেই এখন বিবাহিত। গণেশের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে মেয়ে বড়। তিনি একজন নার্স। রজত-রাকেশের সাফল্যে খুশি বাবা। পরিবারে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরেছে। কৃষি জমি ভাগ দিয়েছেন। তবে গণেশ মাঝেমধ্যে চাষবাস করেন। সোমবার তিনি বললেন, “আয়ান ও আরশের সাফল্যের কথা শুনেছি। নিজের ছেলেদের কথা মনে পড়ছে। ওরাও জীবনে সফল হোক এই আশীর্বাদ করি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy