(বাঁ দিকে)সুদেব মাটি, বিজেপি প্রার্থী এবং মহাদেব মাটি, তৃণমূল প্রার্থী। ছবি: সুজিত দুয়ারি।
দু’জনেই গ্রামবাসীদের আপদে-বিপদে পাশে থাকার সুবাদে পরিচিত মুখ। এক জন সুদেব মাটি, অন্য জন মহাদেব মাটি। সম্পর্কে সহোদর। কিন্তু ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে দু’জন দু’টি বিপক্ষ দলের হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দাদা সুদেব বিজেপির প্রার্থী ও ভাই মহাদেব তৃণমূলের হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। অশোকনগরের হাবড়া ২ ব্লকের ভুরকুন্ডা পঞ্চায়েতের ৩১ নম্বর আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাঁরা।
এই পরিস্থিতিতে গ্রামের অনেকে বিড়্ম্বনায়। এক বাসিন্দার কথায়, “দুই ভাইয়ের মধ্যে এক জনকে বেছে নিতে কিছুটা সমস্যা তো হবেই। তবে তারই মধ্যে দেখতে হবে কে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে অভাব-অভিযোগ শুনে সমস্যার সমাধান বেশি করে করতে পারবেন।”
সুদেব ও মহাদেব জানালেন, ভোটের ময়দানে লড়াইয়ে নামলেও ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সম্পর্কের কোনও অবনতি হবে না। দু’জনের বাবা-মা মারা গিয়েছেন। মহাদেব মাছের ব্যবসা করেন। সুদেব বিদ্যুতের কাজের সঙ্গে যুক্ত। একই এলাকায় থাকেন তাঁরা, তবে হাঁড়ি আলাদা। দু’জনের মধ্যে সুসম্পর্ক আছে। দু’ভাই একই সঙ্গে বিডিও অফিসে গিয়ে পাশাপাশি বসেই দু’টি দলের হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কর্মীদের নিয়ে গ্রামে প্রচারেও নেমে পড়েছেন। বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গিয়ে নিজেদের মতো করে মানুষের কাছে ভোট চাইছেন।
সুদেব বলেন, “দু’টি আলাদা দলের হয়ে ভোটে দাঁড়ালেও আমরা কোনও গন্ডগোল বা অশান্তি চাই না।” ভাই মহাদেবের ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে সুদেব বলেন, “ভাই দুর্নীতিগ্রস্তদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছেন। তৃণমূল ভাইকে ব্যবহার করছে। তৃণমূলের সমর্থক তো অনেকেই ছিলেন। কেন একই পরিবার থেকে ওঁরা প্রার্থী করলেন? তৃণমূল এখানে গোষ্ঠীকোন্দলে জেরবার।” প্রচারের বেরিয়ে কেউ কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন না। সুদেব বলেন, “সব বাড়ি গিয়ে মানুষকে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতির কথা বলছি। একশো দিনের কাজ প্রকল্পে দুর্নীতি, আবাস যোজনায় দুর্নীতি— গ্রামের মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে এ সব জানেন। সে সবই মনে করিয়ে দিচ্ছি।”
কেন বিজেপিকে সমর্থন করেন?
সুদেব বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাজকর্ম আমার ভাল লাগে। সে কারণেই বিজেপি করছি অনেক দিন ধরে।”
অন্য দিকে, তৃণমূল প্রার্থী মহাদেব প্রচারে বেরিয়ে মানুষের কাছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কথা বলছেন। মহাদেব বলেন, “দিদি যে মানুষের স্বার্থে ২৮টি প্রকল্প চালু করেছেন, এখানকার মানুষ তার পরিষেবা পাচ্ছেন, উপকৃত হচ্ছেন। ফলে মানুষের কাছে ভোট চাইতে আমার কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।”
সাম্প্রতিক সময়ে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের নাম দুর্নীতিতে জড়িয়েছে। প্রচারে বেরিয়ে এ সব কথা শুনতে হলে মহাদেব বলছেন, “দলের মধ্যে থেকে যাঁরা দুর্নীতি করেছেন, নেতৃত্ব তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেছেন। তা এখানকার মানুষ জানেন। আমরা দুই ভাই ভোটে দাঁড়ালেও আমাদের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। দুই পরিবারে শান্তি বজায় থাকবে।”
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে চারিদিকে হিংসা ও অশান্তির মধ্যে এই দুই ভাইয়ের সম্প্রীতির গল্লটা যে একটু আলাদা, তা মানছেন গাঁয়ের মানুষজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy