প্রতীকী চিত্র
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখার পরেই ধরা পড়ল বড়বাজারের ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডলকে খুনে জড়িত আততায়ীরা। ওই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে নারকেলডাঙা থানা এলাকার বাসিন্দা জনিসর আলম ওরফে রিকি এবং মহম্মদ সাদ্দামকে গ্রেফতার করার পরে এমনই দাবি করছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ।
শনিবার রাতে কলকাতায় দুই অভিযুক্তকে আটক করে রবিবার রায়না থানায় নিয়ে আসা হয়। পূর্ব বর্ধমানের জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদের পরে দু’জনকে দুপুরে গ্রেফতার করা হয়। জড়িত বাকিদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।’’
হাওড়ার বাসিন্দা সব্যসাচী মণ্ডল গত ২২ অক্টোবর রায়নার দেরিয়াপুরে পৈতৃক বাড়িতে দেহরক্ষী, রাঁধুনি ও গাড়ির চালককে সঙ্গে নিয়ে যান। সে রাতে আটটার আশপাশে ওই বাড়িতেই আততায়ীরা তাঁকে কুপিয়ে খুন করে বলে পুলিশের দাবি। ময়না-তদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, সব্যসাচীর দেহে ৪৭টি আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাতে ছিল গুলির দাগ। আগেও হাওড়া ও কলকাতায় তাঁর ছেলের উপরে হামলা হয়েছে বলে দাবি করেন নিহতের বাবা দেবকুমার মণ্ডল। রায়না থানায় নিজের ছোট ভাই ও তাঁর সন্তানদের বিরুদ্ধে ‘লোক লাগিয়ে’ খুনের অভিযোগও দায়ের করেন তিনি। তদন্তকারীদের দাবি, পারিবারিক বিবাদের জেরেই এই খুন বলে তাঁরা মনে করছেন। তাঁদের দাবি, সব্যসাচীকে খুনের জন্য তাঁর এক আত্মীয় এক সময়ে বড়বাজারে সিসি ক্যামেরার ব্যবসায়ী রিকিকে ৫০ লক্ষ টাকা ‘সুপারি’ দিয়েছিল।
তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, সব্যসাচীর গাড়ি ছাড়াও ওই দিন বিকেলে আরও একটি গাড়ি গ্রামের পিছন দিক দিয়ে ঢুকেছিল। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের হরেকৃষ্ণ সেতু, মশাগ্রামের একটি দোকান এবং পালসিট ও ডানকুনির টোল প্লাজ়ারও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে সন্দেহজনক গাড়ি এবং তার আরোহীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চালায় পুলিশ। খোঁজ মেলে গাড়ির মালিক সাদ্দামের। পুলিশের দাবি, ওই গাড়িতেই রিকির সঙ্গে সাদ্দাম-সহ আরও কয়েক জন ছিল। বড়বাজার এলাকায় ফুটেজের ছবি দেখিয়ে শনাক্ত করা হয় রিকিকেও। পূর্ব বর্ধমান ও কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, খুনের পরেই আনন্দপুরের গুলশন কলোনিতে ডেরা বাঁধে রিকি। সেখানে হানা দিয়ে পুলিশ তাকে আটক করে।
তদন্তকারীদের দাবি, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তাঁরা দেখেছেন, সব্যসাচীর গাড়ি জামালপুরের সেতু পার হয় দুপুর ২টো ৩৯ মিনিট নাগাদ। এর প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে সন্দেহজনক ওই গাড়ি সেতু পার হয়। তবে গাড়িটি সোজা রায়নার দিকে না গিয়ে ডান দিকে বেঁকে নসিপুর হয়ে ঢুকে যায়। সে দিক দিয়েও দেরিয়াপুরে যাওয়া যায়। ওই গাড়িটিকে ফের রাত পৌনে ৯টা নাগাদ সেতুর কাছে দেখা যায়। পরে ফের ডানকুনি টোল প্লাজ়ায় দেখা যায়।
তদন্তকারীদের দাবি, দেরিয়াপুরের ওই বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে গাড়ি রাখে দুষ্কৃতীরা। বাড়িতে ঢুকে রিকিই সব্যসাচীর উপরে গুলি চালায়। বাকিরা সব্যসাচীর উপরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। খুনের পরদিন দেরিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশে নয়ানজুলি থেকে গ্রামবাসীরা একটি ব্যাগ উদ্ধার করেন। তাতে দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ ও রক্তমাখা ভোজালি ছিল বলে পুলিশের দাবি। এই খুনের সঙ্গে ওই অস্ত্রশস্ত্রের যোগ রয়েছে কি না, পুলিশ তা দেখছে।
কিছু প্রশ্ন তদন্তকারীদের ভাবাচ্ছে। দেরিয়াপুরে সব্যসাচীর যাওয়ার খবর আততায়ীদের কে দিল? কে তাদের রাস্তা চেনাল? কী ভাবে তারা বাড়িতে ঢুকল? কেউ কি দরজা খুলে রেখেছিল? ব্যবসায়ী রিকি কী ভাবে ‘সুপারি কিলার’ হয়ে উঠল, তা-ও ভাবাচ্ছে পুলিশকে। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম খান বলেন, “সব প্রশ্নেরই উত্তর মিলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy