Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
নিখোঁজ ১৬ জন, বেপাত্তা ট্রলার

ঝড়ের পূর্বাভাস মেলেনি কেন, প্রশ্ন কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীদের

কিছু দিন আগেই ট্রলার চরায় ধাক্কা খেয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন ৪ মৎস্যজীবী। তাঁদের দু’জনের দেহ মিললেও, এখনও দু’জনের খোঁজ নেই।

নামখানায় একে একে ফিরে আসছে ট্রলার। নিজস্ব চিত্র।

নামখানায় একে একে ফিরে আসছে ট্রলার। নিজস্ব চিত্র।

শান্তশ্রী মজুমদার
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৬ ০২:২৪
Share: Save:

কিছু দিন আগেই ট্রলার চরায় ধাক্কা খেয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন ৪ মৎস্যজীবী। তাঁদের দু’জনের দেহ মিললেও, এখনও দু’জনের খোঁজ নেই। একই রকম ভাবে সোমবার রাতে নিম্নচাপের ঝড়বৃষ্টির কবলে উত্তাল সমুদ্রে ১টি ট্রলার নিখোঁজ হয়েছে। অন্য একটি ট্রলার থেকে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন আরও কয়েকজন মৎস্যজীবী। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ১৬ জন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আরও কয়েকটি ট্রলারের সঙ্গে। মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির আবেদনে মৎস্য দফতরের মাধ্যমে উদ্ধার কাজে নামানোর চেষ্টা চলছে উপকূলরক্ষী বাহিনীকে।

এ দিকে, সমু‌দ্র-ঝড়ের আগামবার্তা মৎস্যজীবীদের কাছে পৌঁছয়নি বলে দাবি করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কাকদ্বীপের মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি। মৎস্য দফতরের কর্তারা দাবি করছেন, তাদের কাছেও আলিপুর থেকে এ রকম কোনও খবর দেওয়া হয়নি।

ইউনাইটেড ফিসারমেন অ্যাসোসিয়েশেনর নেতা তথা কাকদ্বীপের ট্রলার মালিক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘বার বার কেন এ ভাবে আগাম খবর থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে মৎস্যজীবীদের? আমরা বিষয়টি নিয়ে মৎস্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানাব।’’

জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘আবহাওয়া দফতর থেকে প্রতিনিয়ত মৎস্য দফতর এবং প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়।’’ তা হলে মঙ্গলবারের খবর আগাম কেন জানানো গেল না?

ওই কর্তার ব্যাখ্যা, এর আগে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মাধ্যমে এ সব খবর মৎস্যজীবীদের কাছে পৌঁছলেও গত ৩ অগস্ট থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পরে ঠিক হয়েছে, এ রকম ঝড় বা আবহাওয়া খারাপ হওয়ার খবর এখন থেকে সরাসরি আলিপুর থেকে মহকুমাশাসকের মাধ্যমেই পৌঁছে যাবে মৎস্যজীবীদের কাছে। যদিও কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক রাহুল নাথ এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।

মৎস্য দফতর সূত্রে অবশ্য অন্য দাবি করা হয়েছে। সহ মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিৎকুমার বাগ বলেন, ‘‘আমাদের কাছে গত রাতের আবহাওয়া খারাপ হওয়া সংক্রান্ত কোনও খবরই আসেনি। তাই মৎস্যজীবীদের জানানো যায়নি। উপকূলরক্ষী বাহিনীকে খবর দেওয়া হয়েছে। তবে যে এলাকায় এগুলি নিখোঁজ হয়েছে, সেগুলির বেশিরভাগই নাব্যতা কম বলে কোনও জলযান পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। অন্যান্য ট্রলার দিয়েই বাকিদের খোঁজা হচ্ছে।’’

জানা গিয়েছে, সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার ভোরের মধ্যে সমুদ্র প্রবল বেগে ঝড় ওঠে। উত্তাল সমুদ্রে বড় বড় ঢেউ তৈরি হয়। তার জেরেই বিপদে পড়ে ট্রলারগুলি। কোনওটিতে জল ঢুকে যায়, কোনওটির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে পড়ে। সোমবার রাত থেকে চারটি ট্রলারের মোট ৩৯ জন নিখোঁজ থাকলেও মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যে অনেকগুলির খোঁজ পাওয়া যায়। উদ্ধার হয়েছে দু’টি ট্রলার।

অক্ষয়নগরের ট্রলার ‘এফবি গঙ্গাময়ী’ ১৫ জন মৎস্যজীবীকে নিয়ে রবিবার রওনা হয়েছিল কাকদ্বীপ থেকে। সোমবার রাতের পরে নিখোঁজ হয়ে যায় ওই ট্রলারটি। বকখালি উপকূল থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দক্ষিণে তার শেষ অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ চিহ্নিত করা গিয়েছিল ওয়্যারলেসে যোগাযোগের মাধ্যমে। অন্য একটি ট্রলার ‘এফবি পল্লবী’র দুই মৎস্যজীবী ট্রলার থেকে পড়ে যান। ওই ট্রলারটিকে বাঘের চর এলাকা থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে অন্য একটি ট্রলার।

ও দিকে, বকখালি থেকে প্রায় চার ঘণ্টার দূরত্বে থাকা কিরণময়ী-২ ট্রলারটির ইঞ্জিন খারাপ হয়ে গেলে তাতে জল ঢুকে যায়। ফোনে যোগাযোগ করা হলে ওই ট্রলারের মাঝি স্বপন দাস বলেন, ‘‘আমরা সারা রাত ধরে চেষ্টা করেও ইঞ্জিন সারাতে পারিনি। সকালে অন্য একটি ট্রলার আমাদের সকলকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পরিস্থিতি যা ছিল, ফিরতে পারব বলে ভাবিনি।’’ তবে মৎস্যজীবীরা উদ্ধার পেলেও শেষমেশ গভীর সমুদ্রে ডুবে গিয়েছে কিরণময়ী-২ ট্রলারটি।

মাছধরা ট্রলারগুলি রবিবার ও সোমবার বের হয়েছিল গভীর সমুদ্রে। সোমবার রাতে আবহাওয়া হঠাৎ খারাপ হয়ে গেলে ফেরার চেষ্টাও করেছিল। রায়দিঘিরও একটি ট্রলার ‘এফবি ভবানী’ রবিবার রাতে ফ্রেজারগঞ্জ থেকে বের হয়েছিল। ফেরার পথে কেঁদো দ্বীপের কাছে ইঞ্জিন খারাপ হয়ে যায়। সেটিকে অন্য একটি ট্রলার উদ্ধার করে নিয়ে আসে মঙ্গলবার। রাতে ১৮ জন মৎসজীবী নিয়ে নিখোঁজ থাকা ‘এফবি ঝড়’ নামে আরও একটি ট্রলারের খোঁজ মেলে মঙ্গলবার বিকেলে। শেষরাতের ওই ঝড়ের পরে আরও কয়েকটি ট্রলারের সঙ্গে ওয়্যারলেস যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলে জানান মৎস্যজীবী সংগঠনের কর্তারা।

অন্য বিষয়গুলি:

Troller people
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE