গ্রামের মানুষকে আতঙ্কিত রাখতে নিজস্ব বাহিনী তৈরির পাশাপাশি বোমা তৈরির দলও তৈরি করেছিল অশোকনগরের দিঘড়া মালিকবেড়িয়া অঞ্চলের তৃণমূল যুব নেতা হাসেম আলি মণ্ডল। তদন্তে নেমে এমনই দাবি করেছে পুলিশ। সেই তথ্যের উপরে ভিত্তি করে মঙ্গলবার রাতে অভিযানে নামে পুলিশ। দিঘড়া পালপাড়া এলাকায় সজলধারা জল প্রকল্পের পরিত্যক্ত ঘর থেকে উদ্ধার হলেছে ছ’টি বোমা, বোমা তৈরি উপকরণ। পুলিশের দাবি, ওই ঘরে বসেই বানানো হত বোমা। রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে হাসেমের আরও দুই সাগরেদকে।
পুলিশ জানিয়েছে ধৃতদের নাম সুমন চক্রবর্তী ওরফে পাপাই এবং সুমন সরকার। তাদের বুধবার বারাসত জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, পরিত্যক্ত ঘরটি তালা দেওয়া। পাশেই বাগান। সেখানে শুকনো পাতার মধ্যে পড়ে আছে মদ খাওয়ার গ্লাস, চাট।
ওই জলপ্রকল্পের পরিত্যক্ত ঘরে বসে দুষ্কর্মের ছক কষা হত বলে জানাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। দিনে-রাতে সেখানে আড্ডা বসত, ছুটত মদের ফোয়ারা। ঘরে সব সময়ে বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র মজুত থাকত বলেও জানাচ্ছেন গ্রামের অনেকে। এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘হাসেমের দলবল ওখানে বসত, বাইকে করে বাইরে থেকেও অনেকে আসত। রোজ নেশার আসত বসত।’’
এলাকায় আছে হাই স্কুল, প্রাথমিক স্কুল। ঘরের সামনে দিয়েই ছেলেমেয়েদের যাতায়াত করতে হত। অনেকে ঘুরপথে যাতায়াত করতেন। সন্ধ্যার পরে কেউ ওই পথ মাড়াতেন না।
গ্রামবাসীদের অনেকের অভিযোগ, ওই জায়গায় একটি ত্রিফলা আলো লাগানো হয়েছিল। বাহিনীর সদস্যেরা তা ভেঙে দেয়।
এত দিন পুলিশকে জানাননি কেন?
গোবিন্দ শীল নামে এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘ওদের দৌরাত্ম্যের কথা পুলিশকে জানালে খুনও করে দিতে পারত।’’ অনেকেই জানাচ্ছেন, হামলার ভয়েই কেউ মুখ খুলতেন না। এক মহিলার কথায়, ‘‘গত পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে ওই ঘরে আড্ডা, নেশা শুরু হয়। হাসেম রোজ আসত না। মাঝে মধ্যে দেখা যেত। তবে সব সময়ে ১০-১৫ জন যুবক ওখানে থাকত।’’ এক বৃদ্ধের কথায়, ‘‘গ্রামেঝোপ-জঙ্গল আছে। সে সব মধ্যেও বোমা থাকতে পারে। খুবই ভয়ে আছি।’’
ওই ঘরটির কাছেই আছে হাসেমের ইমারতি মালপত্রের ব্যবসা। ২০২৫ সালকে ‘স্বাগত জানিয়ে’ হাসেমের নামে বড় বড় হোর্ডিং, ব্যানার চোখে পড়ল। কিন্তু হাসেম গেল কোথায়? পুলিশ জানিয়েছে, তার ফোন বন্ধ। খোঁজ চলছে। মঙ্গলবার রাতে বেশ কিছু বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। হাসেমের সাগরেদরা সব গ্রামছাড়া। রবিবার রাতে দিঘড়া উত্তরপাড়া এলাকায় বোমাবাজি এবং গুলি চালানোর ঘটনায় পুলিশ এখনও পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে। ওই ঘটনায় মূল মাথা হাসেমের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)