প্রতীকী চিত্র।
বছর পাঁচেক আগে পুরসভা নির্বাচনে দক্ষিণবঙ্গে একমাত্র জয়নগর-মজিলপুর পুরসভাই হাতছাড়া হয়েছিল তৃণমূলের। বিধানসভায় বিপুল জয়ের পর এ বার সেই সেই অধরা পুরবোর্ড দখল করতে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল।
তৃণমূল সূত্রের খবর, ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি শওকত মোল্লাকে সামনে রেখে জয়নগর পুরবোর্ড উদ্ধারে নামতে চলেছে তারা। ইতিমধ্যে জয়নগরের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন শওকত।
শওকত বলেন, “আগামী পুরবোর্ডে জেলার সব ক’টি পুরবোর্ডই দখল করবে তৃণমূল। সেই লক্ষ্যেই আমরা এগোচ্ছি। জয়নগরেও আমরাই বোর্ড গড়ব। দল আমাকে প্রাথমিক ভাবে দায়িত্ব দিয়েছে। ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। আশেপাশের আট-দশটি বিধানসভা এলাকার বিধায়কদের এনে একেকটি ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হবে।”
গত পুরভোটে জয়নগর-মজিলপুর পুরসভার ১৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টি আসন জিতে বোর্ড গঠন করেছিল কংগ্রেস। তৃণমূল জেতে চারটি আসনে। এ ছাড়া, দু’টি ওয়ার্ডে এসইউসি ও একটি ওয়ার্ডে জেতেন সিপিএম প্রার্থী। এসইউসি ও সিপিএম কাউন্সিলাররা ভোটের পরে কংগ্রেসকেই সমর্থন জানান।
পুরপ্রধান নির্বাচিত হন কংগ্রেসের সুজিত সরখেল। দীর্ঘদিন ধরেই এই পুরসভা কংগ্রেসের ‘শক্ত ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু গত কয়েক বছরে এখানে ভোট কমেছে কংগ্রেসের। সেই জায়গায় ক্রমশ শক্তিশালী হয়েছে বিজেপি। লোকসভা-বিধানসভায় বিপুল ভোটে জিতলেও, পুর এলাকায় বরাবরই দ্বিতীয় দল হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তৃণমূলকে।
গত লোকসভা ভোটে জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী। কিন্তু পুর এলাকার ওয়ার্ডভিত্তিক ফলাফলে সব থেকে বেশি ভোট পায় বিজেপি। সম্প্রতি বিধানসভা নির্বাচনেও জয়নগর কেন্দ্রে বিপুল ভোটে জিতেছে তৃণমূল। কিন্তু পুর এলাকায় এগিয়ে ছিল বিজেপিই। কংগ্রেসের পাশাপাশি গত দু’টি ভোটেই ভোট কমেছে বাম-এসইউসিরও।
পর পর নির্বাচনে পুর এলাকায় তৃণমূলের ভরাডুবির জেরেই শওকতকে দায়িত্ব দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে মত অনেকের। বিধানসভা নির্বাচনেও নিজের কেন্দ্রের পাশাপাশি একাধিক কেন্দ্রের দায়িত্ব সামলেছেন তৃণমূলের এই দাপুটে নেতা। সম্প্রতি জয়নগরের টাউন হলে একটি অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন শওকত। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই স্থানীয় নেতৃত্বকে পুরভোটের প্রস্তুতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার পরামর্শ দেন তিনি। লোকসভা ও বিধানসভায় পুর এলাকায় তৃণমূলের হারের হতাশা ঝেড়ে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানোর কথাও বলেন।
জয়নগর টাউন তৃণমূলের সভাপতি প্রবীর চক্রবর্তী বলেন, “পিছিয়ে থাকলেও গত দু’টি নির্বাচনে পুর এলাকায় তৃণমূলের ফল ভাল হয়েছে। আগামী নির্বাচনে মানুষ তৃণমূলকেই চাইছেন।”
তৃণমূলের দাবি, স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব গত দু’টি ভোটেই বিজেপির হয়ে কাজ করেছে। তার জেরেই পুর এলাকায় ভোট বেড়েছে বিজেপির। আগামী নির্বাচনেও বিজেপির সঙ্গেই মূল লড়াইটা হতে চলেছে বলে মনে করছে তৃণমূলের একাংশ। শওকতও এ দিন তাঁর বক্তব্যে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার কথাই বলেন।
বিজেপির দক্ষিণ ২৪ পরগনা পূর্ব সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুনিপ দাস আবার বলেন, “গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে জয়নগর পুর এলাকার মানুষ আমাদের উপরে আস্থা রেখেছেন। আসন্ন পুর নির্বাচনে আমরাই ওখানে বোর্ড গঠন করব।”
পুর এলাকায় কংগ্রেসের সমর্থন এখনও রয়েছে, তা মানছে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল। কংগ্রেস নেতা তথা বর্তমানে পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর প্রধান সুজিত সরখেল বলেন, “শওকত মোল্লাকে এনে তৃণমূল মানুষের রায়ের থেকে বন্দুকের নলের উপরে ভরসা করতে চাইছে। সেই ভরসাতেই শওকত এখন থেকেই এত নিশ্চিত হয়ে বোর্ড গঠনের কথা বলছেন। শতাব্দীপ্রাচীন জয়নগরের সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ ভোটেই এর জবাব দেবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy