থানায় পড়ে রয়েছে ইট(বাঁ দিকে)। ডান দিকে উপরে, জখম পুলিশ কর্মীরা। কিছু পুলিশকর্মী চিকিৎসাধীন। ডান দিকে নীচে, এলাকায় পুলিশের টহল। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা
থানা থেকে দলীয় কর্মীদের ছাড়াতে এসে পুলিশের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ইট ছোড়া হয় পুলিশকে। প্রায় ২৪ জন পুলিশ জখম হয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়। কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটানো হয়। রবিবার সকালে পুলিশ-তৃণমূল সংঘর্ষে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ছোট মোল্লাখালি বাজার এলাকা।
তৃণমূল-বিজেপির গন্ডগোলের জেরে বেশ কয়েকদিন ধরেই অশান্তি শুরু হয়েছিল সুন্দরবন কোস্টাল থানার তারানগর গ্রামে। শনিবারও এলাকায় দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে গোলমাল হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। খবর পেয়ে সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশ এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে দু’পক্ষের ছ’জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের মধ্যে তৃণমূলের চারজন কর্মী রয়েছে। অভিযোগ, এদের ছাড়াতে এ দিন তৃণমূল কর্মীরা থানায় এসে তাণ্ডব বাধায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকায় রাজনৈতিক অশান্তি রুখতে শনিবার সন্ধ্যায় এসআই সুকুমার রুইদাসের নেতৃত্বে সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশ তারানগর গ্রামে যায়। এলাকায় অশান্তির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তৃণমূলের অসিত দলুই, পঞ্চানন দলুই, বিশ্বজিৎ দলুই ও সুখরঞ্জন বারুইকে গ্রেফতার করা হয়। পাশাপাশি বিজেপির দুই কর্মী লোকনাথ দাস ও দেবশঙ্কর বারুইকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। দলীয় কর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে রবিবার সকালে প্রায় হাজার দু’য়েক তৃণমূল কর্মী সুন্দরবন কোস্টাল থানার সামনে দলীয় পতাকা নিয়ে উপস্থিত হন। তাঁদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় কয়েকজন থানার মধ্যে যান। থানায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের ধৃত তৃণমূল কর্মীদের ছেড়ে দিতে বলেন তারা। কিন্তু পুলিশ তা করতে রাজি না হলে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয়। আচমকা থানার লকআপ থেকে বন্দি তৃণমূল কর্মীদের ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে শুরু করে তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। অভিযোগ, পুলিশ তাতে বাধা দিলে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। সেই সময় থানা থেকে তৃণমূলের নেতারা বেরিয়ে এসে বাইরে থাকা কর্মীদের পুলিশের বিরুদ্ধে উস্কে দেন বলে অভিযোগ। এতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। থানা লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। তৃণমূল কর্মীদের ছোড়া ইটের ঘায়ে সিভিক ভলান্টিয়ার, মহিলা পুলিশ কর্মী, এসআই ও এ এসআই-সহ মোট ২৪ জন পুলিশ কমবেশি জখম হন। ইটবৃষ্টি থেকে বাঁচতে থানার মধ্যেই লুকোতে বাধ্য হন পুলিশ কর্মীরা। শুধু থানা ভাঙচুর নয়, থানার জিনিসপত্রও লুটপাট করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। থানা থেকে দু’টি মোটরবাইক চুরি করে পালিয়ে যায় তৃণমূলআশ্রিত দুষ্কৃতীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে শুরু করে। লাঠি চালানো হয়। ফাঁকা হয়ে যায় এলাকা। পুলিশের মারে বেশ কয়েকজন তৃণমূল কর্মীও আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।
ঘটনার পরে এসডিপিও (ক্যানিং) দেবীদয়াল কুণ্ডুর নেতৃত্বে পুলিশবাহিনী এলাকায় পৌঁছয়। আশপাশের এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মোট সাতজনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় এখনও উত্তেজনা থাকায় সেখানে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। সুন্দরবন কোস্টাল থানার এক আক্রান্ত সাব-ইন্সপেক্টর বলেন, “আমি টেবিলে ডিউটি করছিলাম। শান্তিপূর্ণ ভাবে আলোচনার নাম করে তৃণমূল নেতারা থানা থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা বাধা দিতেই আমাদের উপর হামলা শুরু হয়ে যায়। তারা থানা থেকে বেরিয়েই থানা লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকে।”
যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল। গোসাবার তৃণমূল বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর বলেন, “এই ঘটনায় আমাদের দলের কর্মীরা কেউ জড়িত নয়। বিজেপি পরিকল্পিত ভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে থানায় হামলা চালিয়েছে, ভাঙচুর করেছে। বহু পুলিশকর্মী এই ঘটনায় জখম হয়েছেন। নিজেদের দোষ আমাদের দলের কর্মীদের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে বিজেপি।” তৃণমূলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পূর্ব সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি হরিকৃষ্ণ দত্ত বলেন, “রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা একেবারেই নেই। বার বার পুলিশ আক্রান্ত হচ্ছে। এ দিনও তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা থানায় ভাঙচুর চালাল, পুলিশ কর্মীদের উপর হামলা চালাল। নিজেরা এই ঘৃণ্য কাজ করে আমাদের নামে দোষ দিয়ে বদনাম করার চেষ্টা করছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার করুক।” এ বিষয়ে তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, “একটা গোলমালকে কেন্দ্র করে পুলিশ তৃণমূলের কিছু নির্দোষ কর্মীকে গ্রেফতার করে। তাঁদেরকে ছেড়ে দেওয়ার আবেদন নিয়ে কর্মীরা থানায় গেলে পুলিশের সঙ্গে সামান্য সমস্যা হয়েছে বলে শুনেছি।” প্রায় বছর দশেক আগেও একবার এই থানায় হামলা হয়েছিল। সে বারেও থানা ভাঙচুর করে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy