Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Didir Suraksha Kavach

ভোট দিলে তবেই রাস্তা মিলবে, বনগাঁয় এমনই নিদান ‘দিদির দূত’ সাংসদ কাকলির

‘দিদির দূত’ হিসাবে বনগাঁর চৌবেড়িয়া-২ পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তাঁর কাছে রাস্তার দাবি জানান এক মহিলা। সেই সময় ভোট চাওয়ার কথা বলেন সাংসদ।

‘দিদির দূত’ হিসাবে বনগাঁয় গিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার।

‘দিদির দূত’ হিসাবে বনগাঁয় গিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৫৭
Share: Save:

ভোট দিলে তবেই রাস্তা করা হবে। শুক্রবার এমন কথাই শোনা গেল বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের মুখে। শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর চৌবেড়িয়া-২ পঞ্চায়েত এলাকায় ‘দিদির দূত’ হিসাবে গিয়েছিলেন বারাসতের সাংসদ। সেখানে রাস্তার দাবি জানান গ্রামবাসীরা। পঞ্চায়েতের সদস্য বিজেপি, এ কথা জানার সঙ্গে সঙ্গে কাকলি হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘পরের বার আমাকে দিন (তৃণমূলকে ভোট দিন), তার পর হবে।’’ সাংসদের মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক বেধেছে। যদিও কাকলির সাফাই, ‘‘তিনি মজাচ্ছলেই এ কথা বলেছেন। রাস্তা হবে।’’ তবে এতে বিতর্ক থামেনি। কাকলিকে বিঁধে সরব হয়েছে বিজেপি।

পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্য জুড়ে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তৃণমূল। রাজ্যের ১০ কোটি মানুষের সমস্যার কথা জানতে ‘দিদির দূত’ হিসাবে গ্রামে গ্রামে যাচ্ছেন শাসকদলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও নেতানেত্রীরা। কিন্তু এই কর্মসূচির শুরু থেকেই জনতার অভিযোগ শুনতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন ‘দিদির দূতেরা’। এই আবহে গত সোমবার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘এটা আমারই প্রকল্প। আপনার সমস্যা থাকলে নিশ্চয়ই বলবেন। সমস্যা তো থাকেই। তবে কারও কথা শুনে কুৎসা-অপপ্রচারে কান দেবেন না।’’ তবে তৃণমূলনেত্রীর বার্তার পরও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ‘দিদির দূত’দের ঘিরে বিক্ষোভের ছবি বদলায়নি। এই পর্বে এ বার গ্রামে রাস্তার দাবি শুনতে গিয়ে কাকলির ‘আগে ভোট দিন’ মন্তব্য নতুন মাত্রা যোগ করল।

শুক্রবার ন’হাটা কৃষ্ণ মন্দিরে পুজো দেন কাকলি। তার পর এক জায়গায় বসে এলাকার মহিলাদের সঙ্গে তিনি কথা বলছিলেন। সেই সময়ই এক মহিলা কাকলির কাছে গ্রামের রাস্তার দাবি জানান। রাস্তার দাবি শুনে কাকলি জানতে চান, এলাকায় পঞ্চায়েতের সদস্য কে? গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বিজেপির সদস্য।’’ এ কথা শুনেই হাসতে হাসতে সাংসদ বলেন, ‘‘যেমন বিজেপিকে (ভোট) দিয়েছেন, ও রকমই থাকবে।’’ এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘রাস্তার কাজ ৯০ শতাংশ হয়েছে, এখনও ১০ শতাংশ বাকি।’’ যা শুনে কাকলির সহাস্য মন্তব্য, ‘‘পরের বার আমাকে দিক, তার পর করব।’’

সাংসদের এ কথা শুনে মেজাজ হারান সাবিত্রী দাস নামে মহিলা। কাকলির সামনে হাত উঁচিয়ে ওই মহিলা বলেন, ‘‘সবাই কি বিজেপি করেন নাকি! তৃণমূলও তো আছেন অনেকে। তা হলে আমরা পঞ্চায়েতে ভোট দেব না তৃণমূলে। তার পর দেখব কী করে পঞ্চায়েত দাঁড় করায় তৃণমূল!’’ ওই মহিলার এই ‘হুঙ্কার’ শুনে হাসতে হাসতে কাকলি বলেন, ‘‘তা হলে কিছুই পাবেন না। চাল পাবেন না। লক্ষ্মীর ভান্ডার পাবেন না। কন্যাশ্রী পাবেন না। স্বাস্থ্যসাথী পাবেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে কিছুই পাবেন না।’’ সাংসদের এ কথা শুনে ওই মহিলা পাল্টা বলেন, ‘‘তা হলে এই কথা বলে সব কিছুতে মাত!’’

কাকলির এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। কাকলিকে নিশানা করেছেন বিজেপির সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল। বলেছেন, ‘‘সাংসদ বলেছেন বিজেপিকে ভোট দিয়েছে বলে রাস্তাঘাট হবে না। এক জন সাংসদ হয়ে এ কথা বলতে পারেন! পঞ্চায়েতে এ কথার জবাব দেবেন গ্রামের মানুষ।’’ যদিও তিনি মজা করতেই এই মন্তব্য করেন বলে সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন কাকলি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি মজা করছিলাম। সিরিয়াসলি তো বলিনি। রাস্তা হবে। সব লিখে নিয়েছি।’’ তবে ভোট না দিলে যে ‘উন্নয়ন’ হবে না, এই মন্তব্যে অনড় সাংসদ। কাকলির ব্যাখ্যা, ‘‘ও জায়গায় ৪০ বছর আমাদের কোনও সদস্য ছিলেন না। যাঁদের ভোট দিয়েছে, তাঁরা কিছু করেননি। তা হলে এটা তো প্রমাণিত। অন্য লোককে ভোট দিলে তাঁরা কাজ করতে পারেন না। তাই তাঁদের ভোট দেওয়া উচিত নয়।’’

রাস্তার দাবি নিয়ে সাংসদের কাছে যিনি সরব হয়েছিলেন, সেই সাবিত্রী দাস পরে বলেন, ‘‘রাস্তার বিশেষ দরকার, এ কথা জানিয়েছি। উনি বলেছেন ভোট দিলে, আছেন। আমাদের ভোট দিতে হবে। ভোট দেব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy