স্মৃতিফলক: বাদুড়িয়ার গ্রামে
তিনি ‘বাঁশের কেল্লা’ গড়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। অথচ, সেই সংগ্রামীর স্মৃতিরক্ষার ক্ষেত্রে প্রশাসনের উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে বার বার। এমন কেন হবে— আজ, পঁচাত্তরতম স্বাধীনতা দিবসে এই প্রশ্নই তুলছেন তিতুমিরের জন্মস্থান হায়দারপুরের বাসিন্দারা।
বাদুড়িয়ার হায়দারপুরের সৈয়দ মির নিসার আলি, পরবর্তীকালে ‘তিতুমির’ নামে খ্যাত হন। উনিশ শতকে হায়দারপুরের নারকেলবেড়িয়ায় ‘বাঁশের কেল্লা’ গড়ে তিনি লড়াই করেছিলেন শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ইংরেজদের বিরুদ্ধে। অসম সেই যুদ্ধে হার মানতে হয় তাঁকে। তবে দেশি অস্ত্র ব্যবহার করে ব্রিটিশ কামানের বিরুদ্ধে লড়ে গিয়েছিল তিতুমিরের বাহিনী। যুদ্ধক্ষেত্রে শহিদ হন তিনি। স্বাধীনতার ইতিহাসে তিতুমিরের এই ‘বারাসত বিদ্রোহের’ অবদান স্বীকার করেন ইতিহাসবিদেরা।
কিন্তু সেই ইতিহাসের মর্যাদা সঠিক ভাবে রাখা হয়েছে কিনা, উঠছে সেই প্রশ্ন। তিতুমিরের গ্রামে ঢোকার একমাত্র রাস্তাটি সংস্কারের অভাবে এখনও খানাখন্দে ভরা। তিতুমিরের গ্রামকে ‘হেরিটেজ গ্রাম’ করার কথা ছিল। তাঁর নামে গ্রন্থাগার, স্কুল, হাসপাতাল, মিউজ়িয়াম গড়ার কথা। কিন্তু কিছুই হয়নি। স্বাধীনতা সংগ্রামীর পরিবারের জন্য নির্দিষ্ট সাম্মানিকও (ভাতা) পান না বলে জানালেন তিতুমিরের বংশধরেরা।
বাদুড়িয়ায় তিতুমিরের জন্মস্থানে গিয়ে দেখা গেল, বাগজোলা, হায়দারপুর, চাঁদপুর, আটঘরার মাত্র আড়াই কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের অভাবে ভেঙেচুরে গিয়েছে। ঐতিহাসিক স্থানের চারদিকে অবহেলার চিত্র স্পষ্ট। কয়েক বছর আগে তিতুমিরের স্মৃতিতে তৈরি করা ফলক আবর্জনায় ঢেকে গিয়েছে। তা দেখিয়ে তিতুমিরের ষষ্ঠ বংশধর সৈয়দ মদত আলি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, “হেরিটেজ গ্রাম তো দূরের কথা, এখানকার রাস্তার অবস্থা এতটাই শোচনীয়, চলাফেরা করাই দায়।”
দু’শো বছর ছুঁতে চলা ১৮৩১-এর ‘বারাসত বিদ্রোহে’ তিতুমিরের সেনাপতি গোলাম মাসুদকে ফাঁসি দিয়েছিল ইংরেজরা। তাঁর বংশধর তথা স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্য শেখ জামাল বলেন, “প্রশাসনের তরফে তিতুমিরের জন্মস্থান, তাঁর কবরস্থান সংস্কারের জন্য প্রতিশ্রুতি ছাড়া সরকারি ভাবে কোনও অর্থ মেলেনি। ফলে সংস্কার করা যায়নি। অনাদরে পড়ে রয়েছে এই সব ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন।”
তিতুমিরের স্মৃতি রক্ষায় স্থানীয় একটি সংগঠন এগিয়ে এসেছে। সংগঠনের সদস্যেরা নারকেলবেড়িয়ায় একটি সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন। সেখানে তিতুমিরের ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী রাখা আছে। রয়েছে যুদ্ধের নানা স্মৃতিচিহ্ন। সংগঠনের সম্পাদক রবিউল হক বলেন, “আমাদের স্বল্প প্রচেষ্টায় দোতলা বাড়িতে সংগ্রহশালা গড়েছি। এখানে ইংরেজদের সঙ্গে তিতুমিরের যুদ্ধে ব্যবহৃত নানা অস্ত্র— যেমন, বর্শা, তির, ধনুক, তরোয়াল, ঢাল-সহ আরও নানা সামগ্রী সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দুঃখের বিষয়, প্রশাসনের তরফে কোনও সাহায্য মেলেনি।”
পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সাগরিকা ইসলামের স্বামী হারুন উল ইসলাম বলেন, “হায়দারপুর গ্রামের বাসিন্দারা আবেদন করলে তিতুমিরের জন্মস্থান সংস্কার এবং উন্নয়নমুখী কাজকর্ম হবে। তা ছাড়া, রাস্তা সংস্কারের জন্য আবেদন করা হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ হলে কাজ শুরু করা হবে।”
বাদুড়িয়ার বিধায়ক আব্দুর রহিম দিলু বলেন, “তিতুমিরের জন্মস্থান হায়দারপুর এবং রণভূমি নারকেলবেড়িয়ার গ্রামে রাস্তা করা হয়েছিল। বর্তমানে ওই রাস্তাটি খারাপ হয়েছে বলে শুনেছি। দ্রুত যাতেরাস্তা মেরামত করা যায়, তা দেখা হচ্ছে। গ্রাম দু’টিকে হেরিটেজ ঘোষণা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy