আদর: বাঘরোলের ছানা উদ্ধারের পর অশেষ। (ইনসেটে) উদ্ধার হয়েছে পেঁচাও। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
ওরা সব ছিল কোথায়? বসন্ত ফুরিয়েছে সেই কবেই। শহরের অলিতে-গলিতে সকাল-বিকেলে এখনও শোনা যাচ্ছে কোকিলের ডাক। সীমান্তের ব্যস্ত শহর বনগাঁয় এটা এখন স্বাবাবিক ঘটনা। খোলা রাস্তায় দিনের বেলায় শেষ কবে শেয়াল বা গন্ধগোকুলের দেখা গিয়েছে মনে করতে পারছেন না কেউ। লকডাউনে সেটাই হয়ে উঠেছে ফি রোজের দৃশ্য। এই যদি শহরের ছবি হয়, তা হলে ইছামতি লাগোয়া গ্রামাঞ্চলের ছবিটা আরও রঙীন। সেখানে পাখিদের মেলা। রঙীন পিট্টা থেকে মুর হেন, পোচার্ড হাঁস আরও অনেক নাম। দেখা মিলছে সোনালি ডানার শঙ্খ চিলেরও।
ক্রমবর্ধমান নাগরিক সভ্যতার চাপে মানুষ এবং বন্য জীব-জন্তুর সম্পর্ক বদলে গিয়েছে অনেকটাই। গ্রামের দিকে জখম হচ্ছে বাঘরোল, লক্ষ্মী পেঁচা। এমনিতেই প্রকৃতিপ্রেমি তিনি। জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে ছবি তুলে বেড়ান বনগাঁর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও) অশেষ বিক্রম দস্তিদার। এখন তাঁর দায়িত্ব বেড়েছে। লকডাউনে মানুষের আনাগোনা কমায় বন্য জন্তুদের বিচরণক্ষেত্র বেড়েছে। তারা যাতে মানুষের আক্রমণের শিকার না হন, তার জন্য গ্রামে গ্রামে ঘুরে সচেতন করছেন এলাকার বাসিন্দাদের। জখম বাঘরোল-পেঁচাদের এনে শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তুলছেন অশেষ বিক্রম।
এখন পাখিদের বাসা তৈরির মরশুম। শহরে যে শুধু দেখাই মিলেছে তা নয়, শালিখ, বুলবুলি, ঘুঘু, ছাতারে, বেনেবউ, মাছরাঙা, টুনটুনিদের শহরের গাছে বাসা বাঁধতেও দেখা যাচ্ছে। যশোর রোড ও চাকদা রোডের দু’ধারে বড় বড় শিরীষ গাছে, নতুনগ্রামের বাঁওরের ধারে দেখা মিলছে কয়েক প্রজাতির ঈগলের। গোপালনগরের মামুদপুর, বাগদার খড়ের মাঠ, পারমাদন এলাকায় দেখা মিলছে পরিযায়ী পাখিদের। পিট্টা, ল্যাপউইং, জাকানা, মুর হেন, পোচার্ডরা ঘুরে বেড়াচ্ছে ইছামতীর ধারে। ডুমা, বেড়ির বাঁওরে জল তোলপাড় করছে পানকৌড়ির ঝাঁক।
রবিবার সকালে খেতে ধান কাটছিলেন বাগদার নওদাপাড়া এলাকার এক চাষি। আচমকাই পিছন থেকে একটি বাঘরোল তাঁকে আক্রমণ করে। তার কাস্তের ঘায়ে জখম হয়ে বাঘরোলটি জ্ঞান হারায়। অশেষ বিক্রম হার্ট পাম্প করে বাঘরোলটিকে কিছুটা সুস্থ করেন। চিকিৎসকের চিকিৎসায় সুস্থ হয় বিরল প্রাণিটি। বাঘরোলটি আপাতত এসডিপিও-র কাছে রয়েছে। অশেষ বিক্রম বলেন, “বাঘরোলটি সম্পূর্ণ সুস্থ হলে তাকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে।”
সম্প্রতি ছয়ঘরিয়া এলাকায় কয়েকটি পেঁচার মৃত্যু হয়। পেঁচাগুলি ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেন অশেষ বিক্রম। অশেষ জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণে ফলে পেঁচাগুলি মারা গিয়েছে। দিন কয়েক আগে একটি জখম পেঁচা উদ্ধার করে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন তিনি। লকডাউনের সময়ে সচেতনতা শিবিরও করছেন কিছুটা অন্যভাবে।
গ্রামের গরিব মানুষদের রান্না করা খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। খাওয়া শেষে গ্রামবাসীদের বোঝাচ্ছেন, পশু-পাখি-সাপ আমাদের পরিবেশের অংশ। তাদের না মেরে পুলিশ ও বন দফতরকে খবর দিতে দবে।
কেউ খবর দিলে তাঁকে পুরস্কৃত করা হবে বলেও জানিয়েছেন অশেষ বিক্রম। রবিবার বাগদার একটি গ্রামে প্রায় ৩০০ শো মানুষকে তিনি ভাত-ডিমের ঝোল-আলুর দম খাওয়ানো হয়েছে। সেখানেও তিনি পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে গ্রামবাসীদের বোঝান। এসডিপিও নিজেও একটি থার্মাল গান কিনেছেন। কারওর তাপমাত্রা বেশি থাকলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠাছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy