ব্যাঙ্কে তালা ঝুলছে। সঙ্গে তৃণমূলের পতাকা। বাইরে অপেক্ষায় গ্রাহকেরা। ছবি: নির্মল বসু।
বামেদের ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে সাড়া দিলে সরকারি কর্মীদের ‘শাস্তি’র কথা আগাম জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ২৪ ঘণ্টার সেই ধর্মঘটে শহর কলকাতা-সহ রাজ্যের অধিকাংশ জেলা কার্যত অচল হয়ে পড়ায় এ বার সরকারি সেই ফরমানের হাতে-কলমে ‘প্রয়োগ’ শুরু করল শাসক দল।
ধর্মঘটের দিন উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের তেঁতুলিয়ায় একটি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের শাখা বন্ধ থাকায় ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ব্যাঙ্কে হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়ে পুলিশের কাছে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছিলেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সকালে ব্যাঙ্কের সামনে পুলিশের টিকিও দেখা যায়নি।
ওই ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার না করায় ওই শাখার কর্মীদের দাবি, শাসক দলের নেতা-কর্মীরা জড়িত জেনেই আর গ্রেফতারের পথে যায়নি পুলিশ। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ওই ঘটনায় দলের কেউ জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন।
বুধবার, ওই জেলারই হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জে ৫টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার সেখানেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবং অভিযোগের আঙুল উঠেছে ফের তৃণমূলের দিকে।
ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার অলোক হালদার বলেন, ‘‘তৃণমূলের পক্ষে কয়েকজন শাখা খোলা রাখার জন্য বললে তাদের জানানো হয়েছিল, বামপন্থীদের ডাকা বন্ধের দিনে দেশের ১৩টি ব্যাঙ্কের পক্ষে বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। ফলে কর্মীরা যদি আসতে না চান তা হলে তাঁদের জোর করে আনা যাবে না।’’ সে দিন হুমকি দিয়ে চলে গেলেও ‘শাস্তি’ জুটেছে বৃহস্পতিবার। বুধবার, ওই শাখায় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন ধর্মঘট বিরোধীরা। এ দিন বেলা ১০টা নাগাদ ম্যানেজার-সহ কর্মীরা এসে দেখেন ব্যাঙ্কের দরজায় তালা। কর্তৃপক্ষের দাবি, তালা খোলার জন্য তাদের পক্ষে থানার সাহায্য চাওয়া হলে পুলিশ আসে ঠিকই তবে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তালা ভাঙতে পারবে না তারা। বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ জনা চল্লিশ তৃণমূল কর্মী ওই শাখায় এসে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন। ম্যানেজার তাদের জানান, কর্মীরা নিজেদের ইউনিয়নের ধর্মঘটের কারণে আসেনি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বচসা, গালিগালাজ তারপর শুরু হয় মারধর।
অলোকবাবু বলেন, ‘‘অশ্রাব্য গালিগালাজের প্রতিবাদ করলে আমার কলার ধরে মারতে শুরু করে ওই তৃণমূল কর্মীরা। পুলিশের সামনেই এ সব হয়েছে। দাবি, গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ হিসাবে কর্মীদের এক দিনের বেতন দিতে হবে।’’
খবর পেয়ে দফতরের পদস্থ কর্তারা আসেন স্বরূপনগরে। কর্মীদের জন্য পুলিশি নিরাপত্তার দাবি করা হয় স্বরূপনগর থানায়। তবে বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ সব বিষয়ে আমার কাছে এখনও কোনও অভিযোগ আসেনি।’’
স্বরূপনগর ব্লক তৃণমূল নেতা রমেন সর্দার বলেন,‘‘মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। যত দুর জানি বন্ধের দিনে যে সব গ্রাহকেরা ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় ফিরে গিয়েছিলেন তাঁরাই এসেছিলেন বিক্ষোভ দেখাতে। আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’ জেলা পরিষদের পূর্ত ও সড়ক দফতরের কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী অবশ্য বলেন, ‘‘এমন কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা খোঁজ নিয়ে দেখছি। ঘটে থাকলে তা দুঃখজনক।’’
এ দিকে, হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জে অনেকটা একই রকম অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ধর্মঘটের দিন ৭৪, ৭৫, ২২৯, ২৩১ এবং ২৩৭ নম্বর শিশু শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ থাকায় সেখানে বৃহস্পতিবার তৃণমূলের পক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সম্পাদক কল্পনা মণ্ডল বলেন, ‘‘বন্ধে শিশুদের স্কুল বন্ধ রাখার অপরাধে আমাদের পাঁচটি কেন্দ্রে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে তৃণমূল।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা দেবেশ মণ্ডল যথারীতি অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy