Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
জঙ্গল ও জঙ্গল-লাগোয়া এলাকার মানুষকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি শুনে পেরিয়ে গেল আরও একটা সুন্দরবন দিবস। কেমন আছেন বাদাবনের মানুষ? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।
Sundarban

Sundarban: বিকল্প কর্মসংস্থানের আশ্বাস, তবু অনিশ্চয়তা জঙ্গল-নির্ভর জীবন কি আদৌ পাল্টাবে, প্রশ্ন

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ-কাঁকড়া ধরতে যাওয়া গরিব মৎস্যজীবীদের জঙ্গল-নির্ভরতা কি আদৌ কমছে? কেমন আছে সুন্দরবনের শিল্প ও তার সঙ্গে যুক্ত শিল্পী?

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:২৭
Share: Save:

গায়ে বাঘের থাবার দাগ এখনও স্পষ্ট। ১০ বছর আগের সেই দিনের স্মৃতিও এখনও টাটকা। সুযোগ থাকলে হয় তো জীবনে আর জঙ্গলের পথ মাড়াতেন না হিঙ্গলগঞ্জের দক্ষিণ কালীতলা এলাকার বাসিন্দা আলম সর্দার। কিন্তু গ্রামে তেমন কাজ কোথায়? পেটের টানেই তাই ফিরতে হয়েছে জঙ্গলে।

দশ বছর আগে বাঘের হামলায় জখম হয়েছিলেন আলম। পুরোপুরি সুস্থ হতে লেগে গিয়েছিল বহুদিন। তবে সুস্থ হয়ে ফের মাছ-কাঁকড়া ধরা শুরু করেন। ষাট বছর বয়সেও নিয়মিত জঙ্গলে যান। তাঁর কথায়, “বয়স হয়ে গিয়েছে। ঝুঁকি আছে জানি। তবুও পেট চালাতে জঙ্গলে যেতেই হয়। গ্রামে তেমন কাজ নেই। তা ছাড়া, গ্রামে কাজ করার অভ্যাসও নেই।”

শনিবার দুই জেলার বিভিন্ন এলাকায় পালিত হল সুন্দরবন দিবস। প্রতি বছরই বাদাবনে উদযাপিত হয় এই দিনটি। এ বারও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জঙ্গল ও জঙ্গলের মানুষদের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে বিকল্প কর্মসংস্থানের। কিন্তু আদৌ কি ঝুঁকিহীন পথে খেয়ে-পড়ে বাঁচতে পারবেন সুন্দরবনের মানুষ, সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে বাদাপনের আনাচে-কানাচে।

বাঘে-মানুষে লড়াই সুন্দরবনের রোজনামচা। মাছ ধরতে গিয়ে নিয়মিত বাঘের হামলার মুখে পড়ছেন মৎস্যজীবীরা। অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। কেউ কেউ আলমের মতো জখম হয়ে প্রাণ নিয়ে ফিরছেন। তারপরে সেরে ওঠার লড়াই চলছে দীর্ঘদিন। তবু পেটের টানেই প্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে বার বার ছুটে যাচ্ছেন দিন আনা-দিন খাওয়া গরিব মানুষগুলো।

মৎস্যজীবীরা জানালেন, গ্রামে কাজের সুযোগ এমনিতেই কম। অতিমারি পরিস্থিতিতে তা আরও কমেছে। ফলে ঝুঁকি জেনেও বার বার ফিরতে হচ্ছে জঙ্গলে। বাড়তি লাভের আশায় জঙ্গলের বৈধতার সীমাও লঙ্ঘন করে ফেলছেন কেউ কেউ। বাড়ছে প্রাণ সংশয়।

প্রশাসন অবশ্য নানা ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। পঞ্চায়েতের মাধ্যমে একশো দিনের কাজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বন দফতরও ম্যানগ্রোভ তৈরি, রোপণ-সহ নানা প্রকল্পে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাজে লাগাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ২৪ পরগনা বনবিভাগ ও সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের তরফে জঙ্গল-লাগোয়া গ্রামগুলিতে মৌ প্রতিপালনের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ এবং তার গুণগত মান ঠিক রেখে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাজারজাত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মধুর চাহিদা রয়েছে বাজারে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে মহিলাদের দিয়ে নানা রকম জিনিস তৈরি করে তা বিক্রির ব্যবস্থা হচ্ছে। পাটের ব্যাগ, টিশার্ট, মাস্ক ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সুতোর কাজ করছেন মহিলারা। আগামী দিনে সুন্দরবনের নদী তীরবর্তী গ্রামগুলিতে কাঁকড়া প্রজননের প্রক্রিয়া শুরু করে গ্রামেই কাঁকড়া চাষের পরিকল্পনা নিয়েছে বন দফতর।

n উৎসবের-মেজাজে: সুন্দরবন দিবসে পদযাত্রা সাগরে।

n উৎসবের-মেজাজে: সুন্দরবন দিবসে পদযাত্রা সাগরে। নিজস্ব চিত্র।

সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডিএফডি জোন্স জাস্টিন বলেন, “কাঁকড়ার বাজারদর বেশি। তাই মূলত কাঁকড়া ধরতেই মানুষ জঙ্গলের গভীরে ঢুকে পড়ছেন। এতেই বেশি করে দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা নানা ভাবে ওঁদের বিকল্প কর্মসংস্থানের চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে বহু মানুষ জঙ্গলে যাওয়া ছেড়ে অন্য কাজে যুক্ত হয়েছেন। আমরা চাই, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ভাবে জঙ্গলে না গিয়ে মানুষ বিকল্প পেশায় আসুক।” শনিবার সাগরে সুন্দরবন দিবসের অনুষ্ঠানে সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজিরা বলেন, “বিকল্প অর্থনীতিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। পর্যটন শিল্পের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। সুন্দরবন পর্যটনকে কী ভাবে আরও আকর্ষণীয় করে
তোলা যায়, তা নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে বৈঠক করেছি। পর্যটনে উন্নতি হলে সুন্দরবন জুড়ে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হবে।”

তবে বাদাবনের বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি, সরকারি প্রকল্পে তেমন লাভ নেই। একশো দিনের কাজ বা হাতের কাজের আয়ে সংসার চলে না। ফলে সেই ঝুঁকিপূর্ণ জঙ্গল নির্ভর জীবনেই তাঁদের ফিরে যেতে হচ্ছে বার বার।

তথ্য সহায়তা: প্রসেনজিৎ সাহা, নবেন্দু ঘোষ ও সমরেশ মণ্ডল

অন্য বিষয়গুলি:

Sundarban
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy